ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮০৪

খালি পেটে চা পানের ৯ ক্ষতি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫৮ ২৭ মার্চ ২০২১  

অনেকেই সকালে ঘুম ভাঙা মাত্র গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক মারতে ভালোবাসেন। কিন্তু এমন অভ্যাস কেন, সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধরণা করা না গেলেও একটা বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হয়েছেন-এভাবে দিনের পর দিন খালি পেটে চা বা কফির মতো পানীয় পান করলে শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। শুধু তাই নয়, ধীরে ধীরে ব্রেন ফাংশনেরও অবনতি ঘটতে শুরু করে। তাই সারাদিন চা পান করুন ক্ষতি নেই, কিন্তু শরীরের কথা ভেবে সকাল সকাল, বিশেষত খালি পেটে এমন পানীয় খাওয়ার ভুল কাজটি করবেন না!


চায়ে উপস্থিত ক্যাফেইন শরীর প্রবেশ করা মাত্র এনার্জির ঘাটতি দূর হয় ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে নানাবিধ ক্ষতিও হয়ে থাকে। আর যদি খালি পেট থাকাকালীন ক্যাফেইনের প্রবেশ ঘটে, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে শরীরের মারাত্মক কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন ধরুন-


মাথা ঘোরা সমস্যা দেখা দেয়
চায়ে থাকে প্রচুর মাত্রায় ক্যাফেইন, যা খালি পেট থাকালীন শরীরে প্রবেশ করলে দেহের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে তার প্রভাবে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে যাওয়া বা বমি পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান!


দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়ে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সকাল সকাল খালি পেটে চা পান করলে মস্তিষ্কের ভেতরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে শরীর ভাঙতে দেরি লাগে না!


ধীরে ধীরে দাঁত দুর্বল হয়
দাঁত না মেজেই চা বা কফি খেলে মুখ গহ্বরের ভেতরে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দাঁতের ওপরের আবরণ বা এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে একসময়ে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় আর আটকানো যায় না। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে, এমন অভ্যাসের কারণে জিনজিভাইটিসসহ একাধিক গাম ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই দাঁতকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে দয়া করে বেড টি পান বন্ধ করুন।


শরীরে ক্ষতিকর অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি
রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়ার পর থেকেই হাজারো ব্যাকটেরিয়া মুখ গহ্বরে জমতে শুরু করে। সেই কারণে সকালে উঠে মুখে এত গন্ধ হয়। এমন পরিস্থিতিতে দাঁত না মেজেই যদি চা বা কফি পান করা হয়, তাহলে এসব ব্যাকটেরিয়া খাদ্যনালি হয়ে এসে পৌঁছায় পাকস্থলিতে। ফলে সেখানে অ্যাসিডের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায়, যাতে নানাবিধ সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই যারা গ্যাস-অম্বল বা বদহজমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের তো ভুলেও দাঁত না মেজে চা বা কফি পান করা উচিত নয়।


দেহে পানির ঘাটতি দেখা দেয়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চা খাওয়া মাত্র নানা কারণে শরীরে পানির মাত্রা কমতে শুরু করে। আর এমনটা পেট খালি থাকাকালীন হলে মহাবিপদ। এই কারণে ঘুম ভাঙা মাত্র চা পান করতে মানা করেন চিকিৎসকরা। আসলে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর কারণে এমনিতেই শরীর পানির ঘাটতি থাকে, এর ওপর চা পান করলে ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে।


পেটের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি
সকাল সকাল খালি পেটে চা বা কফি পানের অভ্যাস থাকলে পেটের ভেতরে, বিশেষত পাকস্থলিতে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা পাকস্থলি ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে পেপটিক আলসারের মতো রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।


দেহে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি 
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই এক গ্লাস পানি খাওয়া উচিত, যাতে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এমনটা না করে যদি কেউ এক পেয়লা চা পান করেন, তাহলে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমে না, উল্টো আরও বেড়ে যায়। ফলে শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর যেমন- লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।


হজম ক্ষমতার অবনতি ঘটে
খালি পেটে চা পান করা মাত্রা মুখ গহ্বরে উপস্থিত খারাপ ব্যাকটেরিয়া শরীরে নানা অংশে পৌঁছে যেতে শুরু করে। ফলে খারাপ জীবাণুর দাপটে পাকস্থলিতে উপস্থিত ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে হজম ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে অ্যাসিড-অ্যালকেলাইন ব্যালেন্স বিগড়ে গিয়ে নানাবিধ পেটের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে।


শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়
একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বেড টি পান করলে শরীরের পক্ষে ঠিকমতো আয়রন শোষণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, তৃতীয় বিশ্বের নারীদের প্রায় সিংহভাগই অ্যানিমিক হন। সেই কারণে চিকিৎসকরা পৃথিবীর এই প্রান্তের অধিবাসীদের বেড টি থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার পরামর্শ দেন।