ঢাকা, ১৮ অক্টোবর শনিবার, ২০২৫ || ৩ কার্তিক ১৪৩২
good-food
১৪

মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা জুলাই যোদ্ধা সংসদের

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১০:১৬ ১৮ অক্টোবর ২০২৫  

গত বছর গণ- অভ্যুত্থানে নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি ‘জুলাই সনদে’ পূর্ণাঙ্গভাবে যুক্ত না হওয়ায় আগামী রবিবার দেশের প্রতিটি জেলায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’।

 

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের ১২ নম্বর ফটকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মাসুদ রানা। এর আগে দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশি লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনাতেও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ রানা বলেন, “আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আগামী রবিবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা শহরের মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি আহ্বান জানাই— এটি কোনো দলের নয়, জনগণের আন্দোলন।

 

 

সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা এই রাষ্ট্রের জন্য জীবন দিয়েছি, কিন্তু আমাদের রক্তের স্বীকৃতি জুলাই সনদে নেই। সরকার আমাদের আত্মত্যাগের প্রতিও প্রতারণা করেছে। আমাদের রক্তের বিনিময়ে তৈরি হওয়া সনদে আমাদের স্বীকৃতি থাকা উচিত ছিল।”

 

শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করা হয়। সংশোধনের আগে দফাটিতে উল্লেখ ছিল, ‘গণ–অভ্যুত্থানে আহত বা নিহতদের রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ কিন্তু জুলাই যোদ্ধা সংসদসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর চাপের মুখে এটি পরিবর্তন করে লেখা হয়, ‘গণ–অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং আহতদের পুনর্বাসনের জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।’

 

তবে সংগঠটির নেতাদের অভিযোগ, এই পরিবর্তনেও ছিল “চাতুর্যপূর্ণ শব্দচয়ন”, যেখানে ‘শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধা’ শব্দ দুটি বাদ দিয়ে দাবি–বাস্তবায়নের বিষয়টিকে অস্পষ্ট করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, “আমাদের স্বীকৃতি নিয়ে শব্দের খেলায় মেতেছে সরকার ও কমিশন।”

 

মাসুদ রানা বলেন, “আমরা এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করেছি। প্রতিটি জেলায় আহত ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাবিনামা জমা দিয়েছেন। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। ১৪টি মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, এমনকি প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছেও আমাদের দাবি পাঠানো হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যারও আমাদের দাবি দেখেছিলেন, কেবল একটি শব্দ সংশোধন করতে বলেছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে দাবিগুলো সনদে যুক্ত হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, আমাদের কোনো দাবি বাস্তবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”

 

 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, “সংসদ ভবনের গেটে আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আমরা তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলাম, সকাল ১০টা পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে, কোনো বিশৃঙ্খলা করব না। কিন্তু সকাল গড়াতেই তারা কোনো আলোচনা ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালায়। পেছন দিক থেকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে, কেউ বুঝে ওঠার আগেই টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। যাঁরা মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের বুট দিয়ে পাড়ানো হয়েছে। এমনভাবে আক্রমণ করা হয়েছে যেন আমরা মানুষ নই, কোনো প্রাণী।”

 

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ এখনো শেখ হাসিনার আমলে তৈরি হওয়া মানসিকতায় চলছে। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ পুলিশে এখনো ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি সদস্য হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া। তাদের ডিএনএ টেস্ট করে দেখা হয়েছিল—তাদের বংশে আওয়ামী লীগ আছে কি না। তাই এই বাহিনী এখনো দলীয় সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত। জুলাই বিপ্লবের পরেও তারা নিজেদের চরিত্র বদলায়নি। এই বাহিনী সংস্কার না করলে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।”

 

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে মাসুদ রানা ঘোষণা দেন, “রোববার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা শহরের মহাসড়কে আমরা অবরোধ পালন করব। সরকার এখনই যদি আমাদের দাবির বাস্তবায়নের ঘোষণা না দেয়, তাহলে এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে। জুলাই আন্দোলনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।”

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর