ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮০১

অভিনব প্রতারণা, টাকা ও ধর্ষণের নেশা

১৪ বছরে ২৮৬ বিয়ে!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৪৩ ২৪ নভেম্বর ২০১৯  

জাকির হোসেন ব্যাপারী। ডাক নাম রাব্বি। বিয়ে করেছেন ২৮৬টি। এ কাজটি সারেন মাত্র ১৪ বছরে! 
প্রথম বিয়ে করেন একুশ বছর বয়সে। এখন পয়ত্রিশ। বিয়ে আর প্রতারণার মধ্য দিয়েই চলছিল রাব্বির জীবন। কোনো চাকরি করেন না। করেন না ব্যবসাও। তবুও চলাচল করেন দামি গাড়িতে। দামি দামি পোশাক পরে আর পটু কথায় ভোলাতেন তরুণীদের। 
গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিত্যপুর থানার দূর্গাপুর। পিতার নাম মৃত মনির হোসেন। বর্তমান ঠিকানা আহসান মোল্লা রোড, আইচপাড়া, টঙ্গী। আর বিয়েটা করার আসল উদ্দেশ্য ধর্ষণ এবং টাকা কামানো। আর শুধু বিয়ে নয়, গোপনে ভিডিও ধারণ করে চালাতেন প্রতারণা ।
গেল বুধবার এক তরুণী প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন রাজধানীর তেজগাঁও থানায়। ওই মামলায় তেজগাঁও থানা পুলিশ রাজধানীর মনিপুরি পাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ তাকে দুদিনের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অকপটে স্বীকার করেন তার বিয়ে এবং প্রতারণার শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি।
তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, রাব্বি একজন প্রতারক। বিয়ে আর প্রতারণার মধ্যে দিয়েই চলছিল তার জীবন। তিনি কোনো চাকরি করেন না । করেন না ব্যবসাও। তবুও চলাচল করেন দামি গাড়িতে। দামি দামি পোশাক পরিধান আর পটু কথায় ভোলাতেন তরুণীদের। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দিতেন।  ২০০৫ সাল মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। এরপর থেকে প্রতি মাসেই তিনি একটি করে বিয়ে করেছেন। তার বিয়ে করা এক স্ত্রীসহ ( শাপলা বেগম) একটি চক্র আছে। তারপর শ্বশুর বাড়ি থেকে নানা কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেন। এটাই তার মূল ব্যবসা।
ওসি বলেন, মিরপুরের এক নারী রাব্বির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন , মামলা ২২(১১) ১৮। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আমরা তাকে করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছিলাম। রিমান্ড শেষে রবিবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি জানান, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। তাদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব বিয়ের খবর তিনি কোনো স্ত্রীকে জানতে দিতেন না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন।
পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে রাব্বির রয়েছে সিন্ডিকেট । সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন।
তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার জানান, সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন বাব্বি। অবশ্য এবার তিনি নিজেই ফাঁদে পড়েন, আগেভাগেই প্রতারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন রাব্বির উদ্দেশ্য।
ওই তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে গেল ৩১ অক্টোবর রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয়। এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে রাব্বি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর ৭ নভেম্বর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। নানা বিপদ বা সমস্যার কথা বলে রাব্বি ওই তরুণীর কাছ থেকে এরইমধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।
ওসি জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে রাব্বির তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ত্রিনশট  ও ভিডিও ক্লিপ।
তেজগাঁও থানায় তরুণীর দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি স্বীকার করেছেন, বিয়ে করে টাকা পয়সা নিয়ে নিঃস্ব করে চলে যেতেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রাব্বির বেশ কয়েকজন সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এর মধ্যে ১৪ জন স্ত্রীর কাবিননামাসহ কাগজপত্র পেয়েছি।