ঢাকা, ০৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২১ কার্তিক ১৪৩২
good-food
১১৩৫

শত কোটি টাকার ক্যাসিনো কারবারিদের জরিমানা ২০০ টাকা!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৪০ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

অবৈধ ক্যাসিনোকে কেন্দ্র করে মাদক, অস্ত্র আর অর্থ পাচার। অপরাধ ভয়াবহ হলে কী হবে। শাস্তির তেমন সুযোগ নেই।  
গেল এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকায় কিছু এলাকায় ক্যাসিনো বন্ধ করা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও জুয়ার আধুনিকতম এই সংস্করণের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের প্রচলিত জুয়া আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সুযোগ একদমই নেই। কারণ, ক্যাসিনো চালালে কি ধরনের শাস্তি দেয়া হবে সে বিষয়ে দেশে কোনও আইন নেই। মানি লন্ডারিংসহ অন্য অপরাধ গণ্য না করা হলে এবং নতুন আইন করা না হলে ‘ক্যাসিনো কাণ্ডে’জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে ১৮৬৭ সালের ‘প্রকাশ্যে জুয়া আইনে’। 
ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে জারি করা ১৫২ বছরের বৃদ্ধ এই আইনটি এখনও অপরিবর্তিত থাকায় এর শাস্তি এখন হাসির খোরাকের মতো। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড! ক্ষেত্রবিশেষে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে। যাদের কোটি কোটি টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে বা পরের অভিযানে অর্থসহ শত শত ভরি সোনা পাওয়া গেছে, আইনটিতে তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে এই শাস্তি! পাড়ার নাইন কার্ড খেলা বখাটে আর ক্যাসিনো পরিচালনাকারীদের তফাৎ করারও সুযোগ নেই এই আইনে।
হাউজিসহ বিভিন্ন জুয়া খেলা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে একেক নামে রয়ে গেছে। এ কারণে ব্রিটিশ আমলে জুয়াড়িদের ভয় দেখাতে এবং স্বাভাবিক জীবনে সহজে ফেরাতে ১৮৬৭ সালে প্রকাশ্যে জুয়া আইন করা হয়েছিল। এরপর ভারত-পাকিস্তান বিভাগ এবং আরও পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে ৪৮ বছর পার হলেও এই আইনটি আর সংশোধন হয়নি। ফলে ব্রিটিশ আমলের ২০০ রুপিতে যেখানে ৫০ মণের বেশি ধান কেনা যেত, সেই ব্রিটিশ রুপিই দেশভাগের কারণে পাকিস্তানি রুপিয়া হয়ে বাংলাদেশি টাকা হিসেবে পরিবর্তনের পথ পাড়ি দিলেও এই আইনে শাস্তির অঙ্কের পরিমাণটা ওই ২০০-ই রয়ে গেছে। এখনও সেই শাস্তি ২০০ টাকা মাত্র। সরকারের পর সরকার বদলালেও আইনটিতে আসেনি কোনও সংস্কার। এটিই দেশে জুয়া বন্ধের একমাত্র আইন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ক্যাসিনো খেলার গুটি ১৮৬৭ সালের জুয়া আইন দিয়ে ২০১৯ সালের ক্যাসিনো অপরাধের বিচার তাহলে কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্ন করা হলে আইনজীবীসহ সমাজবিজ্ঞানীরা আইনটি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রযোজ্য অন্য আইনগুলোর সহায়তা নিয়ে এসব জুয়াড়ির ও জুয়া সংশ্লিষ্টদের বিচারের প্রস্তাব দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন,  ‘জুয়া খেলা শুধু একটি মাত্র অপরাধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক অপরাধ। যেমনটা, ক্যাসিনো নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ওঠায়, সেখানে প্রচুর অর্থের লেনদেন দেখা যাচ্ছে। তাই অন্যান্য অপরাধ রোধের চিন্তা থেকেই জুয়া খেলা নজরদারিতে আনা ও বন্ধ করা দরকার। সেক্ষেত্রে সরকারকেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা উচিত।’
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া রয়েছে।
আর ১৮৬৭ সালের প্রকাশ্য জুয়া আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় (বাংলাদেশের মধ্যে) যে কোনও ব্যক্তি যে কোনও ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসাবে অনুরূপ স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহার করতে দিলে এবং যে কেউ এসব স্থানকে ব্যবহারের দায়িত্বে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন অথবা যে কোনও সাহায্য করলে এবং ওইসব স্থানে যে কেউ জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদান করলে সে অভিযুক্ত হিসেবে অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা এবং অনূর্ধ্ব ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে ক্যাসিনোর সন্ধান মিলছে দেশের বিভিন্ন ক্লাবে। যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলছে গ্রেফতার কার্যক্রম। আর ক্যাসিনো চালানোর পেছনে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিদেশি কিছু নাগরিকের সম্পৃক্ততার তথ্যও উঠে এসেছে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশে জুয়া প্রতিরোধে একটি আইন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে দ্রুত বিচার করতে আইন করার দরকার রয়েছে। এখানে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক লেনদেন হওয়ায় এর সঙ্গে রাজস্ব বিভাগকে যুক্ত করতে হবে। এ ধরনের অপরাধ অন্যান্য অপরাধের থেকে ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যে আইন আছে সেটি যথেষ্ট নয়। তাই নতুন আইনের দরকার রয়েছে। সে আইনে জুয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দায়বদ্ধ করার বিধান রাখতে হবে।