ঢাকা, ০৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২২ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৭২৩

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি রোধে যা করতে পারে সরকার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৫ ২২ জুলাই ২০১৯  

সাভারে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার অজ্ঞাতনামা এক নারী রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে কলেজ রোড এলাকায় শনিবার গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন।

সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে এমনিতেই গুজব চলছে। এর মধ্যে সেই নারী ওই এলাকায় নতুন ছিলেন। যার কারণে আশেপাশের লোকজনের সন্দেহের মুখে পড়েন তিনি। তবে এখনো তার পরিচয় জানা যায়নি।

কেরানীগঞ্জের খোলামুড়া এলাকায় গত বৃহস্পতিবার গণপিটুনির শিকার অজ্ঞাতনামা আরেক জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের জুন পর্যন্ত ৬ মাসেই গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৩৬ জন। আর গত চার দিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন।

সংগঠনটির কর্মকর্তা নিনা গোস্বামী বলেন, বিভিন্ন কারণে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে থাকলেও সম্প্রতি গুজবের কারণে তা বেড়েছে। জুন মাসের মধ্যবর্তী থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত হওয়া গণপিটুনির পেছনে কাজ করেছে গুজব।

তিনি বলেন, এসব গুজব অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারের পক্ষ থেকে তড়িত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল। গুজব নিয়ে সরকার অনেক তাৎক্ষণিক একটা পদক্ষেপ নিতে পারতই। সরকারের তো একটা দেখি-দেখছি এ ধরণের একটা বিষয় প্রশাসন থেকে ছিল। তারা ভেবেছিল যে এটা নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে হয়তো।

মিস গোস্বামী বলেন, এখন তো একেবারে ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে। প্রত্যেকে এখন ভয় পাচ্ছে স্কুলে যেতে। এমনকি অভিভাবকরা ভয় পাচ্ছে যেকোনও অভিভাবককে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলবে।

তার মতে, গণপিটুনি রোধে মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে তা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এগুলো সব মানুষের কাছে যাতে পৌঁছায় সেজন্য লাগাতারভাবে টিভিতে বিজ্ঞাপন যেতে পারে।

তিনি বলেন, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি যেমন এলাকার মেম্বার, কাউন্সিলর, স্থানীয় সরকার ও এমপিরা যদি এলাকায় জনসচেতনতামূলক কথা বলেন, এগুলো গুজব এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া অপরাধ। তারা আইনের আওতায় আসবে। তাহলে মানুষ ভয় পাবে এ ধরণের কিছুতে জড়ানোর আগে।

তবে গণপিটুনি ও গুজব প্রতিরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যে সমস্ত জায়গায় এ ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেখানে ইতিমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এগুলো ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ও হবে।

তবে আতঙ্ক এ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে সরকার কেন ব্যবস্থা নিল না - এমন প্রশ্নের উত্তরে মিস্টার মাহমুদ বলেন, সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজকের পরিস্থিতি আর ১০ বছর আগের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তবে সরকার গুজব ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অমূলক একটি গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো, পদ্মাসেতুতে শিশুদের বলি দেয়া এবং এজন্য শিশু অপহরণ করা হচ্ছে। এ গুজব ছড়িয়ে দেয়ার বিপক্ষে সরকার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণপিটুনি চরম অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। এজন্যই সরকার ইতিমধ্যেই সব জেলায় প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। টেলিভিশনে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার চালানো হয়েছে কিছুটা। আরো ব্যাপকভাবে করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছি।

ব্যাপক হারে প্রচারণার জন্য আগামী ৩১ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ড. হাছান বলেন, মানুষ যাতে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সেজন্য জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিভিসিসহ নানাভাবে প্রচারণা চালানো শুরু হয়েছে এবং আরো ব্যাপকতর করা হচ্ছে।