ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৩৪১

জীবন বাঁচাতে, অবকাশ উপভোগে ধনকুবেররা ছুটছেন শতকোটি টাকার দ্বীপে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:২২ ২৭ মে ২০২০  

সারাবিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এখন সবার জন্যই আতংক। জীবন বাঁচাতে নেয়া হচ্ছে নানা সতর্কতা। গোটা বিশ্বই এখন করোনাযুদ্ধে শামিল।

 

এ পরিস্থিতিতে সব অবকাশ যাপন কেন্দ্র বন্ধ। তাই বলে ধনীদের অবকাশ যাপন যে বন্ধ থাকছে না, তা বোঝা যায় ‘প্রাইভেট আইল্যান্ড’গুলোর চাহিদা হু হু করে বেড়ে যাওয়া দেখে।

 

ছোঁয়াচে রোগের ছায়া এড়িয়ে যে অল্প কিছু মানুষের পক্ষে বিপুল পরিমাণ খরচ বহন করা সম্ভব, তারাই এখন নতুন উৎসাহে এ বিলাসী পথ অন্বেষণ করছেন। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।

 

ভ্রমণখাত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মার্চ থেকেই সম্ভাব্য ক্রেতা ও ভাড়া নিতে সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের বেসরকারি মালিকানার দ্বীপে ঠাঁই নেওয়ার ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

 

অন্টারিও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রাইভেট আইল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী ক্রিস ক্রোলোউ জানান, মহামারীর আগে দিনে দ্বীপ ভাড়া বা বিক্রি সংক্রান্ত ১০০টা অনুসন্ধানের জবাব দেওয়া লাগত, আর এখন জবাব দিতে হয় গড়ে দেড়শ অনুসন্ধানের।

 

ক্রোলোউর কোম্পানির হাতে বিক্রি কিংবা ভাড়া দেয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে ৮০০’রও বেশি দ্বীপ আছে। যদিও সবগুলোর প্রতিই সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভাড়াটের আগ্রহ সমান নয়। বেশিরভাগেরই চাহিদা ক্যারিবীয় অঞ্চল কিংবা মধ্য আমেরিকার কোনো একটি দ্বীপ।

 

সম্ভাব্য ক্রেতা ও ভাড়া নিতে ইচ্ছুকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নাগরিকই বেশি বলেও ক্রোলোউ জানিয়েছেন।

 

“তারা চান সহজে যাওয়া যায় এমন কোনো জায়গা, এ কারণেই এশিয়া ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরেরগুলো বাদ পড়ে যাচ্ছে,” বলেছেন তিনি।


ক্রোলোউর মালিকানাধীন বেলিজের গ্লাডেন দ্বীপের কথাই ধরা যাক। কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত এ দ্বীপটির চাহিদা আকাশচুম্বী হতে থাকে।

 

গ্লাডেন এমনিতেই বেশ জনপ্রিয়, কিন্তু এখন চলতি বছরের বাকি সময়ের জন্যও দ্বীপটি ‘বুকড’ বলে জানান ক্রোলোউ।

 

এক একরের দ্বীপটির চারপাশে সবসময় চিকচিক করে ফিরোজা নীল সমুদ্র। মাত্র চারজনের থাকার ব্যবস্থা সম্বলিত এ দ্বীপে আসতে হয় নৌকায় চেপে। দ্বীপের যাবতীয় দেখভালের জন্য আছে চার কর্মচারী, যারা থাকেন পাশের অন্য একটি দ্বীপে। সবসহ গ্লাডেনে এক রাতের জন্য দুজনের ভাড়া শুরু হয় তিন হাজার ৬৯৫ডলার থেকে।

 

ভাড়া দেওয়ার ঘটনা যতটা সহজ ও নৈমিত্তিক, দ্বীপ বিক্রি করাটা ততটা নয়, বলছেন ক্রোলোউ।

 

নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের ওপর কামড় বসানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোম্পানি একটি দ্বীপও বিক্রি করতে পারেনি, পারেনি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের তাদের পছন্দের দ্বীপগুলো ঘুরিয়ে দেখাতে।

 

আছে দামের তারতম্যও। কানাডার একটি ছোট দ্বীপ যেখানে কেনা যায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে; সেখানে কয়েক হাজার একরের ক্যারিবীয় কোনো দ্বীপ, যাতে একটি বিশাল সুরম্য ভিলা থাকবে, তার জন্য পকেট থেকে খসতে পারে পারে ১৫ কোটি ডলারেরও বেশি।সঙ্গে যুক্ত হতে পারে নতুন কিছু যন্ত্রণাও।

