ঢাকা, ১০ নভেম্বর সোমবার, ২০২৫ || ২৬ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৩৪

ফ্রিজে ডিম কতদিন ভালো থাকে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১৫ ১০ নভেম্বর ২০২৫  

সকালের নাশতা থেকে শুরু করে উৎসবের কেক, সব জায়গাতেই অপরিহার্য এক উপাদান হলো- ডিম। প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর এই প্রাকৃতিক পাওয়ারহাউস আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি প্রধান অংশ। কিন্তু ডিম ফ্রিজে রেখে দিলে সেটি কতদিন পর্যন্ত তাজা থাকবে, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন।  আপনি কি শুধু প্যাকেটের 'বেস্ট বাই' তারিখ দেখে কয়েকদিন পরেই ফেলে দেন? যদি আপনার উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তবে জেনে রাখুন, আপনি আসলে টাকা নষ্ট করছেন! অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, ডিমের মেয়াদ পেরিয়ে গেলে কেন ফেলব না?

 

সিএনইটি-র একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গড়পড়তা একজন আমেরিকান বছরে প্রায় ১,৫০০ ডলার মূল্যের খাবার নষ্ট করেন, আর ডিম সেই তালিকার অন্যতম! আসলে “বেস্ট বাই” মানেই ডিম খারাপ হয়ে গেছে, এমন নয়। ডিম সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এর স্বাদ এবং নিরাপত্তা দুটোই বজায় রাখা সম্ভব।

ফ্রিজে ডিম কতদিন ভালো থাকে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ডিম সাধারণত ফ্রিজে তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে, ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের সদস্য এবং অ্যাকুয়াল্যাব বাই অ্যাডিয়াম-এর প্রধান খাদ্য বিজ্ঞানী জ্যাকারি কার্টরাইট জানান, "এই 'বেস্ট বাই' তারিখের পরেও ডিম প্রায় এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত খাওয়ার জন্য নিরাপদ থাকে, যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।"

 

ডিমের সতেজতা বাড়ানোর কিছু উপায় বলেছেন কার্টরাইট, ডিম সবসময় তার আসল কার্টনে রাখা উচিত এবং "মোটা দিকটা নিচের দিকে মুখ করে রাখুন, যাতে ডিমের বায়ু কোষ উপরে থাকে। এতে আর্দ্রতা কমে যায় এবং কুসুম মাঝখানে থাকে।" এছাড়াও, ডিম ফ্রিজের দরজায় না রেখে সবচেয়ে ঠান্ডা অংশে রাখা উচিত, কারণ দরজার তাপমাত্রা ওঠানামা করে। খোসা ছাড়ানো সিদ্ধ ডিম ফ্রিজে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।

কেন ডিম ফ্রিজে রাখতে হয়?

আমেরিকায় ডিম ধোয়ার সময় এর প্রাকৃতিক আবরণটি তুলে ফেলা হয়, যা ব্যাকটেরিয়া ঠেকায়। তাই সেগুলো ফ্রিজে না রাখলে স্যালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ইউরোপ বা এশিয়ার অনেক দেশে কিন্তু ডিম ধোয়া হয় না, তাই সেগুলো ঘরের তাপমাত্রাতেই রাখা হয়।

 

একবার ডিম ফ্রিজে রাখলে আবার বাইরে রাখা উচিত নয়, কারণ তাতে ঘাম জমে এবং ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়ায়।

ডিম কি ফ্রিজে জমিয়ে রাখা যায়?

হ্যাঁ, ডিম ফ্রিজ করা যায়, তবে খোসাসহ নয়। ডিম ফ্রিজ করার একটি উপায় হলো সেগুলোকে ভেঙে ফেটিয়ে ফ্রিজ করা। অথবা আপনি ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করেও ফ্রিজ করতে পারেন। ইউএসডিএ -এর মতে, ডিমের সাদা অংশ ফ্রিজ করার জন্য বেশি ভালো, কারণ এর টেক্সচার একই থাকে। তবে, যদি আপনি কুসুম ফ্রিজ করতে চান, তবে তার সাথে লবণ এবং কর্ন সিরাপ বা চিনি যোগ করতে হবে, যা এর সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আলাদা আলাদা ডিম আইস কিউব ট্রে বা মাফিন প্যানে ফ্রিজ করা যেতে পারে এবং এগুলো এক বছর পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো থাকে। আপনি স্ক্র্যাম্বলড ডিম বা এগ বাইট তৈরি করে দুই থেকে তিন মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।

ডিম ভালো আছে কিনা, তা পরীক্ষা করার পদ্ধতি

ডিম ভাঙার আগে যদি আপনি পরীক্ষা করতে চান যে ডিমটি ভালো আছে কিনা, তাহলে একটি সহজ ফ্লোট টেস্ট করতে পারেন।

প্রথমে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিন, তাতে ডিমটি আলতো করে ফেলুন।

 

যদি ডিমটি ডুবে যায় এবং একপাশে হেলে থাকে, তবে এটি খাওয়ার জন্য পুরোপুরি ভালো আছে। 

যদি ডিমটি ডুবে যায় কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলেও এটি খাওয়ার জন্য ঠিক আছে, তবে এটি একটু পুরনো ডিম এবং দ্রুত ব্যবহার করা উচিত। 

তবে, যদি ডিমটি সঙ্গে সঙ্গে পানির উপরে ভেসে ওঠে, তাহলে সেটি নষ্ট হয়ে গেছে এবং ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিমের ভেতরে বাতাস জমে, যা তাকে হালকা করে ভাসিয়ে দেয়।

ডিম ফাটানোর পরও লক্ষ রাখুন, যদি তীব্র গন্ধ হয় বা কুসুমে গোলাপি, সবুজ বা চকচকে রঙ দেখা যায়, তাহলে সেটি ফেলে দিন।

এছাড়াও ডিমে সালফারের মতো গন্ধ ডিম নষ্ট হওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ। ডিমের সাদা অংশ বা কুসুমে গোলাপী, সবুজ বা উজ্জ্বল রঙের মতো অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে বুঝতে হবে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়েছে। 

ডিম পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কার্টনের একটি ডিম পরীক্ষা পাস করলেই যে সব ডিম ভালো থাকবে, এমন কোনো কথা নেই। প্রতিটি ডিম রান্না করার আগে আলাদাভাবে পরীক্ষা করুন এবং ডিম ভাঙার পর গন্ধের দিকে মনোযোগ দিন।

মেয়াদোত্তীর্ণ ডিম খাওয়া কি খারাপ?

বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, ডিমের প্যাকেটের 'বেস্ট বাই' তারিখটি একটি নির্দেশিকা মাত্র, কোনো কঠোর নিয়ম নয়। সুতরাং, একটি মেয়াদোত্তীর্ণ ডিম খাওয়া খারাপ নাও হতে পারে, যদি আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে এটি নষ্ট হয়নি।

 

ডিম ভালো আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে, সহজ ফ্লোট টেস্ট করুন, ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুমে কোনো অদ্ভুত রঙ আছে কিনা দেখুন এবং কোনো সালফারের মতো গন্ধ আছে কিনা তা শুঁকে দেখুন। যদি আপনার কোনো ডিম এই পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটিতেও ফেল করে, তাহলে সেটিকে খাবারের বর্জ্যে ফেলে দিন; যদি পাস করে, তাহলে সেগুলো খাওয়ার জন্য নিরাপদ। তবে অবশ্যই, যত দ্রুত সম্ভব ডিম খাওয়া ভালো।

ডিম নষ্ট হওয়া মানে শুধুই খাবার নয়, অর্থেরও অপচয়। তাই “তারিখ পেরিয়েছে” ভেবে তাড়াহুড়া করে ফেলে দেবেন না। একটু পরীক্ষা করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এই ছোট্ট খাবারটি আপনার ফ্রিজে সপ্তাহের পর সপ্তাহ টাটকা থাকবে।