ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৬৭২

অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে এসেছিল ঐক্যফ্রন্ট: প্রধানমন্ত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:০৬ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি একেবারে শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্ত তারা জানত, তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। নির্বাচনে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই তারা সবসময় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে।
গেল বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর শেখ হাসিনা এ প্রথম বিদেশ সফর করছেন। মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেন।
গেল সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ২৮টি আসনে জিতেছে। সেই নির্বাচনের স্বীকৃতি সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। 
তিনি বলেন, ২০০৮ এর চেয়েও ভালো ফলাফলের আশা তারা কীভাবে করে? গেল কয়েক বছরে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে যে সব সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছিল জনগণ তা ভুলে যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি পরাজয়ের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল। তারা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আন্তরিক ছিল না। তাই হেরেছে, এটাই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার ছেলে তারেক জিয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের পাশাপাশি গ্রেনেড হামলা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সুতরাং, বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে কেন মানুষ তাদের ভোট দেবে?
এছাড়া বিএনপি তাদের দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে দেয়ায় জনসমর্থন হারিয়েছে। এটিও তাদের পরাজয়ের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ।

তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট করতে পারেনি যে, তারা নির্বাচনে বিজয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কে সরকার গঠন করবেন। নির্বাচনে বিএনপি’র ভরাডুবির জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে মনোনয়ন বাণিজ্যকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি প্রতিটি আসনে অন্তত তিনজন অথবা আরো বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার বদলে নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি আওয়ামী লীগের সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল বেশি। তবে জনগণ ভালো করেই জানে এ দল  জনগণকে কি দিতে পারে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে উন্নত জীবন দিয়েছে। দলের শাসনকালে জনগণের মাসিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণ তাও বুঝতে পেরেছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, অন্যদিকে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের দেশকে কিভাবে দেখতে চাই সেই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের অতীতের উন্নয়ন জনগণের কাছে যথেষ্ট কাছে দৃশ্যমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে। ‘মাতৃভাষা’র কথা বলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কেউ এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। এ দল এখন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন বিএনপি এবং তাদের মিত্র ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের সাত জায়গায় মামলা করেছে। আইন অনুযায়ী তারা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার গোয়েন্দাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে। খালেদা জিয়া এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধে মামলার তাদের ডক্যুমেন্ট প্রধান প্রমাণ।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা সবসময়ই দেশের সব আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্টা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের সংগ্রামে আমাদের সঙ্গে ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের প্রতিবাদী ভূমিকার কথা স্মরণ করেন 
প্রধামন্ত্রী।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি বিদেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরায় নিবেদিতভাবে দায়িত্বপালন ও দেশের স্বার্থে ইতিবাচক ভাবধারা তুলে ধরায় কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, গেল সাধারণ নির্বাচনে সব শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ায় ভূমিধস বিজয় অর্জিত হয়। শহর ও গ্রামের জনসাধারণ, ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়, তরুণ ও নারীরা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দেন।
গেল নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি’র অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে ৭০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসি। দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি ভোটাররা এতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, লাগামহীন দুর্নীতির কারণে জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেক বছর দেশ শাসন করে। কিন্তু তারা খুন, সামরিক অভ্যুত্থান, দুঃশাসন, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া জনগণকে আর কিছুই দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সামরিক শাসকগণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান, দুঃশাসন, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া জনগণকে কিছুই দিতে পারেনি।
বিএনপি’র লাগামহীন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সফররত নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তাদের দুর্নীতি খুঁটিয়ে তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে মামলা দায়ের করে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিকাংশ কর্মকর্তারা বিএনপি’র অনুগত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। কন্যা হিসেবে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তার স্বপ্ন ও ভাবনা সম্পর্কে আমি অবগত আছি।
যেসব প্রবাসী নির্বাচনকালে দেশে থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এসব জোনে প্রবাসীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।