ঢাকা, ২৮ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food

যেভাবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের কাঁদাচ্ছে বাংলাদেশ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৫১ ২৮ নভেম্বর ২০২৫  

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে—যা দেশটির বাণিজ্য নীতি নির্ধারকদের কাছে বিস্ময়কর হলেও—এর সাম্প্রতিক মন্দার পেছনে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরতার প্রচেষ্টা এবং বিকল্প উৎস হিসেবে পাকিস্তান ও চীন থেকে আমদানি বাড়ানো। কারণ, অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নয়াদিল্লি একপর্যায়ে পেঁয়াজ রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। খবর ইকোনমিক টাইমস।

বিশেষজ্ঞরা জানান, একসময় ভারতের মোট পেঁয়াজ রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ কিনত বাংলাদেশ। অথচ গত আট মাসে ঢাকা প্রায় কিছুই আমদানি করেনি, যদিও বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ভারতের তুলনায় তিন গুণ বেশি। সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ খুব কম কিনছে।

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হওয়ায় এই ঐতিহ্যবাহী ক্রেতা দেশগুলো ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে, যা ভারতের দীর্ঘদিনের বাজার-আধিপত্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এইচপিইএ) সাবেক সভাপতি অজিত শাহ বলেন, “আমরা আগে আমাদের মানের জন্য অতিরিক্ত দাম নিতে পারতাম। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন বাজারে না থাকায় ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে নিয়েছে। এখন তারা মান নয়, দাম তুলনা করে।”

আগস্ট ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর আগেও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাস এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ মাস রপ্তানি বন্ধ ছিল।

এর ফলে ভারতীয় পেঁয়াজনির্ভর বাজারগুলোতে দাম বেড়ে যায়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের কারণে ভারতকে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছিল। বর্তমানে দেশটির সরকার স্থানীয় কৃষককে সুরক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে না। ২০২৩-২৪ সালে ভারত বাংলাদেশে ৭.২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা সে বছরের ভারতের মোট রপ্তানি ১৭.১৭ লাখ টনের ৪২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৫-২৬ সালের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টনে। তবে দিল্লির ধারণা, ঢাকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিই ভারতের পেঁয়াজ আমদানির প্রতি অনীহা বাড়িয়েছে।

কিন্তু রপ্তানিকারকদের বক্তব্য, ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন—যা মূলত দেশের বাজারদরের ওপর নির্ভরশীল—ভারতের ঐতিহ্যবাহী রপ্তানি বাজারগুলোকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেছে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বোর্ড অব ট্রেডের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য পাশা পাটিল বলেন, “আমরা শুধু বহু ঐতিহ্যবাহী ক্রেতা হারাইনি, তারা ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে নিজেদের পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়ে তুলছে।”

তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের গঠিত পেঁয়াজ নীতি কমিটির প্রধান, যা কৃষকদের কম দামের প্রতিবাদের পর গঠন করা হয়।

রপ্তানিকারকরা জানান, সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। সরকার বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানান—সৌদি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আমদানি পারমিট দেওয়া বন্ধ করেছে।

এইচপিইএ সরকারকে জানিয়েছে, “সৌদি আরব এখন ইয়েমেন ও ইরান থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে পেঁয়াজ পাচ্ছে, পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদনও যথেষ্ট।”

ব্যবসায়ীদের মতে, ফিলিপাইন কেবল তখনই ভারতীয় পেঁয়াজ কেনে যখন চীনের পেঁয়াজ পাওয়া যায় না।

২০২০-২১ সালে ভারত সৌদি আরবে ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল। পরে বছর বছর কমে ২০২৫-২৬ সালে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২৩ টনে।

বিরূপ পরিস্থিতি হলো—ভারতীয় বীজ ব্যবহার করেই প্রতিবেশী দেশগুলো এখন ক্রমেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে।

রপ্তানিকারকরা হর্টিকালচার কমিশনারকে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে পেঁয়াজ বীজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন।

এইচপিইএর সহসভাপতি বিকাশ সিং বলেন, “বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং আশপাশের আরও কয়েকটি দেশ ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজ উৎপাদন করছে। এই প্রবণতা ভারতীয় কৃষকদের জন্য বড় হুমকি। চীন ও পাকিস্তানে ভারতীয় পেঁয়াজ বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’’