ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১১৫৩

শক্তি বাড়িয়ে ওড়িশার পথে ফণী, বাংলাদেশে ঝরাবে বৃষ্টি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৪৭ ১ মে ২০১৯  

শক্তি বাড়িয়েছে ‘ফণী’। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় অগ্রসর হচ্ছে ভারতের ওড়িশার দিকে।

আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চেন্নাইয়ের প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গোপসাগরে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি প্রচণ্ড শক্তিশালী (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রুপ নিয়ে ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। স্থলভূমিতে ঢোকার সময় তার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার।

 

আবাহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে অতি ভারি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ফণী।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও শক্তিশালী হয়ে হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলেও এরই মধ্যে জানানো হয়।

 

ফণী আগামী শুক্রবার পুরির দক্ষিণে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ওড়িশায় আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে।

 

অবশ্য ধীর গতিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অতি প্রবল হয়ে ওঠা এ ঝড় গতিপথ বদল করলে বদলে যেতে পারে উপকূল অতিক্রম করার সময় ও স্থান।

 

উপকূল পার হওয়ার পর ধীরে ধীরে কমে আসবে ফণীর দাপট। তবে তার আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝরাবে বৃষ্টি, এর আওতায় থাকছে বাংলাদেশও।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

সেসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করা এবং গভীর সাগরে না যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল ফণী।

 

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়েরর কবলে পড়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচাতে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।

 

পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বল্প বিরতিতে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এনসিএমসি) বৈঠক করেছে। ওড়িশার ৮৭৯টি স্থানে মানুষদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে।

 

যথাযথভাবে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড। বিভিন্ন স্থানে জাহাজ এবং হেলিকপ্টার নিয়ে আসা হয়েছে। ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) ৪১টি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হতে পারে রাজ্যটির উপকূলবর্তী অঞ্চল।

ভারতের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আসছে শনিবার থেকে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে বৃষ্টি শুরু হবে।

ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে কোথাও মাঝারি আর কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হবে। কোনো কোনো জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হতে পারে। রোববার বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঝড়ের গতিবেগ বাড়বে।

আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের দিঘা, মন্দারমণি, বকখালিতে সমুদ্র উপকূল উত্তাল হবে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা চিন্তা করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করছে।

 

ভারতের যে চারটি রাজ্যে ফণীর আঘাত পড়তে পারে সেগুলোর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে ত্রাণকার্যের জন্য তহবিল ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দূর্যোগ মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গে এরইমধ্যে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।

 

এদিকে, আসছে সোমবার লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় রাজ্যের সাতটি সংসদীয় আসনে ভোট নেয়া হবে। তার দু’দিন আগে এমন দূর্যোগের পূর্বাভাসে চিন্তিত প্রশাসন।

এরইমধ্যে মাছ ধরা ট্রলার কিংবা নৌকা নিয়ে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

 

আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, তীব্র গতিতে ছুটে চলা এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার পাশাপাশি তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর।

 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, সাধারণত আটলান্টিক মহাসাগরে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়কে হ্যারিকেন বলা হয়। এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ রূপকে ‘সুপার সাইক্লোনিক স্টর্মবলে। বর্তমানে সাগরে থাকা ঝড়টি হ্যারিকেনের মতোই তীব্রতা পাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে ওড়িশা উপকূলে পৌঁছলে এটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

 

এরপর এটি কোনো কারণে দিক পরিবর্তন করলে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরাও আক্রান্ত হতে পারে। দিক আরও পরিবর্তিত হলে বাংলাদেশের বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি জানতে ৩-৪ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি বাংলাদেশে ঝড় আঘাত না হানে, তাহলে স্থল নিম্নচাপের কারণে অনেক বৃষ্টিপাত পাব আমরা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়সংশ্লিষ্ট কারণে ২-৩ মে ভারতের মেঘালয় অববাহিকায় এবং ৬-৭ মে ভারতের মেঘালয়সহ বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকা, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।