ঢাকা, ০৬ অক্টোবর সোমবার, ২০২৫ || ২১ আশ্বিন ১৪৩২
good-food
২৭

গাজায় শান্তি ফেরাতে ট্রাম্পের ২০ দফায় যা আছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৪৯ ৫ অক্টোবর ২০২৫  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত হামাস। শুক্রবার হামাস জানায়, তাদের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে তারা অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।

 

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এই খবর জানায়। হোয়াইট হাউসে গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঙ্গে নিয়ে এই ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। নেতানিয়াহু এতে সতর্ক সমর্থন দিয়েছেন।

 

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত পরিকল্পনা

১. গাজাকে সম্পূর্ণভাবে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এর প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি না থাকে।

২. দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা গাজার মানুষের কল্যাণে অঞ্চলটির পুনর্গঠন করা হবে।

 

৩. এই প্রস্তাবে উভয়পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতি নেবে। এ সময়ে সব সামরিক অভিযান, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ বন্ধ থাকবে এবং পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধরেখা অপরিবর্তিত থাকবে।

৪. ইসরায়েল এই চুক্তি প্রকাশ্যে গ্রহণ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

 

৫. সব জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। প্রত্যেক ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষ ফেরতের বিনিময়ে ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।

৬. জিম্মি মুক্তির পর যেসব হামাস সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হবে তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। পাশাপাশি যে সব হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে চান, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

 

৭. চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই গাজায় পুরোদমে মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী অবকাঠামো, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল ও বেকারিগুলোর পুনর্গঠন এবং ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা খোলার কাজও চলবে।

৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণে উভয়পক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। গত ২৫ জানুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী, রাফা ক্রসিংয়ের উভয় মুখ আগের চুক্তির মতোই খোলা থাকবে।

 

৯. গাজা অস্থায়ী আপদকালীন ভাবে একটি টেকনোক্র্যাট ও অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অধীনে পরিচালিত হবে, যারা দৈনন্দিন জনসেবা দেখবে ও পৌরসভা পরিচালনা করবে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে গঠিত এই কমিটির ওপর নজরদারি করবে নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’। এর চেয়ারম্যান থাকবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আর সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ট্রাম্পের ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনা এবং সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবসহ বিভিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ না নেওয়া পর্যন্ত এই সংস্থা গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন ও কাঠামো দেখবে। পাশাপাশি এই সংস্থা আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আধুনিক ও কার্যকর প্রশাসন তৈরি করবে। যা গাজার জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।

 

১০. গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আধুনিক শহর গঠনে সাহায্যকারী অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হবে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও আশা সৃষ্টিই হবে এর লক্ষ্য।

১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নিয়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

 

১২. কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না এবং যারা যেতে চায় তারা স্বাধীনভাবে যেতে ও ফিরে আসতে পারবে। মানুষকে সেখানে থেকে যেতে উৎসাহিত করা হবে এবং তাদের জন্য একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

১৩. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার প্রশাসনে কোনোভাবেই ভূমিকা রাখবে না। সব সামরিক অবকাঠামো, টানেল ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সেখানে নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া চলবে। অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণ ও সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়ন করা হবে। নতুন গাজা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিতে বসবাসের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

 

১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চিত করবে যে হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে এবং নতুন গাজার প্রতিবেশী বা এর জনগণের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।

১৫. আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করবে। এটি দ্রুত গাজায় মোতায়েন হয়ে বাছাই করা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে। জর্ডান ও মিসরের অভিজ্ঞতাও এতে কাজে লাগানো হবে। এই বাহিনী দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে এবং ইসরায়েল-মিসরের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করবে।

 

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা ছাড়বে। নিরস্ত্রীকরণের অগ্রগতির ভিত্তিতে আইডিএফ দখলকৃত এলাকা আইএসএফের হাতে তুলে দেবে। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একটি সীমিত নিরাপত্তা বেষ্টনী বজায় থাকবে।

১৭. হামাস প্রস্তাবটি বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করলে, নির্ধারিত ত্রাণ কার্যক্রমসহ ওপরের সব পদক্ষেপ আইডিএফ থেকে আইএসএফের হাতে হস্তান্তরিত সন্ত্রাসমুক্ত এলাকায় বাস্তবায়িত হবে।

 

১৮. সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ চালু করা হবে, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা পরিবর্তন হয়। এর মাধ্যমে যে শান্তি পাওয়া যাবে তার সুফলের ওপর জোর দেওয়া হবে।

১৯. গাজা পুনর্গঠন এগিয়ে গেলে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, ফিলিস্তিনিদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পথ তৈরি হবে, যা ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।

২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের রাজনৈতিক দিগন্ত নির্ধারণে সংলাপ শুরু করবে।

 

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর