ঢাকা, ১২ অক্টোবর রোববার, ২০২৫ || ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
good-food

গুমে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৪৮ ১২ অক্টোবর ২০২৫  

আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চার্জশিটে নাম আসা কর্মরত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) থাকা আরও একজন কর্মকর্তাও হেফাজতে রয়েছেন।

 

তবে অভিযুক্তদের মধ্যে মেজর জেনারেল কবির নামে একজন কর্মকর্তা গত ৯ অক্টোবর থেকে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। শনিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

 

তিনি জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সেনাবাহিনী স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালের চার্জশিট বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে পায়নি সেনাবাহিনী।

 

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, “গত ৮ অক্টোবর আইসিটিতে প্রথম দুটি চার্জশিট জমা পড়ে। এরপর তৃতীয় আরেকটি চার্জশিট জমা পড়ে। আমরা টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চার্জশিট জমা পড়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটি ছিল গুম সংক্রান্ত, যেখানে ডিজিএফআইয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেকটি ছিল র‍্যাবের টিএফআই সেল নিয়ে এবং অন্যটি ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনা নিয়ে।”

 

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে তিনি বলেন, “সাথে সাথে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী পরোয়ানা আইজিপির কাছে চলে যায় এবং ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি।”

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চার্জশিটে আসা মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জন অবসরে, একজন এলপিআরে এবং ১৫ জন কর্মরত আছেন।

 

সেনাবাহিনীর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার কথা উল্লেখ করে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধান স্বীকৃত বাংলাদেশের সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ তারিখে কর্মরত ১৫ ও এলপিআরে থাকা ১ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য একটি আদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদেশে তাদের বলা হয়েছে ৯ তারিখে তারা যেন ঢাকা সেনানিবাসে সেনা হেফাজতে চলে আসে।”

 

তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি বা পুলিশও আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তারপরও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কর্মকর্তাদের হেফাজতে আসার জন্য আদেশ দিয়ে দেয়।”

 

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান, এটি সেনাবাহিনীর নিয়মিত অনুশীলনের অংশ। তিনি বলেন, “যাদের নামে অভিযোগ ওঠে, প্রথমে তাদেরকে আমরা হেফাজতে নিয়ে নিই। এরপর কোর্ট মার্শালের রায় অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।” 

 

তবে হেফাজতে আসার নির্দেশনা পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানান তিনি। “আমরা যাদেরকে হেফাজতে আসতে বলেছি, তাদের মধ্যে সবাই সাড়া দিয়েছেন কিন্তু শুধু একজন সাড়া দেননি। ওই কর্মকর্তা ৯ তারিখ পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি। তিনি হলেন মেজর জেনারেল কবির।”

 

নিখোঁজ মেজর জেনারেল কবিরের বিষয়ে তিনি বলেন, “১০ তারিখে আমরা তার সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। আমরা জানতে পারি, উনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আর বাসায় ফেরত আসেননি। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ, পরিবারের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।”

 

তার বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, “এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘ইলিগ্যাল অ্যাবসেন্ট’ (অবৈধ অনুপস্থিত) হিসেবে ঘোষণা করি। উনি যাতে অবৈধভাবে দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্য আমরা ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে সতর্ক করেছি। আমি নিজে তাদের মহাপরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি।”

 

গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি মামলায় চার্জশিট আমলে নিয়ে ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর মধ্যে র‍্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি রয়েছেন।

 

দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এছাড়া তার বেয়াই ও তৎকালীন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের নামও আসামির তালিকায় রয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে চাকরিরত এবং একজন এলপিআরে আছেন। এই ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জনকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং একজন পলাতক রয়েছেন।

অপরাধ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর