ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১৮৬৮

শীতের আগমন, যেভাবে নেবেন গর্ভবতী মায়ের যত্ন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৩ ২১ অক্টোবর ২০১৯  

মাতৃত্ব একজন মায়ের জন্য অনেক সুখকর অনুভূতি। কিন্তু গর্ভকালীন একজন মায়ের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। এসময়ে তাকে অনেক জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেজন্য বেশি বেশি গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে হয়। শীতকালে আরো একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। শীতে ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা বেড়ে যায়।  ফলে মায়ের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানেরও ক্ষতি হতে পারে।

শীতকালে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিয়ে কিছু পরামর্শ। এ পরামর্শগুলো শুধু একজন মায়ের জন্য নয়, তার স্বামীর জন্যও। সর্বোপরি আমাদের সবার জন্য।

সুষম খাবার খান
গর্ভের সন্তান তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে মায়ের খাবারের মাধ্যমে। মা অসুস্থ হলে এর প্রভাব গর্ভের সন্তানের উপরও পড়ে। সেজন্য মায়ের সুষম খাবার ও তার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরী। এতে সুস্থ সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। শীতকালে সতেজ ফলমূল ও সবুজ সবজি খাওয়া উচিত বেশি করে। সবুজ সবজি ও সতেজ ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলমূল ও সবজির সঙ্গে ডায়েটে জাফরান ও দুধ রাখা উচিত। এতে শরীর উষ্ণ থাকবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
শীতকালে আমাদের তৃষ্ণা কম লাগে বলে আমরা স্বাভাবিকের তুলনায় কম পানি খাই। কিন্তু একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য এটা মোটেও উচিত নয়। শীতকাল শুষ্ক ঋতু হওয়ার ফলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি করে পানি খাওয়া উচিত। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য দিনে কমপক্ষে ২.৩ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ডাবের পানি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে। এসময়ে পানি খাওয়ার কথা ভুলে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি খাওয়ার জন্য এলার্ম সেট করে রাখতে পারেন।

ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখুন
শীতকালে সাধারণত আমাদের ত্বকের আর্দ্রতাও কমে যায়। আর গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো বেশি দেখা দেয়। সেজন্য ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এসময় কিছু জিনিস মনে রাখুন-৫ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করুন, গরম পানি কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন অথবা হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন, ত্বক ভেজা থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, সাবান ব্যবহার কম করুন অথবা গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করুন, ঠোঁট চুষবেন না, ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।

ঠান্ডাজনিত রোগের জন্য চিকিৎসা নিন
অনেকেই মনে করেন, গর্ভকালীন অবস্থায় অন্য কোনো ওষুধ খেলে তা প্রতিক্রিয়া করে ক্ষতি হতে পারে। এ ধারণা একেবারে ঠিক না, আবার একেবারে ভুলও না। কিন্তু ঠান্ডা জাতীয় অসুখে যদি গর্ভবতী মা তিনদিনের বেশি ভোগেন, তাহলে ডাক্তার দেখানো উচিত। ডাক্তার এসময়ে নিরাপদ ওষুধই দেবেন। তিনদিনের বেশি সর্দি কাশি থাকলে তা ফ্লু জাতীয় কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছ থেকে এ বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

শীতকালীন রোগের প্রতিরোধ করুন
শীতকালে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেজন্য আপনাকে সুরক্ষিত থেকে রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। শীতকালে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। নিয়মিত সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোবেন, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তুলসি চা খেতে পারেন, এতে কফ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। হালকা গরম পানিতে লবন দিয়ে কুলি করলে গলায় ঠান্ডাজনিত রোগ হবে না।

উষ্ণ ও আরামদায়ক পোশাক পরুন
খেয়াল রাখুন শীতকালে গর্ভবতী মায়ের পোশাক যেন একই সঙ্গে উষ্ণ ও আরামদায়ক হয়। বেশি টাইট পোশাক পরা যাবে না। এতে আপনার গর্ভের সন্তানের উপর চাপ পড়তে পারে। ঢিলেঢালা পোশাক পরার চেষ্টা করুন। সামনে বোতামসহ সুয়েটার এসময়ে গর্ভবতী মায়ের জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ হবে। শীতে বাসায় মোজা পরে থাকুন। কারণ ঘরের মেঝে থেকে পায়ে ঠান্ডা লেগে ক্ষতি হতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শীতের মধ্যে ভোরে বাইরে ব্যায়াম করতে যাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য কিছুটা কঠিন বটে। কিন্তু তাই বলে ব্যায়াম বাদ দেয়া যাবে না। নিজেকে ফিট ও নিরাপদ রাখার জন্য ঘরেই ব্যায়াম করতে পারেন। এসময়ে মেডিটেশন ও যোগ ব্যায়াম বেশ উপকারী। যোগ ব্যায়ামের জন্য ডিভিডি কিনে তা দেখে দেখে করতে পারেন। তাছাড়া ইউটিউব থেকে ব্যায়ামের কিছু নিয়ম শিখে নিয়ে ঘরে বসেই ব্যায়াম করতে পারেন।

বেশি করে ইনডোরে থাকার চেষ্টা করুন
গর্ভবতী থাকা অবস্থায় আপনি ও আপনার অনাগত সন্তান অনেক বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। আর শীতকালে খারাপ আবহাওয়ার ফলে বাতাসের ধুলাবালি ও বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা খুব সহজে আক্রান্ত হতে পারেন। সেজন্য যথাসম্ভব কম বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ঘরে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে বেশি সময় কাটান। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন সবসময়।

সঠিকভাবে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিলেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সুস্থ ও সবলভাবে পৃথিবীতে আসবে। সেজন্য এ সময়টাতে বেশি করে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে হবে।