ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮০১

চঞ্চল ও শাওনের গান-বিতর্ক, তুরিন জানালেন নেপথ্য কথা (ভিডিও)

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০৭ ২৩ অক্টোবর ২০২০  

আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীতচর্চা করে আসছি। এখন পর্যন্ত আমরা ৫০টির মতো মৌলিক গান তৈরি করেছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কনসার্ট, টেলিভিশন লাইভ শো’তে আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে ১০/১২টি গান শ্রোতামহলে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কীর্তন ধারার মৌলিক গান ‘যুবতী রাধে’ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 

 

সম্প্রতি গানটি নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, এটি ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে সংগৃহীত। মূলত গানটি আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল এবং গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা। এটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। ফলে ২০১৮ সালে আমরা সেটির কপিরাইট সংগ্রহ করি। 

 

গত ২০ অক্টোবর ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় দুই তারকা মেহের আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে গানটি প্রকাশ করা হয়। যাতে আমাদের গানটিকে লোকজ গান হিসেবে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গানটি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়েছে। 

 

কিন্তু আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সেটি ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন পেজ থেকে প্রকাশ করে আমাদের মেধাস্বত্তকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। আমরা কপিরাইট কর্তৃপক্ষর কাছে সুষ্ঠু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। গণমাধ্যমের কাছে এ বিভ্রান্তি দূর করতে যথাযথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। 

 

সেই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের কাছে গানটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করছি।
‘যুবতী রাধে’ আমরা লেখা শুরু করি ২০০৬/২০০৭ সাল থেকে। তখন আমরা কয়েকজন একদিন সারারাত পালাগান দেখতে যাই। যেখানে রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন পালাগান হয়েছিল। যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং মন কাড়ে। এরপর রাধাকৃষ্ণ’র গল্পের উপর নির্ভর করে আমরা এ গান লেখা শুরু করি। 

 

রাধাকৃষ্ণের গল্প থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-ভাবধারা, শব্দচয়ন সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু কোনও হুবহু কথা সংগ্রহ করিনি। আমাদের এ গানের সঙ্গে কোথাও কোনও গানের অবিকল মিল নেই। গানের গীতিকার এবং সুরকার তারিকুল ইসলাম তপন। গানটি আমরা সম্পূর্ণ রূপে কীর্তন এবং লীলা কীর্তনের উপর নির্ভর করে সুর করেছি। কীর্তন ও লীলা কীর্তনের ভাবধারা গানটিতে আনার চেষ্টা করেছি।

 

‘যুবতী রাধে’ গানটি আমরা ২০১০ সালে ময়মনসিংহ ও শেরপুরে কনসার্টে পরিবেশন করি। ২০১২ সালে চ্যানেল নাইনে আমরা এটিসহ সাতটি গান আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশ করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন চ্যানেলে একইভাবে আমাদের আনরিলিজ ট্র্যাকগুলো গেয়েছি। 

 

২০১০ সালে সরলপুর ব্যান্ডের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৮ সালে আমরা সরলপুর ব্যান্ডের রেজিস্ট্রেশান করি। সেই সঙ্গে ১২টি মৌলিক গানের সনদ নিয়ে থাকি। যার মধ্যে একটি ‘যুবতী রাধে’। সরলপুর ব্যান্ডের এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি মৌলিক গান রয়েছে। যার মধ্যে ১০/১২টি গান আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও কনসার্টে আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশ করেছি। এখন পর্যন্ত সরলপুর ব্যান্ডের কোনও অ্যালবাম প্রকাশ করিনি। 

 

গানটি নিয়ে প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি করে সুমী মির্জা নামের কথিত শিল্পী। তিনি আমাদের ‘যুবতী রাধে’ সংগৃহীত বলে লেজার ভিশনের ব্যানারে ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কমেন্টে আমাদের গানটিকে পালা গান, মহুয়া গান, গোয়ালিনী গানসহ নানা নামে প্রচার করে। 

 

ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। প্রেক্ষিতে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে কপিরাইট অফিস থেকে আমাদের দু’পক্ষকে ডাকে। সুমী মির্জা গানটিকে ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া গান কিংবা গোয়ালিনি গান বলে দাবি করে। তবে কোনও প্রমাণ দেখাতে না পারায় দু’টি শুনানির মাধ্যমে গানটির সত্যতা প্রকাশ হয়। কপিরাইট অফিস থেকে আমদের পক্ষে রায় প্রদান করে। 

 

পরবর্তীতে সুমী আমাদের ‘যুবতী রাধে’ গানটির সুর হুবহু নকলের মাধ্যমে কথা কিছু পরিবর্তন করে এবং ‘বিনোদিনী রাই’ নামে আরেকটি গান প্রকাশ করে। এ গানের ব্যাপারে তাই বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে যে ‘বিনোদিনী রাই’ এবং ‘যুবতী রাধে’ গানটি এক। আসলে বিষয়টি তা নয়। 

 

সেই প্রেক্ষিতে সুমীর সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব কোর্টে এখনো চলমান। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি আমরাও দেশের বাইরে অবস্থান করায় মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। দেশে ফিরলেই পুনরায় কোর্টে মামলাটি নিয়ে অগ্রসর হবো। কলার টিউনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গানটি প্রকাশ করায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। সেজন্য কোর্টে আবেদন করবো।

 

স্বত্ব রক্ষায় আমাদের এ সংগ্রামের মধ্যেই গত ২০ অক্টোবর ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে ইউটিউব চ্যানেল থেকে পার্থর সংগীতায়োজনে শাওন এবং চঞ্চলের কন্ঠে গানটি প্রকাশ করা হয়। যাতে আমাদের গানটিকে লোকজ গান হিসেবে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

 

এরই মধ্যে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গানটি ইউটিউব সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আইপিডিসি কর্তৃপক্ষ গানটি ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন পেজ থেকে প্রকাশ করে আমাদের মেধাস্বত্বকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। আমরা কপিরাইট কর্তৃপক্ষর কাছে সুষ্ঠু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। গণমাধ্যমের কাছে এ বিভ্রান্তি দূর করতে যথাযথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। 

 

পাশাপাশি যারা গানটি প্রকাশ করছেন, তাদের গানটি যত দ্রুতসম্ভব সকল প্রকার ডিজিটাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ওদের পক্ষ থেকে ক্ষমামূলক বিবৃতি প্রত্যাশা করছি। অন্যথায় আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

 

সরলপুর ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ: মেইন ভোকাল-মারজিয়া আমিন তুরিন এবং তারিকুল ইসলাম তপন। লিড গিটারিস্ট-তারিকুল ইসলাম তপন, রিদম গিটারিস্ট-সুব্রত উল্লাস, বেজ গিটার-তপু, ড্রামস-সজীব, কিবোর্ড-প্রীতম, দোতারা ও ব্যাঞ্জো-শিশির, খমক-তুরিন।

 

বিনোদন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর