ঢাকা, ০৭ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ২২ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৮৫৩

সুবর্ণচরে নারী নির্যাতন, মূল হোতা গ্রেপ্তার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:৩৭ ৩ জানুয়ারি ২০১৯  

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও ২ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।

 

সবশেষ বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য রুহুল আমিন  ও  মো. বেচুকে।

 

পুলিশ জানায়, ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে মো. বেচুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন সুবর্ণচরের উত্তর ওয়াপদা এলাকার একটি মাছের খামার থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

বেচুকে গ্রেপ্তার করা হয় সেনবাগ কেশারপাড়ের একটি ইটভাটা থেকে।

 

ওসি বলেন, রুহুল আমিন ও মো. বেচু প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

 

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আগেই গ্রেপ্তার করা হয় মো. স্বপন, মো. সোহেল ও বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসুকে।  

 

স্বপনকে মঙ্গলবার রাতে এবং সোহেলকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সোহেল এই মামলার প্রধান আসামি।

 

অভিযোগে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই নারী গত রোববার সকালে এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এ সময় কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন যুবক তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে যুবকরা তাঁকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ছালা উদ্দিন, সোহেল, বেচু, মোশারফসহ ১০ - ১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে মারধর করেন। পরে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে পুকুরপাড়ে এনে গণধর্ষণ করেন।

 

নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সবাই চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের লোক।

 

মামলার এজাহারে মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ ৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও ছালা উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়।

 

নির্যাতিত নারী জানান, তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের স্থানে রক্ত জমে আছে। তিনি নড়াচড়া করতে পারছেন না।

 

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষাকালে নির্যাতনের শিকার শরীর থেকে সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষার জন্য গতকাল আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে।

 

চরজব্বার থানার ওসি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া বাদশা আলম ও স্বপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ঘটনার বিষয়ে কিছু স্বীকার করেননি। আদালতে বাদশা আলমের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীতে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কেউ ছাড় পাবে না। এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে।

 

সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

 

চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নির্যাতনের শিকার নারীর সঙ্গে কথা বলেন।

 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহামুদ ফয়জুল কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সেলিনা আক্তারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি দলও ঘটনার তদন্তে বুধবার নোয়াখালী যায়।