ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৪৯১

কমবে খরচ, বাড়বে সঞ্চয়, মেনে চলুন এসব বিষয়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৩৮ ২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে খরচ কমাতেই হবে। অন্তত আগামী কয়েক বছর। কারণ, ইতিমধ্যে বহু সংস্থা ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছে।  অনেকে বেতন দিচ্ছেন ২০-৫০ শতাংশ কেটে। 
আগামী দিনে বেশ কিছু ছোট ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে, লালবাতি জ্বলবে বহু নামজাদা প্রতিষ্ঠানে-এর ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উপরন্তু কমছে সুদের হার। ফলে যারা এটির ওপর নির্ভর করে সংসার চালান, তাদের ব্যাপক দুর্গতি অপেক্ষা করছে।

মূলকথা, ঘোরতর আর্থিক মন্দার হাত এড়িয়ে কেউই আর বাঁচতে পারবেন না। কাজেই বিপদ বেড়ে যাওয়ার আগেই খরচের হাত কমান।

কীভাবে কমাবেন
•  যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খরচ করুন। আপাতত সমস্যা নেই বলে শৌখিন জিনিস কিনে অর্থের অপচয় করবেন না। কাল কেমন দিন আসছে কে বলতে পারে!
•  গত দুই মাসে ঘরোয়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। সেটা বজায় রাখুন। তাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, খরচও কমবে। এমনিতেই এখন বাইরে খাওয়া ঠিক নয়। কে কীভাবে বানাচ্ছে, কীভাবে পরিবেশন করছে, তা জানা নেই। সেখান থেকেও ঘরে আসতে পারে কোভিড-১৯।
•  বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যান। অফিস ক্যান্টিনে খাওয়া নিরাপদ নাও হতে পারে। খরচের ব্যাপারও আছে।
•  জামাকাপড় যতটুকু না কিনলেই নয়, ততটুকুই কিনুন। প্রথমত টাকা বাঁচবে। ট্রায়াল রুম থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে না। এমনিতেই আগামী বছর দুয়েক উৎসব-অনুষ্ঠানে লাগাম থাকবে। কাজেই যা আছে, তাই দিয়ে কাজ চালিয়ে নিন।
• রূপচর্চার পেছনে বেশি খরচ করার দরকার নেই। মুখের অর্ধেক ঢাকা থাকবে মাস্কে, মাথা ঢাকা থাকবে টুপি বা ওড়নায়। পার্লারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে ভয় আছে। এ থেকে প্রাণঘাতী ভাইরাসের আশঙ্কা আছে। কাজেই মা-চাচীরা ঘরোয়া রূপটানে ভরসা রেখে চলুন। স্নান করতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন বেসন আর দই মিশিয়ে মুখে মাখতে পারেন। চুল কাটাতে ২-৩ মাসে একবার যেতে  পারেন পার্লারে। এর বেশি না যাওয়াই ভালো।
• উপহারের বাজেট কমিয়ে দিন। উৎসবে-অনুষ্ঠানে উপহার দেয়া-নেয়ার বদলে যারা খেতে পাচ্ছেন না বা যাদের মাথায় ছাদ নেই, তাদের জন্য কিছু করুন। এতে মনও ভালো থাকবে।
• আপাতত বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান মুলতবি রাখুন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা জমানোর চেষ্টা করুন।
 

টাকা জমান
• রোজগারের ৫-১০ শতাংশ অন্তত জমান। শেয়ার মার্কেট এখন খুব নড়বড়ে। কাজেই খুব অভিজ্ঞ না হলে ওই রাস্তায় না যাওয়াই ভালো। রেকারিং ডিপোজিট মোটের ওপর নিরাপদ। সেখানে টাকা রাখতে পারেন। সরাসরি মাইনে থেকে তা কেটে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
• স্বাস্থ্যবিমায় বিনিয়োগ করুন। যত বেশি করা সম্ভব। থাকলে টপ-আপ করুন নিয়মিত। এতে বর্ধিত চিকিৎসা-খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন।
• মাইনে পাওয়ার পর প্রথমেই বাড়ি ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, স্কুলের মাইনে ইত্যাদি মিটিয়ে দিন।
•  যে টাকা রইল, সেটার ১০ শতাংশ সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা রাখুন। বছর শেষে প্রিমিয়াম দিতে বা কোনও দরকারে কাজে লাগবে।
• বাকি টাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করুন। প্রতি সপ্তাহে এক ভাগ খরচের জন্য বরাদ্দ করুন। বাজেট এমনভাবে করুন, যাতে খরচ কুলিয়ে যায়।
• সপ্তাহ শেষে বাজেটের সঙ্গে খরচের হিসাব মেলান। দেখুন কোথায় কম-বেশি হয়েছে। বেশি খরচ করে ফেললে ভেবে দেখুন সেটা এড়ানো যেত কি না।
• কম খরচ করলে উদ্বৃত্ত টাকায় একদিন একটু ভালো-মন্দ খান অথবা কোনও শখ পূরণ করুন।
• এভাবে চললে মাসের শেষে কিছু টাকা বাঁচার কথা। সেই টাকা রেখে দিন আপৎকালীন খরচের জন্য।
এত মেপে চলতে পারবেন কি না ভেবে দুঃশ্চিন্তা হতে পারে অনেকের। বিশেষ করে যারা কখনও এত হিসাব করে চলেননি। তাদের জন্য রইল কয়েকটি টিপস।

বাজেট মেনে চলার টিপস
• সপ্তাহে একদিন বা দু'দিন বাজারে যান। জিনিস কিনুন হিসেব করে, ফর্দ মিলিয়ে। মন প্রস্তুত করে রাখুন, অহেতুক কিছু কিনবেন না। এরপর নিতান্ত প্রয়োজন না হলে আর বাজারমুখো হবেন না। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতেও কাজে দেবে এ পদ্ধতি।
• বিজ্ঞাপন দেখে বা সস্তায় পাচ্ছেন বলে কিছু কিনে ফেলবেন না।
• নিজেকে সামলাতে পারবেন না মনে হলে অনলাইনে শপিং সাইটে ঢোকা বন্ধ করে দিন।
•  বছরে একবার কিংবা দু'বার স্টক ক্লিয়ারেন্স সেল থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনুন।
• উপহার দেয়ার মতো জিনিসও এসময় কিনে রাখতে পারেন।
• ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল ও গ্যাসের বিল যাতে কম থাকে, সেই চেষ্টা করুন।
• যে ঘরে থাকবেন না, সেই ঘরের আলো, পাখা বন্ধ রাখুন। সারাদিন কম্পিউটার অন করে রাখবেন না।
• ওয়াশিং মেশিন চালান সপ্তাহে একদিন কিবা দু-দিন।
• মোবাইলে নিলে সবচেয়ে খরচ কম হবে, সেই প্ল্যান নিন।
• গ্যাসের বিল কমাতে বেশিরভাগ রান্না করুন প্রেশার কুকারে।
• গ্যাস জ্বালিয়ে সবজি কাটতে বসবেন না। রান্নার সব সরঞ্জাম তৈরি করে তবে গ্যাস জ্বালান।
• ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড রাখুন এমারজেন্সি দরকারের জন্য।
দরকার না হলে ট্যাক্সি বা ক্যাবে চড়বেন না। সকালে-বিকালে তেমন তাড়া না থাকলে আশপাশের কাজগুলো পায়ে হেঁটে সেরে ফেলুন। সাইকেল থাকলে আরও ভালো হয়।