ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪৭০

ধর্ষক থেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন ঢাবি ছাত্রী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:০৮ ৬ জানুয়ারি ২০২০  

ধর্ষকের কবল থেকে নিজেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেও হার মানেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি। রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত সেই শিক্ষার্থীর নিজেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টার সেই চিত্র ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ব্যবহৃত সামগ্রী।
সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখান থেকে ১৫ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এগুলোর বেশিরভাগই ওই শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র। 
রাজধানীর ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে উত্তরার দিকে ১০০ গজ এগোতেই রয়েছে ফুটপাতের সৌন্দর্য বর্ধনের ফুল গাছের ঝোপ। সেখানে ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইখানে নিজেকে বাঁচাতে ধর্ষকের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয় বলে ঘটনাস্থল দেখে ধারণা করছে পুলিশ। ব্যস্ততম সড়ক হলেও সন্ধ্যার পর এই ফুটপাতে পথচারীদের তেমন যাতায়াত থাকে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, সড়কটি ব্যস্ততম হলেও এই ফুটপাতে মানুষের যাতায়াত কম থাকে। এই সড়কে গাড়ি চলাচল করে বেশি। ভিকটিম আমাদের কাছে একজনের কথা বলেছেন। আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি।
ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিমের শরীরে জখম রয়েছে। নিজেকে রক্ষা করতে তিনি চেষ্টা করেছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত হাতঘড়ি, চাবির রিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র, জুতা, ফাইল সেখানে পড়ে ছিল। এছাড়া তার ব্যবহৃত ইনহেলার ও ওষুধসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সেখানে। ঘটনাস্থলে কালো একটি জিন্স প্যান্ট পড়েছিল। এছাড়া সেখানে ছয়টি ফেন্সিডিলের বোতল  পড়েছিল, যেগুলো সাস্প্রতিক ও পুরানো বলে মনে করছেন আলামত সংগ্রহকারী পুলিশ কর্মকর্তারা।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে।
ডিসি সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় আলামত ও সোর্স নিয়োগ করে তদন্ত শুরু করেছি। সিআইডি ক্রাইম সিন ভিকটিমের বই, পরিধেয় কাপড় ও কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। ভিকটিমের ভাষ্য অনুযায়ী, ধর্ষক একজন।  বস্ততম সড়ক হলেও সেখানে মানুষ হাঁটা-চলা কম করে। ধর্ষক এটির সুযোগ নিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
তবে ঘটনাস্থলে ধর্ষকের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

ভিকটিম শিক্ষার্থীর এক সহপাঠী বলেন, তার শ্বাসকষ্ট সমস্যা রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী ভীষণ যন্ত্রণা পেতে হয়েছে। তার সাহসের কারণেই আজ আমরা তাকে ফিরে পেয়েছি। মানসিকভাবে শক্ত থেকে তিনি সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে চেয়েছেন।

এদিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে জানিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। সেই বিবরণীতে ভিকটিমের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা বলা হয়েছে। 
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তিনি জানিয়েছেন, ভিকটিমের গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঝোপঝাড়ের মধ্যে গাছের ডালের খোঁচার বেশকিছু আঘাত শরীরে দেখা গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে নামলে তাকে ফুটপাতে এক ব্যক্তি অনুসরণ করে এবং জোর করে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে ওই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হন। পরে তিনি তার বন্ধুদের সহায়তায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় ভিকটিমের বাবা ধর্ষণ মামলা করেছেন। মামলাটি পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব তদন্ত করছে।