ঢাকা, ০৪ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২০ কার্তিক ১৪৩২
good-food
১৭

এক চামচ অলিভ অয়েলেই সমাধান

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৯:৩১ ৪ নভেম্বর ২০২৫  

সকাল সকাল এক চামচ অলিভ অয়েল দিতে পারে ম্যাজিক সমাধান। অনেকেই বিশ্বাস করেন, সকাল সকাল খালি পেটে অলিভ ওয়েল খেলে পেট ফাঁপা কমে, হজম ভালো হয় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। শুনতে দাদী-নানীদের ঘরোয়া টোটকা মনে হলেও, গবেষণায় দেখা গেছে এই অভ্যাসের পেছনে সত্যিই কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে থাকে পলিফেনল এবং ওলিক অ্যাসিডের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান।

অলিভ অয়েলের জাদুকরী ভূমিকা

২০১৯ সালে জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে থাকে পলিফেনল এবং ওলিক অ্যাসিডের মতো বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান। এই উপাদানগুলো পিত্তরসের সঠিক প্রবাহকে সমর্থন করে, অন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য রক্ষা করে। সহজভাবে বললে, এই উপাদানগুলো হজমে সাহায্যের পাশাপাশি ভিটামিন A, D, E এবং K-এর মতো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো শরীরকে আরও দক্ষতার সাথে শোষণ করতে সাহায্য করে।

 

কীভাবে অলিভ অয়েল হজমে সাহায্য করে

অলিভ অয়েল শরীরের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক হজম সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এটি পিত্তরস উৎপাদন বাড়ায়, যা খাবারের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে থাকা স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পেটের ভেতরের আস্তরণকে ঢেকে রাখে, যা অ্যাসিডিক খাবারের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। যাদের হালকা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের প্রবণতা আছে, তাদের জন্য অলিভ অয়েল হতে পারে এক সহজ প্রতিরোধক।

অলিভ অয়েল শরীরের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক হজম সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

এছাড়াও, অলিভ অয়েল লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ভেতর থেকে ত্বক ও চুলের পুষ্টি জোগায়। ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খাবারের আগে কাঁচা অলিভ অয়েল খান বা সালাদে কাঁচা অবস্থায় ব্যবহার করেন। এতে অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

 

অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য

আমাদের পরিপাকতন্ত্রে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যাদের সমষ্টিগতভাবে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা বলা হয়। এই মাইক্রোবায়োটা হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এমনকি আমাদের মেজাজকেও প্রভাবিত করে। অলিভ অয়েলের পলিফেনলগুলো প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে। অর্থাৎ, এটি ভালো ব্যাকটেরিয়াকে খাদ্য জোগায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দমন করে। সময়ের সাথে সাথে, এটি অন্ত্রে একটি সুষম মাইক্রোবায়োম তৈরি করতে সাহায্য করে, যা পুষ্টি শোষণ উন্নত করে এবং পেট ফাঁপা বা অনিয়মিত মলত্যাগের মতো সমস্যা কমায়। একটি সুস্থ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা কোলনের (বৃহদন্ত্র) স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন অলিভ অয়েল গ্রহণ একটি স্বাস্থ্যকর হজম পরিবেশ বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।

অলিভ অয়েলের পলিফেনলগুলো প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে।

খালি পেটে অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই সকালে নাশতার আগে এক চা-চামচ বা এক টেবিলচামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেতে পছন্দ করেন। খালি পেটে খেলে শরীর অন্য খাবারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এর পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো-

* অন্ত্রকে আলতো করে পিচ্ছিল করে মসৃণ মলত্যাগকে উৎসাহিত করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

* লিভার থেকে পিত্তরস নিঃসরণ বাড়িয়ে শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।

* দিনের শুরুতে পরিপাক এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে আপনার পাকস্থলীকে পরবর্তী খাবারের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

তবে মনে রাখতে হবে, পরিমিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তেল সেবন করলে অস্বস্তি বা ডায়রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যাদের পেট সংবেদনশীল।

 

সঠিক অলিভ অয়েল নির্বাচন

হজমের সুবিধার জন্য সবসময় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বেছে নিন। এটি ঠান্ডা চাপে তৈরি হয় বলে এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদান সবচেয়ে বেশি থাকে। কেনার সময় বোতলে “First Cold Pressed” লেখা আছে কিনা দেখে নিন। কেনার পর এটি টাটকা রাখতে তাপ বা সূর্যালোক থেকে দূরে অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন। অলিভ অয়েল গরম করলে এর উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই এটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া সবচেয়ে ভালো—সালাদে, রান্না করা সবজিতে ছড়িয়ে, বা সরাসরি এক চামচ করে।

অলিভ অয়েল গরম করলে এর উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা

যদিও অলিভ অয়েল বেশ নিরাপদ, তবু বেশি খেলে হজম ধীর হতে পারে বা কিছু ক্ষেত্রে চর্বি শোষণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের গলব্লাডার বা পিত্তথলির সমস্যা আছে, তারা শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ এটি পিত্তরস নিঃসরণ বাড়াতে পারে। রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন এমন ব্যক্তিরাও সাবধান থাকুন, কারণ অলিভ অয়েল সামান্য রক্তচাপ কমাতে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে, যা ওষুধের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

অলিভ অয়েল কোনো জাদু নয়, কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া এক পরীক্ষিত ও কোমল সমাধান। প্রতিদিন এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হতে পারে হজম ও অন্ত্রের সুস্থতার জন্য এক সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস। এটি শুধু হজম সহজ করে না, বরং অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে। ভালো মানের অলিভ অয়েল বেছে নিন, নিয়মিত খান, আর শরীরকে সময় দিন তার প্রাকৃতিক পরিবর্তন বুঝে নিতে।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর