ঢাকা, ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার, ২০২৫ || ১০ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
৪৪১

শীত পড়তেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, যেভাবে ফিট থাকবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৫১ ৬ ডিসেম্বর ২০২০  

শীতকাল মানেই উৎসবের মৌসুম। দেদার খাওয়া দাওয়া, পিকনিক আর এদিক ওদিক ঘুরতে যাওয়া। যদিও এই বছর পরিস্থিতি একদম আলাদা। প্রত্যেকের কাছেই অনুরোধ যতটা সম্ভব কম বাইরে বের হন, ভিড় এড়িয়ে চলুন। 

 

অনুষ্ঠান মানেই যে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হবে এমনটা নয়। সর্বত্রই বাড়ছে করোনার প্রকোপ। এছাড়া শীতে বাড়ে নানারকম অ্যালার্জির সমস্যা। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই নানারকম অসুস্থতা দেখা যায়। তাই শীতের শুরু আর শেষের সময়টা খুব সাবধানে থাকতে হয়।

 

শীতকালীন অসুস্থতা কিছুটা আমাদের নিজেদের প্রতিদিনের ত্রুটির জন্যই হয়। যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে, এসময় তা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের মধ্যে বাড়ে পেটের রোগ, ঠাণ্ডা লেগে সর্দি কাশি কিংবা পানি কম খাওয়ার জন্য ডিহাইড্রেশন। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, যথাযথ প্রটেকশন নেয়ার পরও সর্দি কাশি বা পেটের সমস্যা হচ্ছে। 

 

এর কারণ কি জানেন? প্রথমেই আসি শিশুদের কথায়। প্রতিবছর তাদের শীতকাল কাটে পিকনিক, চিড়িয়াখানা বা জাদুঘরে ঘুরতে গিয়ে। কিন্তু এবার সবকিছুই পাল্টে গেছে। সেই মার্চ থেকে তারা গৃহবন্দি, স্কুলে যাওয়ার আনন্দ থেকেও বঞ্চিত। এসময় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যাচ্ছে, তা হলো ওজন বৃদ্ধি বা ওভার ওয়েটের সমস্যা। 

 

এছাড়া সর্দি কাশি বা ডিহাইড্রেশন তো আছেই। খুব সহজেই আমরা ওদের এই সমস্যাগুলো থেকে বের করে আনতে পারি। প্রতিদিনের অভ্যাসে কয়েকটা বদল এনেই-

 

১. ওরা দীর্ঘ ৭-৮ মাস ধরে অনলাইনের বেড়াজালে আবদ্ধ। সারাদিন ফোন বা কম্পিউটারের সামনে বসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চোখ। তাই সারাদিনে ৪-৫ বার ঠাণ্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে নেয়া খুব দরকার। কিন্তু শীতকাল আসা মানেই পানি এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা যায়। সেই অভ্যাস সরাতে হবে।


২. বাচ্চাদের সবসময় পরিবারের সবার সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়ার কথা বলি আমরা। কিন্তু এই অনলাইন ক্লাসের ঘেরাটোপে তা প্রায় হয়ে ওঠে না। দরকারে নিজেদের খাবার সময় তাদের মতো করে পাল্টে নিন। চেষ্টা করুন ওদের অফ টাইমে সবাই একসঙ্গে বসে খেতে।

 

৩. শীতকালে এত সবজি থাকা সত্ত্বেও ওদের সেটা খাওয়া হয়ে ওঠে না। বাচ্চারা সাধারণত তরকারি আকারে সবজি খেতে চায় না। এখনতো আবার অনলাইন ক্লাস তাদের খাবার সময়টাও বেঁধে দিয়েছে। তাই চেষ্টা করুন এমন কিছু খাবার দিতে যাতে শীতের সব সবজি তাতে থাকে। আবার ওদের কাছে গ্রহণযোগ্যও হয়। 

 

করে দিতে পারেন সব সবজি দিয়ে সুজি বা ডালিয়ার পরিজ অথবা সবজি ও ডিম দিয়ে প্যানকেক। দুপুরে খিচুড়িও চলতে পারে। সালাদ ওরা এমনিতে খেতে চায় না। করে দিতে পারেন ডিম, স্প্রাউট সহযোগে রেনবো সালাদ। তাতে লেটুসপাতা, ধনেপাতা, গাজর সবকিছুই যোগ করতে পারেন।

 

8. স্কুল বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জায়গা। শীতকাল এমনিতেই আলস্য আনে। তাই এসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নিয়ম করে ওদের যোগাসন ও কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করান। আপনারা নিজেও যোগ দিন তাদের সঙ্গে, উৎসাহ বাড়বে এতে ওদের। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করান। সকালের দূষণমুক্ত বাতাস শরীরের জন্য আদর্শ। প্রতিদিন এই অভ্যাস করান ওদের।

 

৫. ঠাণ্ডার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তারা পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। কিছু সময় এর মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি খেতে হবে এই নিয়ম করে দিন। একটা পানির বোতল দিয়ে রাখতে পারেন ওদের কাছে।

 

৬. অনেক সময় দেখা যায়, প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরা সত্ত্বেও ওরা সর্দি কাশিতে ভুগছে। এর কারণ অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত গরম জামা পরা হতেই পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গরম জামা পরলে ভেতরে ঘাম বসেও সর্দি হতে পারে। এটা আমরা ভুলে যাই অনেক ক্ষেত্রেই।

 

৭. শীতকালে বাচ্চাদের গোসলের প্রতি অনীহা দেখা যায় অনেক সময়ই। পানিতে কিছু সুগন্ধ যুক্ত তেল বা বাথ সল্ট মিশিয়ে দিতে পারেন। যা ওদের আকর্ষণ করবে। 

বাচ্চাদের পর এবার তাদের দাদু-দিদাদের কথা। এই বয়সে এসে তারাও  বাচ্চাদের মতো বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন।


১.সারাবছরের মতোই শীতকালেও তারা মর্নিং ওয়াকে বের হন। এই বছর এতদিন বন্ধ থাকার পর পার্কগুলো খুলছে আস্তে আস্তে। খুব সতর্ক থাকতে হবে তারা যেন ভুলেও কোনো ভিড়ে না যান। যেমন-পার্কেই মর্নিং ওয়াকের শেষে সবাই মিলে একসঙ্গে গল্প বা দল বেঁধে ফেরা, সতর্ক ভাবে বারণ করুন তাদের।


২. অনেক সময় দেখা যায়, আপনি বাড়িতে অনেক নিয়ম মানা সত্ত্বেও কোনোভাবে তাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। মর্নিং ওয়াক থেকে ফেরার সময় পাড়ার দোকানের কড়াইশুটির কচুরি, জিলেপি বা ফুলকপির সিঙ্গারা এর জন্য দায়ী নয়তো? নজর রাখুন তাতে।


৩. শীতকালে কম পানি খাওয়াও তাদের হজমের গোলমাল সৃষ্টি করে। নজর দিতে হবে সেদিকেও।


৪. প্রতিদিন তাদের ব্যায়ামের তালিকায় সূর্য তাপ যেন অবশ্যই থাকে। এছাড়া যোগাসন ও ব্যায়ামের প্রত্যহ অভ্যাস ভালো রাখবে তাদের।


৫. ওদের খাদ্য তালিকায় রাখুন কোনো একটা মৌসুমি ফল। বাড়ির সবাই মিলে কোনও একটা সময় ফল খান। সঙ্গে বাচ্চাদেরও রাখুন। এতে সবারই খাওয়ায় উৎসাহ বাড়বে।

 

৬ তুলসীপাতা গোলমরিচ লবঙ্গ তেজপাতা মধু ও লেবু সহযোগে বানিয়ে নিতে পারেন ভেষজ "কাড়া" যা শিশু ও বয়স্ক সবার জন্যই উপকারী। এই করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে বাড়ির সকল সদস্য মিলে সকালে খান কাড়া। ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা গলা খুসখুস করলে একবারের জায়গায় অনায়াসে দুবার খাওয়া যেতে পারে।


আগের সংখ্যায় বলেছিলাম শীতকালে কি কি খাবেন, সেই নিয়মগুলোর সঙ্গে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললেই পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকতেই পারবে।

 

তথ্য: রাখী চট্টোপাধ্যায় (ভারত), ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও ডায়াবেটিস এডুকেটর