ঢাকা, ০৬ অক্টোবর সোমবার, ২০২৫ || ২১ আশ্বিন ১৪৩২
good-food
৪১

সবকিছু ভুলে যান? মনে রাখতে যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৫৪ ৪ অক্টোবর ২০২৫  

আমাদের জীবন চলে স্মৃতির ভরসায়। রাস্তা চিনে নেওয়া থেকে শুরু করে প্রিয়জনকে চিনতে পারা সব কিছুই সম্ভব হয় স্মৃতির কারণে। এক অর্থে বলা যায়, স্মৃতিই আমাদের জীবনের গল্প ধরে রাখে। তাই এটাকে যত্নে রাখা দরকার।

 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কৈলাস রবার্টস বলেন, “স্মৃতি না থাকলে জীবন চালানোর কোনো দিক নির্দেশনা থাকত না।” তাই মস্তিষ্ক ও স্মৃতিকে সক্রিয় রাখতে আমাদের কিছু নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।

 

বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণার মাধ্যমে এমন কিছু উপায় বের করেছেন, যা মেনে চললে স্মৃতিকে দীর্ঘদিন ভালো রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নিই-

 

মুখস্থ না করে মনে করার অভ্যাস 

শুধু পড়ে যাওয়ার বদলে শেখা তথ্য মনে করার চেষ্টা করা স্মৃতিকে শক্তিশালী করে। যেমন- কোনো তালিকা মুখস্থ করার পর সেটি না দেখে মনে করার চেষ্টা করা, কিংবা কাউকে দিয়ে প্রশ্ন করানো। একে বলে মনে করার চর্চা বা রিট্রিভাল প্র্যাকটিস।   

 

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে তথ্য মনে করার চেষ্টা করলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে যে তথ্যটি ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট নিউরাল পথগুলো আরও মজবুত হয়।

 

এই অভ্যাসে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে তথ্যটা গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই অনুযায়ী স্মৃতিও মজবুত হয়। একটানা পড়ার চেয়ে কিছুটা বিরতি নিয়ে পরে আবার মনে করার চেষ্টা বেশি কার্যকর।

 

মাইন্ড প্যালেস ব্যবহার করুন

ক্রম অনুসারে কিছু মনে রাখার প্রয়োজন হলে মাইন্ড প্যালেস অত্যন্ত কার্যকর কৌশল। এখানে প্রতিটি তথ্যকে কোনো অর্থবহ ছবিতে রূপান্তর করুন এবং পরিচিত কোনো জায়গায় (যেমন বাড়ি-ঘর বা অফিস যাওয়ার পথে) মনে মনে বসিয়ে দিন। পরে শুধু সেই জায়গাগুলো কল্পনায় ভ্রমণ করলেই সব মনে পড়ে যাবে।

 

এভাবে মস্তিষ্ক স্থান, ছবি আর সংযোগের মাধ্যমে সহজেই তথ্য ধরে রাখতে পারে। মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ কেনসিঞ্জার বলেন, “মাইন্ড প্যালেস একসাথে স্থানচিত্র, কল্পনা এবং সংযোগ তৈরির ক্ষমতাকে কাজে লাগায়- যা হিপোক্যাম্পাসের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী উপাদান।”

 

এই পদ্ধতি দিয়ে অনেকে পুরো তাসের ডেক কয়েক মিনিটেই মনে রাখতে পারেন। এমনকি মেমরি সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্যও ডাক্তাররা এটি শেখান। 

একটানা পড়ার চেয়ে কিছুটা বিরতি নিয়ে পরে আবার মনে করার চেষ্টা বেশি কার্যকর।

 

হাসুন, মজা করুন

যে তথ্য হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, সেটি মস্তিষ্কে বেশি দিন ধরে থাকে। হাসি আনন্দের হরমোন ডোপামিন বাড়ায়, যা মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। তাই কোনো কিছু মনে রাখতে চাইলে মজার ছড়া বানান, মনে রাখতে চাওয়া জিনিসের অদ্ভুত নাম দিন বা মজার ছবি কল্পনা করুন। এতে মনে রাখা সহজ হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো তথ্য মজার উপায়ে শেখানো হয়, তখন শিক্ষার্থীরা সেটি ভালোভাবে মনে রাখতে পারে।

 

গুগল ম্যাপের ওপর কম নির্ভর করুন

আজকাল অনেকেই কোথাও যেতে গুগল ম্যাপের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এতে ধীরে ধীরে আমাদের নিজ চেষ্টায় দিক চিনে নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ছোট ছোট জায়গায় অন্তত নিজেই পথ চিনে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে স্থানসংক্রান্ত স্মৃতি আবারও শক্তিশালী হবে।

 

নতুন কিছু শিখুন

মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে নতুন কিছু শেখার বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ভাষা শেখা বা নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করলে মস্তিষ্কের সুরক্ষা শক্তি বাড়ে। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলেন বায়ালিস্টকের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দুই ভাষায় কথা বলেন, তারা গড়ে চার বছর দেরিতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হন। ভাষা শেখা কঠিন মনে হলে বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নতুন খেলা শেখা কিংবা নতুন কোনো শখে মন দেওয়াও কার্যকর হতে পারে।

 

বেশি সামাজিক হোন

সামাজিকতা হলো মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ব্যায়াম। ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নেন, তাদের মানসিক অবক্ষয় তুলনামূলক কম হয়। ২০২২ সালের আরেক বড় গবেষণায়ও দেখা যায়, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামাজিক মেলামেশা স্মৃতিকে সুরক্ষিত রাখে। তাই নিয়মিত বন্ধুদের সাথে দেখা করা, ক্লাবে যাওয়া, স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হওয়া কিংবা নতুন কিছু শেখার ক্লাসে যোগ দেওয়া- এসব কার্যকলাপ শুধু আনন্দই দেবে না, স্মৃতিকেও শক্তিশালী করবে।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর