ঢাকা, ২৪ অক্টোবর শুক্রবার, ২০২৫ || ৯ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৬৯

স্বর্ণের সঙ্গে রুপার দামেও ভয়াবহ ধস

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:৫০ ২২ অক্টোবর ২০২৫  

টানা ঊর্ধ্বগতির পর বিশ্ববাজারে মূল্যবান ধাতুর বাজারে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। স্বর্ণ ও রুপার দামে দেখা গেছে বছরের সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন, যা মূল্যবান ধাতুর সাম্প্রতিক র‍্যালিকে কার্যকরভাবে থামিয়ে দিয়েছে।

 

বুধবার প্রকাশির ইয়াহু ফাইনান্স এর প্রতিবেদন অনুসারে, স্পট গোল্ডের দাম একদিনে ৬.৩ শতাংশ কমে প্রতি ট্রয় আউন্স ৪,১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা ২০১৩ সালের পর একদিনে সবচেয়ে বড় পতন। অন্যদিকে, রুপার দামেও ৮ শতাংশের বেশি ধস নেমেছে, যা ২০২১ সালের পর সবচেয়ে বড় দৈনিক দরপতন।

 

বাজার বিশ্লেষকরা এই আকস্মিক দরপতনের পেছনে একাধিক কারণকে চিহ্নিত করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা, ডলারের মান বৃদ্ধি এবং টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর অনুযায়ী বাজারের ‘ওভারবট’ বা অতিরিক্ত ক্রয় পরিস্থিতি।

 

ট্রেড নেশন-এর সিনিয়র মার্কেট বিশ্লেষক ডেভিড মরিসন বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বর্ণের দাম কয়েকবার ৪,৪০০ ডলারের ওপরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রতিবারই প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন , “এখন মূল প্রশ্ন হলো, এই পতন কি দীর্ঘ সময়ের র‍্যালির পর একটি প্রয়োজনীয় সংশোধন, নাকি এটি কেবল অল্প সময়ের জন্য একটি বিরতি।” মরিসনের মতে, স্বর্ণের জন্য পরবর্তী সাপোর্ট রয়েছে ৪,০০০ ডলারের কাছাকাছি। তবে ক্রেতারা ৪,২০০ ডলারের আশেপাশে আবার সক্রিয় হতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

গত শুক্রবার যখন স্বর্ণের দাম সাময়িকভাবে ১.৫% কমে যায়, তখন অনেক বিনিয়োগকারী একে ‘ডিপ’ কেনার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেন। অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া স্বর্ণের ঐতিহাসিক উচ্চতার মধ্যে এটিই ছিল প্রথম উল্লেখযোগ্য সংশোধন।

 

তবে সব বিশ্লেষক এই পতনকে বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন না। সেভেনস রিপোর্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা টম এসায়ে মনে করেন, ‘এটা কেবল পথের একটি ছোট বাধা।’ তিনি বলেন, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, প্রকৃত সুদের নিম্ন হার, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন সরকারের অচলাবস্থার মতো বিষয়গুলো স্বর্ণের জন্য এখনো ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।”

 

এর আগে আগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয় এবং স্বর্ণভিত্তিক এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়ায় স্বর্ণের দাম প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছিল। বিনিয়োগকারীরা বাণিজ্য উত্তেজনা ও মুদ্রার অনিশ্চয়তা থেকে নিজেদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে মূল্যবান এই ধাতুর দিকে ঝুঁকেছিলেন।

 

একই সুরে কথা বলেছেন মার্কেটগেজ ডটকমের প্রধান কৌশলবিদ মিশেল শ্নাইডার। তার মতে, স্বর্ণের এই ঊর্ধ্বগতি থামাতে হলে মার্কিন ঋণের পরিমাণ হঠাৎ করে অনেক কমে যেতে হবে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, যার কোনোটিই নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

 

এই সাময়িক পতন সত্ত্বেও ওয়াল স্ট্রিটের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বর্ণের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী। যেমন, ব্যাংক অব আমেরিকা তাদের গ্রাহকদের স্বর্ণে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে, যেখানে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দাম প্রতি আউন্সে ৬,০০০ ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাকসও তাদের পূর্বাভাস বাড়িয়ে বলেছে, ২০২৬ সাল নাগাদ স্বর্ণের দাম ৪,৯০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। আরও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জেপিমরগান মনে করছে, ২০২৯ সালের মধ্যে এই মূল্যবান ধাতুর দাম প্রতি আউন্সে ৬,০০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।