ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৫৪

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন করায় ছাত্রীর বই ফেলে দিলেন এমপির লোক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৮ ৩০ জানুয়ারি ২০২০  

নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন করায় এক শিশু শিক্ষার্থীর গানের বই কেড়ে নিয়ে ছুড়েঁ ফেলে দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম এমপির সফরসঙ্গী ও বিএনপি নেতা লতিফুর রহমান ওরফে বিলাস সরদার।


এ দিকে মঞ্চে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মঙ্গলবার রাতে ধরমপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে লতিফুর রহমান বিলাস সর্দার, আজিজুর রহমান সাহজাহানের ছেলে সাহবাজ ও বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের মুলতান আলী আইভির ছেলে আসলাম বেগকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে পুলিশ।


গত সোমবার ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা ইউসুফ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন শুরু করে।


এ সময় ওই ছাত্রী ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানটি গাইতে শুরু করলে একপর্যায়ে এমপির সফরসঙ্গী বিলাস সরদার মঞ্চে উঠে তার গানের ডাইয়েরিটি কেড়ে স্টেজের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন। তার মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেন। এ সময় মেয়েটি হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নেই।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম। প্রথম পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময় এমপি আমিনুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তার অনুসারীরাও তার সঙ্গে অবস্থান করছিল।


ইসরাত জাহান গানটি শুরু করা মাত্র বিলাস সরদার সেখান থেকে মঞ্চে এসে গান গাইতে বাঁধা দিতে প্লেষ্ট্যান্ডে থাকা ডায়েরি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেয়।


অভিযোগ আছে এই বিলাস সরদার এক সময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ভোলাহাট উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। চলতি সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি থেকে আমিনুল ইসলাম নির্বাচিত হলে তার ঘনিষ্ঠজন হয়ে ওঠে এই বিলাস সরদার।


এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার আশরাফুল হক চুনু জানান, ঘটনাটি নিয়ে আমি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। সবজা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে আমাদের একজন কর্মী জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে ভাষণ দিলেও চড়াও হয় এমপি আমিনুল ইসলামের অনুসারীরা।


এ ঘটনা আমি একটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পরে ওসি আমাকে জানান, এ ঘটনায় বাদী পরিবর্তন করে মেয়েটির পিতাকে বাদী করা হয়েছে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাস, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই” গানটি গাওয়ার মাঝপথে লতিফুর রহমান বিলাস সর্দার ওই ছাত্রীর কাছ থেকে মাউথপিস কেড়ে এবং ডায়রিটি ছুঁড়ে ফেলে ছাত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর লোকজন দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।


এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আজগার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক এবং শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছে এবং ঘটনাটি আপোষ মীমাংসা হয়ে গেছে।


ভোলাহাট ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আলহাজ্ আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিলাস ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, ফেসুবুক খুঁজে দেখুন তাহলে প্রমাণ পাবেন। তার পিতা বিএনপি করে। আমি বিলাসকে চিনিও না।


আমি ঘটনার বিষয়টি জানি না, আমি খাওয়া-দাওয়ার পর সেখান থেকে চলে আসি। পরে রাত ১০টার দিকে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো একেবারে মিথ্যা। আমিও চাই আপনারা সত্যটা বের করুন।


এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোলাহাট উপজেলা প্রেসক্লাব চত্ত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক চুনু। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা অপরাধে তার দৃষ্টান্তামূলক শাস্তিও দাবি করা হয়।