ঢাকা, ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ৬ কার্তিক ১৪৩২
good-food

টুথব্রাশেই লুকিয়ে আছে লাখো জীবাণু!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৩৬ ২১ অক্টোবর ২০২৫  

সুস্থ দাঁত, সতেজ নিঃশ্বাস আর সুন্দর হাসির জন্য প্রতিদিন দাঁত মাজার অভ্যাসটা আমাদেরকে শেখানো হয় ছোটবেলা থেকেই। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে, দাঁত ঝকঝকে রাখতে কিংবা মাড়ি শক্ত রাখার জন্য টুথব্রাশই আমাদের ভরসা।কিন্তু জানেন কি, মুখের ভেতরের জীবাণু দূর করতে গিয়ে আমরা যে টুথব্রাশের ওপর এত ভরসা রাখি, সেটিই হতে পারে অদৃশ্য জীবাণুর আশ্রয়স্থল?

 

গবেষণা বলছে, ব্যবহৃত একটি টুথব্রাশে থাকতে পারে প্রায় ১০ লাখ থেকে ১ কোটি পর্যন্ত জীবাণু ও ছত্রাক। টুথব্রাশের সূক্ষ্ম আঁশ বা ব্রিসলের ফাঁকগুলোয় এই জীবাণুরা বাসা বাঁধে। প্রতিদিন দাঁত মাজার সময় পানি, মুখের লালা, খাবারের কণা ও ত্বকের মৃত কোষ থেকে জীবাণুরা পুষ্টি পায়।

 

আর আশেপাশের বাতাস, জানালার ধুলো কিংবা টয়লেট ফ্লাশের সময় ছিটকে আসা ক্ষুদ্র কণাও এই জীবাণুদের দলে যোগ দেয়। অর্থাৎ, দাঁত পরিষ্কার করতে গিয়ে আপনি প্রতিদিন নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন এক ক্ষুদ্র জীবাণু-উপনিবেশ!

 

রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট মার্ক-কেভিন জিন বলছেন, টুথব্রাশের জীবাণু সাধারণত তিন জায়গা থেকে আসে- আমাদের মুখ, ত্বক এবং বাথরুমের পরিবেশ।

 

মজার বিষয় হলো, নতুন টুথব্রাশও সব সময় পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত নয়। ব্রাজিলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দোকান থেকে কেনা নতুন ব্রাশের অর্ধেকেই ব্যাকটেরিয়া ছিল। আর আমরা বেশিরভাগ সময় টুথব্রাশ রাখি বাথরুমে। যেখানে থাকে টয়লেট, আর্দ্রতা আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো অসংখ্য অদৃশ্য জীবাণু।

টুথব্রাশের জীবাণু সাধারণত তিন জায়গা থেকে আসে- আমাদের মুখ, ত্বক এবং বাথরুমের পরিবেশ।

তবে, এই জীবাণুগুলো খুব একটা ক্ষতিকর নয়। এদের অনেকেই আমাদের মুখের স্বাভাবিক বাসিন্দা। যারা দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 

তবে সমস্যা হয়, যখন কিছু অচেনা অতিথি এই দলে ঢুকে পড়ে। যেমন- ই. কোলাই (E. coli), সিউডোমোনাস অ্যারুজিনোসা (Pseudomonas), ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়েই (Klebsiella) কিংবা ক্যান্ডিডা (Candida) ছত্রাক। এগুলোই সাধারণত পেটের সংক্রমণ, থ্রাশ বা দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে। আর এরা আসে পানির মাধ্যমে, হাতে থাকা জীবাণু থেকে কিংবা বাথরুমের বাতাসে উড়ে।

 

বাথরুমে টুথব্রাশ রাখার অন্যতম বিপদ আসে টয়লেট থেকে। প্রতিবার আপনি টয়লেট ফ্লাশ করলে, ক্ষুদ্র পানি-কণা ও জীবাণু প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত ছিটকে যায় বাতাসে। যদি আপনার টুথব্রাশ টয়লেটের কাছাকাছি থাকে, তাহলে এই কণাগুলো সরাসরি গিয়ে বসতে পারে ব্রাশের ব্রিসলে! অর্থাৎ, টয়লেটের জীবাণু পরের দিন আপনার মুখে ঢুকে পড়তে পারে অনায়াসেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কমন বাথরুমে রাখা ছাত্রদের ৬০ শতাংশ টুথব্রাশে পাওয়া গেছে মলজাত ব্যাকটেরিয়া।

 

তবে মার্কিন গবেষক এরিকা হার্টম্যান বলছেন, “বেশিরভাগ মলজাত ব্যাকটেরিয়া বাতাসে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না, তাই টুথব্রাশ থেকে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম।”

তবু কিছু ভাইরাস তুলনামূলক বেশি সময় টিকে থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, আর ঠোঁটের ঘা সৃষ্টিকারী হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes simplex virus) টিকে থাকতে পারে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত!

তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন- একজনের টুথব্রাশ আরেকজন ব্যবহার করবেন না, একসাথে রাখলে যেন একটির মাথা আরেকটির সঙ্গে না লাগে।

 

ঝুঁকি কার জন্য বেশি?

সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে টুথব্রাশের জীবাণু থেকে বড় কোনো বিপদ হয় না। কিন্তু যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এটি সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

একজনের টুথব্রাশ আরেকজন ব্যবহার করবেন না, একসাথে রাখলে যেন একটির মাথা আরেকটির সঙ্গে না লাগে।

কিছু গবেষণায় জানা গেছে, টুথব্রাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কিছু প্রজাতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। ফলে যদি তারা সংক্রমণ ঘটায়, তা চিকিৎসায় জটিল হতে পারে।

 

কিভাবে টুথব্রাশ পরিষ্কার রাখবেন?

বাজারে নানা ধরনের প্রোডাক্ট আছে- কেউ বলে ইউভি লাইট, কেউ আবার মাইক্রোওয়েভ বা অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু এসবের বেশিরভাগই কার্যকর নয় বরং ব্রাশ নষ্ট করার আশঙ্কা থাকে।

 

সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায় হলো- ব্যবহারের পর টুথব্রাশ ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে, উল্টো করে দাঁড় করিয়ে বাতাসে শুকিয়ে রাখা। বন্ধ বাক্স বা কভারে রাখলে জীবাণু বরং বাড়ে।

প্রয়োজনে ব্রাশের মাথা ৫-১০ মিনিটের জন্য অল্প অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে জীবাণু অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া তিন মাস পরপর টুথব্রাশ বদলে ফেলাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কারণ ১২ সপ্তাহ পর জীবাণুর পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

 

ভবিষ্যতের ভাবনা: ‘ভালো জীবাণু’ দিয়ে ব্রাশ!

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এখন গবেষকরা এমন টুথপেস্ট তৈরি করছেন, যা মুখের জন্য উপকারী জীবাণুর বৃদ্ধি বাড়ায় আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দমন করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এমন ব্রাশ বা টুথপেস্ট তৈরি হতে পারে যা মুখে উপকারী ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দাঁতের সুরক্ষাকে আরও প্রাকৃতিক করবে।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর