ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৯৫

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হলেন তারা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:২৫ ২১ জুলাই ২০১৯  

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হলেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে তিনজন মানসিক ভারসাম্যহীন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। রোববারের ঘটনাগুলো ঘটে - বগুড়া, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও কুমিল্লায়।

এছাড়া রাজশাহীতে চিপসের প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তিন ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।

কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে আইন হাতে তুলে না নিয়ে থানায় খবর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। 

বগুড়া শহরের শাখারিয়ার তিলেরপাড়ায় রোববার বিকেলে এবং সান্তাহারে সকালে ছেলেধরা সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। তাদের একজন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে আফজাল হোলেন (৪২)। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।

সদর থানার এসআই নুরে আলম জানান, বিকেলে অজ্ঞাত এক যুবক (২৭) শাখারিয়া ইউনিয়নের তিলেরপাড়ায় এক শিশুর সঙ্গে কথা বলে। এ সময় শিশুটি ভয়ে বাড়িতে গিয়ে জানায়, তাকে ছেলেধরা নিয়ে যেতে এসেছে। এ খবর প্রচার হলে গ্রামবাসীরা তাকে মারপিট করে। এ সময় ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল জলিল তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান। চেয়ারম্যানের ধারণা - ওই ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ। পুলিশ জানায়, তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান ও ইউপি সদস্য শফিক উদ্দিন জানান, সকাল ১০টার দিকে আফজাল হোসেন সান্তাহারের লোকো কলোনী এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। ছেলেধরা সন্দেহ হলে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ইউপি সদস্য জানান, আফজাল হোসেন মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি গত ১০ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন।

 

দিনাজপুর চিরিবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের নানিয়াটিকর গ্রামে রোববার দুপুরে ছেলেধরা সন্দেহে মিরু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। আটক মিরু মিয়া কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, মিরু মিয়া একটি পুরাতন চটের বস্তা নিয়ে নানিয়াটিকর গ্রামে ঘোরাঘুরি করে। এ সময় এলাকার লোকজন তাকে ছেলেধরা মনে করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাবিয়া বেগম পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়।

চিরিরবন্দর থানার পরিদর্শক (ওসি) হারেসুল ইসলাম বলেন, আটক মিরু মিয়া একজন আধাপাগল ব্যক্তি। ছেলেধরা সন্দেহে পাগলদের মারধর না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

টাঙ্গাইল কালিহাতী উপজেলার সয়া বাজারে ছেলেধরা সন্দেহে মিনু (৩২) নামে এক ভ্যানচালককে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা। মিনু ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ি গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে। কালিহাতী থানার এসআই এসএম ফারুকুল ইসলাম জানান, দুপুরে ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। খবর পেয়ে স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। তারা জানান, বন্যার পানিতে মাছ ধরার জন্য জাল কিনতে তিনি সয়া বাজারে এসেছিলেন। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে আইন হাতে না নিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। এদিকে একই দিন সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কান্দিলা বাজারে ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে মারধর করে গুরুত্ব আহত করেছে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

 

ছেলেধরা সন্দেহে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দুতিয়ার দিঘির পাড় এলাকায় এক নারীসহ তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। তাঁরা হলেন -  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বেজোড়া গ্রামের আবদুস সালাম (৭০), তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৪০) ও একই গ্রামের রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন (৩০)। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় নেয়া হয়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত তিনজন ব্যক্তি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সালাম ও রত্না দম্পতি রিকশা নিয়ে আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলি ইউনিয়নের দুতিয়ার দিঘি এলাকায় যান। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে স্কুলগামী এক শিশুকে কথা আছে বলে ডাক দেন। তখন আশপাশের বাসিন্দারা বিষয়টি টের পেয়ে চিত্কার করেন। এই সময়ে তাঁরা রিকশা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে জনতা তাঁদের ধরে পিটুনি দেন। পরে পুলিশে খবর দিয়ে তাদের সোপর্দ করা হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

 

রাজশাহী নগরীতে চিপসের প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে তিন ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। এ সময় তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে স্থানীয়রা। দুপুরে নগরীর বিনোদপুরে মিজানের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন - দেওয়ান বাছার (৪৫), ইউসুফ আলী (৩৮) ও প্রাইভেটকারের ড্রাইভার শামীম রেজা (১৯)। তারা তিনজন রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী।

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “রবিবার দুপুরের দিকে তিনজন ব্যক্তি ‘মামা চিপস’ এর প্রচারণার জন্য বিনোদপুরের মিজানের মোড় এলাকায় যান। সেখানে তারা শিশুদের বিনামূল্যে চিপস দিতে শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা ওই তিনজনকে ছেলেধরা বলে মারধর করে। খবর পেয়ে মতিহার থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। তারা জানান, তাদের প্রস্তুতকৃত মামা চিপসের প্রচারণার জন্য তারা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।”

অন্যদিকে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘সম্প্রতি পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে এই গুজবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে বেশ কয়েকজনের গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অথচ পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে এ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে একটি গুজব। এ ধরনের গুজবে কাউকে আতঙ্কিত না হতে এবং গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করার জন্য প্রচারণা শুরু হয়েছে। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ ধরনের বিষয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানাতে বলা হচ্ছে।’

এর আগে শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে রাজশাহীর তানোরে ছেলেধরা সন্দেহে দুই যুবককে গণপিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় গ্রামবাসী। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলমা ইউনিয়নের বহড়া থেকে ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে (১৫) গণপিটুনি দিয়ে র‌্যাবের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী। এছাড়া শনিবার দুপুরে উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রাম থেকে মনোয়ারুল নামে আরেক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে জানা যায় সে ছিঁচকে চোর। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শনিবার সকালে গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক প্রতিবন্ধী নারীকে পুলিশে সোপর্দ করে মহল্লাবাসী। তার ছেলে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত। পরে ছেলের কাছে তাকে পৌঁছে দেয়া হয়।