ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৫৮৫

কোন মাছ সপ্তাহে ক’দিন খাবেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:০১ ২০ ডিসেম্বর ২০২০  

ইলিশ হোক বা কাতলা কিংবা রুই, মৃগেল। বাঙালি মাছের ভক্ত। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের পুষ্টি বৃদ্ধিতে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। একাধিক গবেষণা তাই বলছে। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আসুন দেখে নেওয়া যাক স্বাস্থ্য রক্ষায় এটি খাওয়ার উপকারিতা।

 

মস্তিষ্কের নিউরন কোষ কর্মক্ষম করে
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রাচীর (সেল মেমব্রেন) গঠন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা সপ্তাহে তিন দিন বা বেশি দিন মাছ খান, তাদের মস্তিষ্কের নিউরন কোষ অনেক বেশি সুগঠিত ও বেশি কর্মক্ষম। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছে (ইলিশ, গুরজাওলি, আড়, ম্যাকারেল, ভেটকি, পমফ্রেট, বোয়াল, চিতল, পাকা রুই ও কাতলা ইত্যাদি) থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, আয়োডিন, ভিটামিন ডি, ফসফরাসসহ নানা খনিজ মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করে। পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই সারা সপ্তাহে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব মাছ খেতে হবে।

 

প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ
শিশু থেকে বয়স্ক, এমনকি পেটরোগারাও নিশ্চিন্তে মাছ খেতে পারেন। এতে যথেষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন। এটি হলো খনিজ পদার্থ আর ভিটামিনের খনি। অনেকের ছোট মাছ খাওয়ার ঝোঁক আছে। ছোট মাছ বা শিঙি-মাগুর বেশি পুষ্টিকর-এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। মুরগি বা ছাগলের মাংসে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে, সেটার চেয়ে অনেক বেশি মাছে থাকে। যে কোলেস্টরলের ভয়ে ভীত থাকেন সবাই, প্রতিদিন মাছ খেলে সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এতে যে ফ্যাট থাকে সেটা সহজে দ্রবীভূত হয়ে যায়।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
মাছে এমন অনেক জরুরি উপাদান আছে যা শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন খেলে আরথারাইটিস ও ডায়বেটিসের মতো রোগ শরীরে থাবা বসাতে পারে না। নিয়মিত মাছ খেলে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছুটা কমে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর এক স্টাডি করা হয়েছে। যারা সপ্তাহে মাত্র একদিন মাছ খান, তাদের হার্টের অসুখের হার অন্যদের থেকে ১৫% কম। বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। নিয়ম করে মাছ খেলে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।

 

মানসিক অবসাদ কমায়
মাছে যে ভিটামিন ডি, ডিএইচএ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, সেগুলো সবটাই অ্যান্টি-ডিপ্রেশানের জন্য দারুণ কার্যকরী। প্রতিদিন খেলে শুধু শরীর নয়, মনও ভালো থাকবে। ইউরোপ বা আমেরিকার মতো দেশে সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বা বাঙালিদের মধ্যে সমুদ্রের মাছ অতটা জনপ্রিয় নয়। তবে উপকূল অঞ্চলের মানুষ সমুদ্রের মাছ খায়। বাঙালিরাও যে অল্প বিস্তর সামুদ্রিক মাছ খান না, তা নয়। রোজকার পাতে না থাকলেও মাঝে মধ্যে এই মাছ খাওয়া হয়। সমুদ্রের মাছ বলতেই প্রথমেই মাছের রাজা ইলিশের কথাই মনে পড়ে। যদিও এই মাছ সমুদ্রের তবে এটি ডিম পাড়ে নদীতে গিয়ে। বর্ষাকালে বাঙালির পাতে ইলিশ না থাকলে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। ইলিশ এখান থেকে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

 

ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখে
বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। ইনস্টিটিউট অব হেলদি এজিংয়ে ৬৫ – ৯৪ বছর বয়সী ৮০০ ব্যক্তির উপর সমীক্ষা করা হয়েছে। সেটি বলছে, যারা নিয়ম করে সপ্তাহে দু-দিন মাছ খান, তাদের অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি তুলনামূলক অনেক কম। এমনকি এদের ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভুলে যাওয়ার অসুখ অন্যদের তুলনায় কম। নিয়ম করে মাছ খেলে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ সপ্তাহে ৩৫০-৪০০ গ্রাম মাছ খেতে পারলে অনেক অসুখকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে। ছোট থেকেই মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভালো হয়। ইলিশ হোক বা পোনা, পাতে রাখুন এক টুকরো মাছ।