ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৩৬

রেড, ইয়েলো, গ্রিন জোনে মানতে হবে যেসব নিয়ম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১১ ৭ জুন ২০২০  

দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে লকডাউনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই মধ্যে কোথায় কী ধরণের অঞ্চল হবে সেই ব্যাপারে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত রোডম্যাপ তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কোনো এলাকার করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা এবং সংক্রমণের ধরণ বিবেচনা করে এ জোন ভাগ করার চিন্তাভাবনা চলছে। আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, একেক জোনের বাসিন্দাদের জন্য একেকরকম নিয়ম কানুন বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রেড জোন হবে। মাঝারিটা হবে ইয়েলো আর যেখানে সংক্রমণ নেই সেটি থাকবে গ্রিন জোনে।

মুশতাক হোসেন জানান, সংখ্যাগত ও গুণগতভাবে বিচার করে কোন এলাকা কোন জোনে রাখা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে গ্রিন জোনকে নিরাপদ হিসেবে ধরে নেয়া হলেও সেই এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম না করা, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার মতো নিয়ম মেনে চলতে হবে মানুষকে।

রেড জোন

তিনি জানান, যে এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, সেখানে কড়াভাবে লকডাউন কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে সুপারিশগুলো সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। 

রেড জোনে যেসব কোভিড-১৯ রোগী থাকবেন এবং যারা কোয়ারেন্টিনে থাকবেন, তাদের নিজেদের বাসা থেক বের হতে দেয়া হবে না। আক্রান্ত রোগী ও কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের খাবার এবং জরুরি ওষুধ তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

মুশতাক হোসেন বলেন, এর বাইরে যারা থাকবেন; তারা ঘর থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে দোকানে যেতে পারবেন। তবে সেটা পালাক্রমে। একই সময়ে একসঙ্গে বেশি মানুষ বের হতে পারবেন না। আর তাদের কেউ এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না।

তিনি বলেন, তবে সেই এলাকায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও গণমাধ্যম সেবার সঙ্গে জড়িত জরুরি কর্মীদের বিশেষ অনুমতিপত্র থাকবে। সেটি দেখিয়ে তারা এলাকায় যাওয়া আসা করতে পারবেন। লকডাউন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে এসব জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আলাদাভাবে থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে।  
তবে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার বড় রাস্তা লকডাউনের আওতায় থাকবে না।

মুশতাক বলেন, বড় রাস্তা, যা অন্যান্য বাসিন্দারা ব্যবহার করবেন, সেটি বন্ধ করা হবে না। চারদিকে রাস্তা থাকলে মাঝখানের অংশটুকু বেষ্টনীর ভেতরে থাকবে। রাস্তার অপর পাশ আরেকটি বেষ্টনির ভেতর থাকবে। রেড জোনে থাকা এলাকায় যারা ঘরে কোয়ারেন্টিন করতে পারবেন না, তাদের জন্য কমিউনিটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা হবে। এছাড়া প্রত্যেকটি রেড জোনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে একটি হাসপাতাল।

তিনি বলেন, এলাকার মধ্যে বা আশেপাশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকলে সেটিকে ওই এলাকার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।এছাড়া রেড জোনের এলাকাগুলোতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত অফিস ছাড়া অন্য কোনো ধরনের অফিস খোলা থাকবে না। রেড জোনের লকডাউন কার্যকর করার খুঁটিনাটি সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে জানান মুশতাক হোসেন।

ইয়েলো জোন

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগী এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য রেড জোন আর ইয়েলো জোনের নিয়ম একই থাকবে। তবে ইয়েলো জোনের আক্রান্ত না হওয়া বাসিন্দারা এলাকা থেকে বের হতে পারবেন। এছাড়া সেখানে থাকা হাসপাতাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সেবার অফিস ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু অফিস খুলে দেয়া হতে পারে। কিন্তু কোন অফিসগুলো খুলে দেয়া হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া এ এলাকায় একসঙ্গে অনেক মানুষ যেন প্রবেশ করতে বা বের না হতে পারেন, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
যেভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সব সিদ্ধান্ত:

বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন ঘোষণা করা হবে। এরপর তা কার্যকরভাবে পালন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি স্থানীয় ও কমিউনিটি নেতৃত্বকে সংযুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মুশতাক হোসেন।
আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা বলেন, মানুষজন ঠিকমতো কোয়ারেন্টিন মানছে কিনা তা নিশ্চিত করতে এবং কোয়োরেন্টিনে থাকাদের কাছে খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিতে স্থানীয় ভলান্টিয়ার, সমাজ কল্যাণ সমিতি, হাউজিং সমিতির সদস্যদের যুক্ত করা হবে। কোয়ারেন্টিন করা ব্যক্তিদের তালিকা করা হবে। পরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের স্থানীয় দোকানের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের বাসায় খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা টোলারবাগ মডেল অনুসরণ করব। শুরুর দিকে টোলারবাগে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন এভাবে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মুশতাক জানান, প্রথমদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে প্রত্যেক জেলায় কমিটি ছিল। ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় সেরকম কমিটি তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি থাকবে। আবার ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটিও থাকবে। আবার জোনভিত্তিক কমিটিও করা হতে পারে। বিভিন্ন জেলার কমিটিগুলোর আদলে এগুলো তৈরি করা হবে। এসব কমিটিতে কীভাবে এনজিওসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে সংযুক্ত করা যায়, সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে।  আর যারা এ পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।