ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৭৮

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় বিপুল মদ-সিসা-ক্যাসিনো সামগ্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৫৫ ২৭ অক্টোবর ২০১৯  

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রোববার সন্ধ্যায় চালানো এ অভিযানে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ আগে কোন ক্যাসিনো এবং বারে পাওয়া যায়নি।

রোববার বিকেল ৫টার দিকে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৫৭ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে এ অভিযান শুরু হয়।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্যাসিনো সামগ্রী এবং মদ, বিয়ার, সিসা পাওয়া গেছে।

একই হোল্ডিং-এ পাশাপাশি দুটি ভবনে অভিযান চালানো হয়। একটি ভবনের ছাদের এক কোনে ক্যাসিনো সামগ্রী, আরেক ভবনের চার তলার একটি কক্ষে বিপুল পরিমাণ মদ পাওয়া যায় বলে জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গত মাসে ক্যাসিনো বন্ধে ঢাকার ক্রীড়া ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর তারা ধরনের আরও অভিযান চালিয়ে আসছিল। এরপর অভিযানে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেই বেশি পরিচিত। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তার নাম এসেছিল।

শেয়ার কেলেঙ্কারির এক মামলায় গত বছর আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছিল পুঁজিবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল। তার আগ থেকেই তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।

রোববারের অভিযানে গুলশানের ওই বাড়ি থেকে দুই তত্ত্বাবধায়ক পারভেজ ও নবীনকে আটক করেছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, বাড়িতে কয়েকটি কক্ষে একাধিক তাকে থরে থরে সাজানো ছিল বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ। যে কেউ দেখলেই প্রথমে মনে করবে এটা যেন মদের গোডাউন।

বসবাসের ঘরে এত বিপুল পরিমাণ মদের মজুদ দেখে রীতি মতো হতবাক অভিযান পরিচালনাকারীরা।


আমবী ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাই; তার স্ত্রী নওরীন এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বাংলাদেশের রহস্যময় ব্যক্তিদের তালিকা করলে প্রথমদিকেই থাকবে যার নাম তিনি আজিজ মোহাম্মদ ভাই। যাকে নিয়ে আছে নানা গল্প, নানা রহস্য।


 আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে নিয়ে এসব গল্পের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র জগতের নারী ও হত্যা কেন্দ্রিক। এসব গল্পের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মুখরোচক বা মিথ্যা সে নিয়েও আছে নানা মত।
উইকিপিডিয়া বলছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি।

১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসে। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে।

১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়। আজিজ মোহাম্মদ ভাই তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইস্পাত প্রযোজকের পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ছিলেন।

তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্সের আজীবন সদস্য। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই।


 

এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। মাদক ব্যাবসার সাথে তার জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিলেন। তাকে মুক্ত করতে আগা খান, প্রিন্স করিম আগা খান নিজেই বাংলাদেশে এসেছিলেন।

১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটাকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহের পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকান্ড।

সম্প্রতি আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকতেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। আরো আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।

থাইল্যান্ডে গেলে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের অনেকেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের আতিথেয়তা পান। তার মতো সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ডে বসবাস সন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়। সেই ঘটনা আবার তুমুল আলোচনার ঝড় তুলে সালমানের বিউটিশিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রাবেয়া সুলতানা রুবির ফেসবুকে তুলে ধরা এক ভিডিওবার্তায়।

 


সালমান শাহের মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

২০০৭ সালে তাকে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এই একই অপরাধে ২০১৩ সালে তার ভাতিজা আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।