ঢাকা, ০৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২২ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৮২২

‘ভিআইপি’র জন্য ফেরির অপেক্ষা, অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু স্কুলছাত্রের

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৩১ ২৯ জুলাই ২০১৯  

প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা শিশু তিতাস ঘোষ (১১)। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। পড়তো কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিল সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ওই স্কুলছাত্রকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু সরকারের একজন যুগ্ম সচিব আবদুল সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন বলে ওই ফেরিকে অপেক্ষা করতে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও কোনো কাজ হয়নি। এরই মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস।

ঘটনা গেল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতের।

 

মর্মান্তিক এ ঘটনায় মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে চরমভাবে। সবার মুখে মুখে ঘুরছে বিষয়টি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

এদিকে, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে ভিআইপি’র অপেক্ষায় ফেরি না ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের (১১) মৃত্যুর ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহনওয়াজ দিলরুবা খান ও উপসচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিমকে সদস্য করে এই কমিট গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, কমিটির তদন্তের বিষয় হবে - ফেরিতে স্কুলছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ অথবা বিআইডব্লিউটিসি’র কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা।

এছাড়া ওই কর্মকর্তার গাড়িতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উনার গাড়িতে স্টিকার থেকে থাকলে তা আসলো কোথা থেকে?

মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, অভিযুক্ত যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা নন। এই মন্ত্রণালয়ে এই নামে কোনও কর্মকর্তা নেই। যতদূর জানা গেছে, তিনি যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের কর্মকর্তা।

 

তিতাসের বড় বোন তন্নীসা ঘোষ পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছায় রাত ৮টার দিকে। ‘কুমিল্লা’ নামে একটি ফেরি তখন ওই ঘাটেই ছিল। ফেরি ছাড়তে দেরি দেখে তারা ঘাট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য চান। কিন্তু ফেরি ছাড়েনি।

শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ১১টার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস ফেরিতে উঠলে ছাড়া হয় ফেরি। কিন্তু ফেরি ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই মাঝ নদীতে মারা যায় তিতাস।

 

তন্নীসা বলেন, আমার ভাইয়ের জীবন কেড়ে নিল ভিআইপি।এ দেশে জীবনের দাম বেশি না, ভিআইপিদের দাম বেশি?

 

তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ বলেন, আমার বোন ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে। তবু ওরা ফেরি ছাড়েনি। উল্টো বলেছে ফেরি ছাড়লে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না। … তারা বলেছে ভিআইপি আসবে। আর আমাদের রোগী যে মরে যাচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো নজর নেই। কোনো সহযোগিতা না পেয়ে দিলাম ৯৯৯ - এ কল। কিন্তু সেখানেও কোনো কাজ হলো না।

 

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে বিআইডব্লিউটিসির কর্মীরা বলছেন, তিতাসের স্বজনরা অনুরোধ করলেও মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের ‘জরুরি বার্তা’ পাওয়ায় ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি ছাড়তে পারেনি।

 

ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন মিয়া বলেন, ডিসি স্যার আমাকে জানান, ভিআইপি যাবেন। ফেরি যেন আগে না ছেড়ে যায়। তবে আমি তখন ঘাটে ছিলাম না। আমাদের স্টাফকে বলে দিই ভিআইপি আসার কথা। পরে সেখানে কী হয়, তা আমার জানা নেই।

 

এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তিনি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যাওয়ার আগে আমার কাছে ফেরিতে যাওয়ার বিষয়টি জানান। পরে আমি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালামকে জানাই। কিন্তু ওই ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে একজন গুরুতর আহত রোগী আছে, তা আমি জানতাম না। ঘাটের ম্যানেজার এ বিষয় আমাকে কিছু জানাননি। পরে রোববার বিষয়টি জানতে পারলাম।

 

সরকারি কর্মকর্তা বা ভিআইপিদের জন্য ফেরি বিলম্বিত করার কোনো নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, তিনি (আবদুল সবুর মণ্ডল) চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া তিনি যুগ্ম সচিব। তাই তাকে ভিআইপি বলা যায়। এই ধরনের কর্মকর্তারা এই নৌপথে এলে তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়।