ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৫৭৬

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা : ১৬ আসামির ফাঁসির রায়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:২০ ২৪ অক্টোবর ২০১৯  

অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত। 

হত্যাকাণ্ডের ৭ মাসের মাথায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ছিলেন নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের  হুমুকদাতা।

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।

আসামি কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ও জাবেদ হোসেন ছিলেন নুসরাতের সহপাঠী। একসঙ্গেই তারা আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাদেরও সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে আদালতে। 

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাদীপক্ষের কৌঁসুলি এম শাহজাহান সাজু এই রায়কে বলেছেন দৃষ্টান্তমূলক। ৬২ কার্যদিবস শুনানির পর এই রায় দেওয়া হয়, যাকে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘নজিরবিহীন’বলেছেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরারও এই রায়ে সন্তোষ জানিয়ে দ্রুত আসামিদের সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। নুসরাতের ভাই ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান দ্রুত বিচার নিশ্চিত করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।

এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের  প্রধান ডিআইজি বনক কুমার মজুমদার বলেন, আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম সেটাই হয়েছে। আমরা পেশাদারিত্বের সাথে মেধা দিয়ে কাজ করেছি। প্রত্যেকের পরিবারে নুসরাত আছে, আমরা সে ভাবনা নিয়েই কাজ করেছি।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২১ মিনিটে চিারক রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মানুষের সামনে আনার জন্য সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ। রায় শুনে আসামিরা কান্নায় ভেঙে পড়ে।

বিচারক মো. মামুনুর রশিদ বেলা ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে রায় পড়া শুরু করেন। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের চুম্বক অংশ পাঠ করেন তিনি। এসময় ১৬ আসামিকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। 
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।

গেল ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারক এই দিন ধার্য করেন।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। 
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

১০ এপ্রিল থানা থেকে মামলাটি  পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৯ মে এ মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।


এদিকে, রায়কে ঘিরে বুধবার রাত থেকে নুসরাতদের বাড়িতে পাহারা জোরদার করা হয়েছে।  নিয়োজিত আগের তিনজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আরও ৯ সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত লোকজনও রেজিস্ট্রার খাতায় সই না করে ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না। গত ৭ এপ্রিল থেকে বাড়িটিতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলা সদর ও সোনাগাজীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়। এছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দেয়।