 

“আপনি যদি দ্বীপে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, চুক্তি করতে হবে আমলাদের সঙ্গে। এছাড়া বাড়ি কেনা আর দ্বীপ কেনার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আপনি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন, তো সেটা আপনার,” বলেন ক্রোলোউ।

 

ব্রোকার এবং ভ্রমণখাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহুর্তে ক্যারিবীয় অঞ্চলের মধ্যে বাহামার দ্বীপগুলোই ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত।     

 

ডেমিয়েনোস সোথবিস ইন্টারন্যাশনাল রিয়েলটির ব্রোকার নিক ডেমিয়েনোস জানান, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর পাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাইভেট আইল্যান্ড কিনতে আগ্রহীদের অনুসন্ধানের পরিমাণ আগের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আগে তারা মাসে ১২ থেকে ১৫টি অনুসন্ধানের জবাব দিতেন, এখন দিতে হয় ৩০টিরও বেশি। 

 

এমনকি ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য রাখা দ্বীপগুলোর ভিউ-ও বেড়েছে অনেকগুণ।

 

“আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষ দ্বীপের সত্যিকারের অভিজ্ঞতা নিতে চায়। এখন আমরা কেবল ভার্চুয়ালি তা দেখাতে পারছি,” বলেছেন ডেমিয়েনোস।

 

সিএনএন বলছে, বাহামার দ্বীপগুলোর প্রতি ক্রেতাদের প্রবল চাহিদার আরও কিছু কারণও আছে। ক্রেতাদের এখানে আয়কর দিতে হয় না; দ্বীপগুলো যুক্তরাষ্ট থেকেও কাছাকাছি। এর পাশাপাশি বাহামা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল।

 

ডেমিয়েনোস জানান, বাহামার ২০টির মতো দ্বীপ এখন বিক্রির উপযোগী; যার অর্ধেকই গত বছর বাজারে এসেছে।  

 

দুই কোটি ৯০ লাখ ডলারের এক্সুমা কেইসের কথাই ধরা যাক। ৪৬ একর বিস্তৃত দ্বীপটিতে চারটি বাড়ি রয়েছে, শোবার ঘর ৮টি। আছে কর্মীদের থাকার জন্য তিনটি কটেজ, ৭০০ ফুট দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত; ক্রান্তীয় বৃক্ষরাজির পাশে হাঁটার পথ।

 

“এটা অনেকটা হোটেলের মতো, যেখানে আপনার যা প্রয়োজন সবই আছে। কেবল একটি স্যুটকেস নিয়ে আপনি এখানে চলে আসতে পারেন,” বলেন ডোমিয়েনোস।

 

এসব দ্বীপের কোনো কোনোটিতে বিমানবন্দরও রয়েছে। যেখানে ব্যক্তিগত ছোট বিমান নিয়ে চলে যাওয়া যাবে যে কোনো সময়ই। আবার ব্যক্তিগত ইয়টে নিয়েও যাওয়া সহজ।

 

কেবল রিয়েল এস্টেট কোম্পানিই নয়, ভ্রমণ সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোও কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাইভেট আইল্যান্ডের প্রতি মানুষের বিপুল চাহিদার আঁচ পাচ্ছে।

 
বিলাসবহুল ট্রাভেল নেটওয়ার্ক ভার্চুওসোর গ্লোবাল পাবলিক রিলেশনসের প্রধান মিস্টি বেলাস জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দ্বীপ ভাড়া নিতে আগ্রহীদের ‘ব্যাপক অনুসন্ধানের’ মুখোমুখি হচ্ছেন। কেবল তাই নয়, বাড়ছে বুকিংয়ের হারও।

 

“আমাদের পূর্বাভাস বলছে, সামাজিক দূরত্বের এ বিষয়টি সীমান্ত যতদিন বন্ধ থাকে তারচেয়েও বেশিদিন থাকবে। সাধারণত, এ সময়ে মানুষ পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ছাড়া অন্যদের থেকে দূরে থাকতে চায়। এক্ষেত্রে প্রাইভেট আইল্যান্ডই সব দিক থেকে সেরা বিকল্প,” বলেছেন তিনি।

 

একই মত নিউ ইয়র্কভিত্তিক এমবার্ক বিয়ন্ড ট্রাভেলের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক এজোনেরও।

 

“করোনাভাইরাসের এ নতুন দুনিয়ায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে একান্ত ব্যক্তিগত কথাটাই সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের ক্লায়েন্টরা বলছেন, তারা চান নিরাপদ ও আরামদায়ক এমন কোনো জায়গা, যেখানে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন।”