ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫২০

রেমডেসিভির অকার্যকর ওষুধ

ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৩৮ ১৮ অক্টোবর ২০২০  

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমার কাছে এটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিশ্বের ৩০টি দেশের ১১০০০ রোগীর ওপর রেমডেসিভির প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এ ওষুধ করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। একে এখন ‘হোপলেস’ ও ‘ইউজলেস’ বলে গণ্য করা যায়। 

 

অনেকেই হয়তো জানেন- ইবোলা সংক্রমণ রোধে রেমডেসিভির তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গিলিয়াড কোম্পানি। কিন্তু সেই রোগের বিরুদ্ধে এ ওষুধ ছিল ব্যর্থ। করোনা সংক্রমণের সুযোগ নিয়ে এর আবিষ্কারক কোম্পানিটি ইতিমধ্যে শত সহস্র কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। 

 

যখন রেমডেসিভির নিয়ে সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছিল, প্রাথমিক পর্যায়ে আমি আমার কয়েকটি লেখায় ইঙ্গিত করেছিলাম, এ ওষুধ করোনার বিরুদ্ধেও ব্যর্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এটি নিয়ে বেশি আশাবাদী না হওয়াই ভালো। বাস্তবে ঘটলোও তাই। বাংলাদেশেও রেমডেসিভির নিয়ে কত হৈচৈ এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখলাম। সব আশা ভরসা জলে গেল। 

 

দুঃসংবাদ আরো আছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসনস জনসনসের মতো বিশ্বের খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো ভলেন্টিয়ারদের মধ্যে অজানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে নিজেদের সম্ভাবনাময় ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, সেফটি ফার্স্ট। অক্সফোর্ড টিকারও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কবে যে এসব ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আবার শুরু হবে কেউ বলতে পারছে না। আর আদৌ শুরু হবে কি না তা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান! 

 

এখন পর্যন্ত একটি ভ্যাকসিন বা ওষুধও বাজারে আসেনি। আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর লম্ফঝম্পের কারণ যতটা না স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, এর চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে রাজনীতি। জীবনে এ প্রথম দেখলাম- জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও ভ্যাকসিন নিয়ে নেতানেত্রীদের নোংরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে। 

 

বাংলাদেশের খবরে ইদানিং এমনও দেখছি ও শুনছি- একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার আগেই ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, এ বছরের শেষদিকে কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারজাত হয়ে যাবে। হলে তো আলহামদুলিল্লাহ! আবিষ্কারক কোম্পানি ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আর আমরাও প্রাণঘাতী করোনার হাত থেকে বেঁচে যাব ইনশাআল্লাহ। 

 

আমরা আল্লাহর কাছে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করছি। তবে এত আগেভাগে অহেতুক লম্ফঝম্প না দিয়ে, মানুষকে বিভ্রান্ত না করে আল্লাহর নাম নিয়ে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মনোযোগ দেয়া উচিত। হৈ-হল্লা না করে যত কম কথা বলা যায়, তত ভালো।

 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।