ঢাকা, ২৪ অক্টোবর শুক্রবার, ২০২৫ || ৯ কার্তিক ১৪৩২
good-food

অনলাইনে জমির আসল মালিকানা বের করার সহজ নিয়ম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১৫ ২৪ অক্টোবর ২০২৫  

বর্তমান সময় বিবেচনা করলে জমি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি। কিন্তু অনেকেই নিজের নামে জমি থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক মালিকানা বা খতিয়ান সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন। এই জটিলতা নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন ঘরে বসেই স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যে কেউ নিজের জমির মালিকানা যাচাই এবং খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছেন।

 

জমির মালিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে খতিয়ান বা পর্চা একটি অপরিহার্য দলিল। এটি মূলত জমির মালিকানা ও অন্যান্য তথ্যের সরকারি প্রমাণপত্র। সরকারি জরিপের বিভিন্ন ধাপে জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, জমির পরিমাণ, মালিকের নাম, ঠিকানা এবং খাজনার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ করে যে নথি প্রস্তুত করা হয়, তাকেই খতিয়ান বলা হয়।

 

একটি খতিয়ানে সাধারণত জমির মৌজা, জেএল নম্বর, দাগ নম্বর, বাট্রা নম্বর এবং জমির পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি, জমির বর্তমান দখলদারের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, জমির শ্রেণি, খাজনার পরিমাণ এবং ইজারা নেওয়া জমির ক্ষেত্রে মালিকের অধিকারের মতো খুঁটিনাটি তথ্যও এতে লিপিবদ্ধ থাকে।

 

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জরিপের ওপর ভিত্তি করে মূলত চার ধরনের খতিয়ান প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে ১৯৪০ সালের জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) খতিয়ান, ১৯৫০-এর দশকে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইনের আওতায় তৈরি এসএ (স্টেট অ্যাকুইজিশন) খতিয়ান, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) খতিয়ান এবং সর্বশেষ ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে চলমান জরিপের ভিত্তিতে তৈরি বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) খতিয়ান।

 

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ। এর জন্য প্রয়োজন কেবল একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট (http://www.dlrs.gov.bd) এ প্রবেশ করে ‘খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান’ অপশনটি বেছে নিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নির্বাচন করলেই যেকোনো জমির খতিয়ান ও মালিকানার বিস্তারিত তথ্য চলে আসবে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমি ক্রয়-বিক্রয়ের আগে মালিকানা যাচাই করা অপরিহার্য। কারণ অনেক সময় প্রতারক চক্র ভুয়া মালিক সেজে জমি বিক্রির চেষ্টা করে। এছাড়া, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি কেনার ক্ষেত্রে সকল ওয়ারিশের অধিকার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি, যা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।

 

ভূমি বিশেষজ্ঞরা অনলাইন যাচাইয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে মূল ভলিউম বা রেকর্ড পরীক্ষা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁদের মতে, অনলাইনে প্রাথমিক তথ্য দ্রুত পাওয়া গেলেও, চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অফিসের রেকর্ড যাচাই করা সবচেয়ে নিরাপদ। এই সমন্বিত পদক্ষেপে জমির মালিকানা যাচাই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ, নিরাপদ ও সময় সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর