ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৫৮

ইতিহাসের পাঠ : কীভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা

রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:২৭ ৮ মার্চ ২০২০  

রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক :  বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের সমসাময়িক ইতিহাসের প্রধান মাইলফলক বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম। এর ইতিহাস শুধুমাত্র ২৫শে মার্চের কালরাত্রি থেকে শুরু হয়নি। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে, নানা আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে মিলিত হয়েছে একটি মহাসড়কে । যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছি । তিল তিল করে বাঙালি জাতি রাষ্ট্র গঠনের পথকে করেছে প্রশস্ত। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ধাপে ধাপে এক একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে ইতিহাসের অনুষঙ্গ হিসেবে।

 

বাঙালি জাতির জেগে ওঠার কাহিনীর পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগ নামক সংগঠনটি। যার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আজ ইতিহাসের অংশ হয়েছে। দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একজন মানুষ প্রধান নেতা রুপে আবির্ভূত হয়েছে। তেমনিভাবে শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ছাত্রলীগ তাকে প্রতিষ্ঠা করেছে বঙ্গবন্ধু রুপে। ‘‘রাজনীতিতে শেখ মুজিবের একক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘বঙ্গবন্ধু‘ শব্দটি বিরাট ভূমিকা রেখেছিল’’।

 

ছাত্রলীগের কর্মীরাই প্রথম জয় বাংলা ধ্বনি তোলে, কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় ‘স্বাধীনতার প্রস্তাব’ উত্থাপন করে, জাতীয় পতাকার নকশা তৈরী করে , প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘সর্বাধিনায়ক‘ হিসেবে ঘোষণা করে, জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করে এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করে। ঘটনাগুলো অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ১৯৬৮ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ এর মার্চের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে।

 

বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ তার সম্প্রতি প্রকাশিত বহুল আলোচিত ‘জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইয়ের ৩৮-৪০ পৃষ্ঠা লেখেন যে,

‘‘০২ মার্চ বিকেলে সিরাজুল আলম খান ইকবাল হলের ক্যানটিনে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকে নিয়ে বসলেন। কিছু কিছু বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। তিনি কিছু একটা বলছেন, আর কেউ একজন নোট নিচ্ছেন। তিনি বললেন, জাতীয় পতাকা কেমন হবে? কয়েকজন বলল, আজ বটতলায় যেটা তোলা হয়েছে, সেটাই হোক। জাতীয় সংগীতের প্রসঙ্গ উঠতেই দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটির প্রস্তাব এল। কিন্তু এর দুটো সমস্যা ছিল। প্রথমত, গানটির কোথাও ‘বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি নেই। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সংগীত করা হোক। সিরাজুল আলম খান মাথা নাড়লেন। একজন সঙ্গে সঙ্গে নোট নিলো। এরপর এল ‘জাতির পিতা’ প্রসঙ্গ। অনেকেই আপত্তি জানিয়ে বললেন, এটা একটা পাকিস্তান-মার্কা প্রস্তাব। জাতি থাকলেই তার একটা পিতা থাকতে হবে নাকি? যেমন আছেন জিন্নাহ সাহেব? সুতরাং সিদ্ধান্ত হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হবেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘সর্বাধিনায়ক’।’’

 

৩ মার্চ ১৯৭১ ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারে শেখ মুজিবকে যদিও স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তথাপিও সেখানে জাতির পিতা প্রসঙ্গটি লেখা হয়নি। কিন্তু উক্ত জনসভায় গৃহীত প্রস্তাবাবলির ৪ নাম্বার প্রস্তাবে শেখ মুজিবের নামের পাশে প্রথমবারের মত ‘জাতির পিতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ।

চার নাম্বার প্রস্তাবটি হলো : ‘‘এই সভা স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখিয়া সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে’’।

 

গনমোহন শেখ মুজিব ধীরে ধীরে যেভাবে বাঙালির মানস পটে বঙ্গবন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ঠিক তেমনি ভাবে এদিনের পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামের সাথে যুক্ত হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর