ঢাকা, ২৯ অক্টোবর বুধবার, ২০২৫ || ১৩ কার্তিক ১৪৩২
good-food

নিয়মিত জিরা পানি খেলে শরীরে যা ঘটে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:০১ ২৮ অক্টোবর ২০২৫  

রান্নাঘরের কমন এক মশলা জিরা। প্রতিদিনের রান্নার অর্ধেক স্বাদ তার উপরেই নির্ভর করে। গন্ধ। কিন্তু জানেন কি, এই সাধারণ মসলাটাই শরীরের জন্য দারুন উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম জিরা পানি শরীরের ভেতরে আনতে পারে বড় পরিবর্তন।

অনেকেই দিনের শুরুটা করেন কফি বা চা দিয়ে, কিন্তু যারা এর জায়গায় বেছে নিয়েছেন জিরা পানি, তারা জানেন এর উপকারিতা কতটা গভীর। মাত্র এক মাস নিয়মিত খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে, তা একেবারেই চোখে পড়ার মতো। চলুন দেখে নেওয়া যাক, এক মাস জিরা পানি খেলে শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে-

 

হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়

প্রতিদিন জিরা পানি খেলে শরীরে হজম এনজাইমের উৎপাদন বাড়ে। ফলে খাবার সহজে হজম হয় এবং বদহজম বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো কমে যায়। জিরার বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলো পিত্তরসসহ বিভিন্ন হজম রসের নিঃসরণ বাড়ায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, জিরার ‘থাইমল’ ও ‘কিউমিনালডিহাইড’ নামক যৌগগুলো পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হজমের সমস্যায় উপকার দেয়।

 

ওজন কমাতে সহায়তা করে

নিয়মিত জিরা পানি পান করলে বিপাকক্রিয়া দ্রুত হয়, ফলে শরীর সহজে চর্বি পোড়াতে পারে। এতে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে। অর্থাৎ শরীর রক্তের শর্করা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং চর্বি জমার প্রবণতা কমে। তবে ওজন কমাতে জিরা পানি একাই যথেষ্ট নয়- এর পাশাপাশি সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন। জিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ বিপাকক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

 

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

জিরা পানির অন্যতম বড় উপকারিতা হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। এটি ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে জিরা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদ্‌স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।   

জিরা পানির অন্যতম বড় উপকারিতা হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।

অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে

জিরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেল বা ক্ষতিকর অণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে এবং ছোটখাটো সংক্রমণ বা মৌসুমি অসুস্থতা প্রতিরোধে শরীর আরও সক্ষম হয়। পাশাপাশি এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান ত্বকেও উপকার দেয়। ত্বকের বার্ধক্য বিলম্বিত করে, ব্রণ বা দাগ কমায় এবং ত্বককে রাখে উজ্জ্বল। যদিও এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত, তবে অনেকেই নিয়মিত জিরা পানি খেয়ে ত্বকের উন্নতি লক্ষ্য করেছেন।

 

পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে

জিরা পানি প্রাকৃতিক ক্ষুধাবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জিরা পানি খাওয়ালে শিশুদের মধ্যে ক্ষুধা ও খাবার গ্রহণের আগ্রহ বেড়ে যায়। এটি সরাসরি অতিরিক্ত খাওয়ার কারণ না হলেও, যারা ক্ষুধামান্দ্য বা অপুষ্টিতে ভোগেন তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। জিরার বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ হজম এনজাইম ও পিত্তরস নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে খাবারের পুষ্টি উপাদান শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়।

 

লিভারের যত্নে সহায়ক

জিরা পানি লিভারকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ শরীরের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং জিরায় থাকা লৌহ শরীরে রক্তকণিকা উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে। যারা রক্তাল্পতায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। এছাড়া জিরার প্রদাহনাশক উপাদান বাত বা জয়েন্টের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।

 

লিভারের যত্নে সহায়ক

জিরা পানি লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করে শরীরকে রাখে হালকা ও পরিষ্কার। একই সঙ্গে এর প্রদাহনাশক উপাদান জয়েন্টে ব্যথা বা বাতের মতো সমস্যায় আরাম দেয়। জিরায় থাকা আয়রন রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদনেও সাহায্য করে, যা রক্তস্বল্পতায় ভোগা মানুষের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

 

তবে সাবধানতাও দরকার

যে কোনো কিছুতেই ‘অতিরিক্ত’ ভালো নয়- এ কথাটা জিরা পানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রথমে অল্প পরিমাণে শুরু করুন, যেমন সকালে আধা গ্লাস করে। ধীরে ধীরে শরীর অভ্যস্ত হলে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। কারও যদি ডায়াবেটিস, পেটের আলসার বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর