ঢাকা, ০৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২২ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৮৫৩

নববধূর মুখে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার বর্ণনা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৮ ২৭ জুন ২০১৯  

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নেয়াজ রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে বুধবার  প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে, যা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। সেসময় রিফাতের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার।

ওই হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকের কাছে কয়েকজন যুবক রিফাতের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে উপর্যুপরি হামলা চালাচ্ছে। এসময় আয়েশা একাই দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

বিবিসি বাংলার কাছে তিনি ব্যাখ্যা করেন, সেই 'বিভীষিকাময়' অভিজ্ঞতার কথা। আয়েশা বলেন, আমার স্বামী আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। আমি অস্ত্রের মুখে পড়েও অনেক বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারি নাই।

তিনি বলেন, আমার আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল। আমি চিৎকার করছি, সবাইকে বলছি -ওরে একটু বাঁচান।কিন্তু কেউ এসে আমারে একটু সাহায্যও করে নাই।

গত এক বছর ধরে কলেজে আসা যাওয়ার পথে স্থানীয় এক যুবক উত্যক্ত করতো বলে অভিযোগ করেন আয়েশা। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি শুরু থেকেই বিয়ে করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। অন্যথায় তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।

তিনি ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, আমাকে হুমকি দিতো - কথা না বললে, বলতো মাইরে ফালাবে। তার সঙ্গে কথা বলতে হইবে, ঘুরতে যাতি হইবে। নাইলে বলতো তোমার ভাইরে মাইরে ফালাবো। তোমার বাপেরে কোপাবো। এইসব কথা বলতো।

মিসেস রিফাত বলেন, একবার আমাকে রাম দা ধরসিলো। পরে আমি ভয় পাইয়া বাসায় আলাপ করলাম।

পরে আয়েশার পরিবার রিফাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দুইজনের বিয়ের ব্যবস্থা করে। গেল দুই মাস আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। রিফাতের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ব্যাপারে দুই পরিবারই জানতেন।

এদিকে বিয়ের পরেও আয়েশার ওপর হয়রানি বন্ধ হয়নি। তাকে সামনা সামনি বা ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে ওই অভিযুক্ত যুবক। ক্রমাগত হুমকি ধমকির মুখে তিনি কোনও ধরণের আইনি সহায়তা চাওয়ার সাহস পাননি। আয়েশা বলেন, আগে থেকেই সবাই জানে যে সে মানুষ কোপাইতো... ওরে সবাই ভয় পাইতো। আমিও ওই ভয়েতে পুলিশের কাছে যাই নাই।

কয়েকদিন রিফাতের সঙ্গে ওই যুবকের রাস্তায় কথা কাটাকাটি হয় বলে জানান তিনি। সবশেষ গতকাল তারা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে থেকে তিনজনকে চিনতে পারেন আয়েশা। পরে পুলিশের কাছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাদেরসহ বাকি আর যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের শিগগির গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে পুলিশ তাকে আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বার বার একটা দাবিই জানান, আর সেটা হল দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার যেন নিশ্চিত হয়।

আয়েশা আক্তার বলেন, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এদের সবার যেন ফাঁসি হয়। এই ঘটনায় চন্দন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।

নিহতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ গত রাতে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই একজনকে গ্রেফতার করেন। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অভিযুক্ত বেশিরভাগের বিরুদ্ধে আগের এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের কয়েকজন আগেও কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কারও পরিচয় প্রকাশ করা হবে না বলে জানান পুলিশ সুপার।