ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৭৫

মাংকিপক্সের উপসর্গ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৫৭ ২৫ জুলাই ২০২২  

গোটা বিশ্বে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার মানুষের শরীরে মাংকিপক্স ধরা পড়েছে। এতে এসময়ে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এসব জানিয়েছে। 

 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মাংকিপক্সে আক্রান্ত অন্যতম নাম ব্রাজিলের নাগরিক থিয়াগো। তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর, ক্লান্তি, কাঁপুনি ও ঘা উপসর্গ দেখা গেছে। কিন্তু তার যৌনাঙ্গ ও আশেপাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও জ্বালাপোড়া করে। 

 

তিনি বলেন, আমার যৌনাঙ্গের ত্বকে কমপক্ষে ৯টি জায়গায় ঘা তৈরি হয়। এর ফলে ব্যথা করতো এবং প্রচুর চুলকানি হতো। পুরো জায়গাটা ফুলে ওঠেছিল। কখনো কখনো মনে হতো ওখানে আগুন ধরে গেছে।

 

স্মলপক্স পরিবারের একটি ভাইরাস মাংকিপক্স সংক্রমণের জন্য দায়ী। তবে এটি অতটা মারাত্মক নয়। আক্রান্ত প্রাণী বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়ালের মাধ্যমে এ ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু মানুষ থেকে মানুষের শরীরে এর সংক্রমণ তেমন দেখা যায় না। তবে কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তার দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে।

 

ফেটে যাওয়া চামড়া, চোখ ও মুখের পাশাপাশি শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুসফুস, শ্বাসনালীর মধ্য দিয়েও মানুষের দেহে তা প্রবেশ করে। কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা কাপড়, বিছানা ও তোয়ালে স্পর্শ করলে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

গত ১০ জুলাই থিয়াগোর দেহে উপসর্গগুলো দেখা দিতে শুরু করে। তিনি বলেন, প্রথমে আমার খুব ঠাণ্ডা লাগে। এরপর প্রচণ্ড জ্বর হয়। মাথাব্যথা হয় এবং খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, সারা শরীর যেন ভেঙে পড়ছে।

 

ব্রাজিলীয় নাগরিক বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমার হয়তো ঠাণ্ডা লেগেছে। অন্যথায় কোভিডেও আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু পরদিন গোসল করার সময় প্রথমবারের মতো পিঠে ও লিঙ্গে কিছু ক্ষত বা ঘা লক্ষ্য করি। এর পর পা, উরু, বাহু, পেট, বুক, মুখ এবং যৌনাঙ্গে এ ঘা ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো দেখতে ফুলে যাওয়া ফুসকুড়ির মতো ছিল। ভীষণ ব্যথা করতো।

 

উপসর্গ দেখা দেয়ার তিনদিন পর হাসপাতালে যান থিয়াগো। এর প্রায় সপ্তাহ-খানেক আগে এক বন্ধুর সংস্পর্শে গিয়েছিলেন তিনি। তার শরীরেও মাংকিপক্সের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

 

রক্ত পরীক্ষা করে মাংকিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন থিয়াগো। যৌনবাহিত সংক্রমণের পরীক্ষাও করান তিনি। কিন্তু সেগুলোর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

 

সাও পাওলোতে বসবাসকারী ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালে যেতে আমার কিছু সময় লেগেছিল। কারণ, তীব্র ব্যথার ফলে কাপড় পরা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়। এমনকি গাড়িতে বসে কোথাও যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর ফুলে যাওয়ার কারণে অবস্থার আরো অবনতি হয়।

 

হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তাররা প্রদাহ দূর করার জন্য থিয়াগোকে কিছু ওষুধ দেন। ব্যথা কমানোরও ওষুধ দেন। সঙ্গে কিছু মলমও দেন। ফলে তারা জ্বালাপোড়া কমে যায়।

 

তিনি বলেন, মলমটা কাজ করছিল। কিন্তু ৪ ঘণ্টা পর এটা আর কাজ করছিল না। ব্যথা ফিরে আসে।

 

থিয়াগো ও তার বন্ধু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্রাজিলের বাইরে কোথাও যাননি। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আমার বন্ধুকে ফোন করি। তার সঙ্গে আগের ক'দিন আমি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে গিয়েছিলাম। আমার এ রোগ ধরা পড়েছে তা প্রতিবেশীদেরও অবহিত করি।

 

ব্যথা ও চুলকানি ছাড়া হাসপাতালে কঠিন সময় পার করেন থিয়াগো। তিনি বলেন, ক্ষতস্থানগুলো কিভাবে পরিষ্কার করতে হবে সে বিষয়ে আমাকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কতদিন অসুস্থ থাকব এবং আমাকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে-এসব বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। সেগুলো জানার জন্য আমাকে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। আমার চিকিৎসক বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে হয়েছে।

 

থিয়াগো বলেন, মাংকিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ কোনো জায়গা ছিল না। এ রোগীরা হাসপাতালে ঢুকতে পারতেন এবং সারা হাসপাতালে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারতেন। আমার মনে হয়নি, ভাইরাসটির জন্য প্রস্তুত ছিলেন তারা।

 

তিনি বলেন, এসময় ডাক্তার ও নার্সদের কাছ থেকে অমার্জিত এবং অসম্মানজনক আচরণের শিকার হয়েছি। হাসপাতালের যেখানেই গিয়েছি, আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে; আমি এইচআইভি পজিটিভ কি না। আমার দেহে যৌনবাহিত কোনো রোগের সংক্রমণ ঘটেছে কি না। আমার এ ধরনের রোগ হয়েছে তা ভেবে আমি লজ্জা পেতাম। কারণ এ রোগের প্রকোপের ব্যাপারে সমকামী লোকদের কথাই বলা হচ্ছিল।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যৌন-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্লিনিকগুলোতে সেসব পুরুষের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে, যারা পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন।

 

তবে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এটিই সংক্রমণের একমাত্র কারণ নয়। কেউ যদি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যান, তাহলেও তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

 

ব্রিটেনে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে যাদের দেহে মাংকিপক্সের সংক্রমণ ঘটেছে। দেখা গেছে তাদের ‘একটি উল্লেখযোগ্য অংশ’ সমকামী ও উভকামী পুরুষ। এ কারণে সংস্থাটি তাদের এ ভাইরাসের উপসর্গের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।

 

মাংকিপক্স সাধারণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকাতে, আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে রেইনফরেস্ট এলাকায় দেখা যায়। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের দুটি প্রজাতি সম্পর্কে জানা যায়- পশ্চিম আফ্রিকান ও মধ্য আফ্রিকান।

 

এ-দুটো প্রজাতির মধ্যে মধ্য আফ্রিকান ধরনটি একটু মৃদু, যা এখন পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আফ্রিকার বাইরেও অস্বাভাবিক হারে প্রচুর সংখ্যক মানুষ মাংকিপক্সে আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা কখনও ওই অঞ্চলে ভ্রমণও করেননি। সে কারণে ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি এখন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

 

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, কেউ আশঙ্কা করে থাকেন আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তাহলে তিনি স্থানীয় স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে সরাসরি ক্লিনিকে যাওয়ার আগে তাদের ফোন কিংবা ই-মেইল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

এছাড়া সংস্থাটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের যৌন সম্পর্ক না করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, উপসর্গ থাকা অবস্থায় তারা যেন সেক্স পরিহার করেন এবং সংক্রমণের আট সপ্তাহ পরে সতর্কতা হিসেবে কনডম ব্যবহার করেন। ছবির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ভাইরাসের প্রভাব মৃদু। কখনও চিকেনপক্সের সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায়। এছাড়া সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি আপনাআপনিই দূর হয়ে যায়।

 

তবে কখনও কখনও মাংকিপক্সের প্রভাব মারাত্মকও হতে পারে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেসব মৃত্যুর কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে, সেগুলোর সবই হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোতে। সংক্রমণের পর এর প্রথম উপসর্গ দেখা দিতে সাধারণত পাঁচ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এসময়ের মধ্যে চুলকানি হতে পারে।

 

সাধারণত মুখ থেকে এটি শুরু হয় এবং পরে শরীরের অন্যান্য জায়গায়, বিশেষ করে হাত, পা ও পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে। মাংকিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে যে ধরনের চুলকানি হয়, সেটা খুবই বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। বিভিন্ন ধাপে এ চুলকানির ধরনে পরিবর্তন ঘটতে পারে।

 

এটা অনেকটা চিকেনপক্সের মতো। গুটি বা পাঁচড়া তৈরি হওয়ার আগে চুলকানি হবে এবং পরে ওই গুটি খসে পড়বে। সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিন পর মাংকিপক্সের সংক্রমণ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি সেরে ওঠেন।