ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৫ || ৭ পৌষ ১৪৩২
good-food

পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ, যেভাবে ভোট দেবেন প্রবাসীরা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৪৯ ২১ ডিসেম্বর ২০২৫  

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনকারী প্রবাসী ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শনি ও শুক্রবার সন্ধ্যায় মোট ১০ দেশের ৪১ হাজার ৫৪৩ জন প্রবাসী ভোটারের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের বিষয়ে আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই) প্রকল্পের ‘টিম লিডার’ সালীম আহমাদ খান।

তিনি বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু হয়েছে।”

শুক্রবার তিনটি দেশে ও শনিবার সাতটি দেশে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়।

সালীম বলেন, “আগামী ২১ জানুয়ারি বুধবার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবে ইসি। প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হলে অ্যাপ-এর মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইট থেকে ভোটাররা অবগত হবেন। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপ-এ লগইন করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশিকাতে প্রদত্ত পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক চিহ্ন কিংবা ক্রস চিহ্ন দেবেন।”

তিনি বলেন, “প্রবাসীদের কেউ যদি (আগে থেকে প্রার্থীর বিষয় নিশ্চিত হয়ে) প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোট দেন সেক্ষেত্রে তার ভোট বাতিল হবে না। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন প্রবাসীরা।”

কোন কোন দেশে গেল পোস্টাল ব্যালট?

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ৮৯২, যুক্তরাজ্যে ৫৭৩ ও মালয়েশিয়ায় ৬ হাজার ২৪৬ পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় সাত দেশে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এই সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আট হাজার ৪৮০, চীনে ৬৮১, কুয়েতে এক হাজার ৩১০, কাতারে দুই হাজার ৭৩৭, সৌদি আরবে সাত হাজার ৩৪৩, জাপানে পাঁচ হাজার ৬০০ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সাত হাজার ৬৮১।

এ দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৬১০ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীরাও ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করছেন।

পোস্টাল ব্যালট যেভাবে প্রবাসীরা পাবেন 

ইসির পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধিত সব ভোটারের কাছে পর্যায়ক্রমে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত ভোটাররা প্রদত্ত ঠিকানায় নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো পোস্টাল ব্যালটসহ খাম পাবেন। খাম পাওয়ার পরপরই ভোটাররা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপে লগইন করে খামের ওপর প্রদত্ত কিউআর কোডটি স্ক্যান করবেন। এতে তিনি যে ব্যালট পেপারটি হাতে পেয়েছেন তা সিস্টেমে শনাক্ত হবে।

ভোটাররা নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া বহির্গামী খামে (ফরম-৯) একটি পোস্টাল ব্যালট সম্বলিত খামের (ফরম-১০ ক) মধ্যে পোস্টাল ব্যালট পেপার (ফরম-৭), একপাশে ভোট দেওয়ার নির্দেশাবলি (ফরম-১১) ও অপর পাশে একটি ঘোষণাপত্র (ফরম-৮) সম্বলিত একটি পৃথক কাগজ এবং একটি ফেরত খাম (ফরম-১০) পাবেন যেখানে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত থাকবে। ভোটারদেরকে পাঠানো পোস্টাল প্যাকেজের বিবরণ সংযুক্তি-৩ এ সন্নিবেশিত থাকবে।

পোস্টাল ভোট দেওয়া যাবে যেভাবে

ইসির পরিপত্রে বলা হয়েছে, পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ায় পাঠানো ব্যালট পেপারে সব প্রতীক মুদ্রিত থাকবে যার প্রতিটি প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘর রয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের আগে ভোটাররা নির্দেশনাপত্র পড়ে ঘোষণাপত্রে যথাযথভাবে ব্যালট পেপারের ক্রমিক নম্বর, ভোটারের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে প্রদত্ত স্থানে স্বাক্ষর করবেন।

নিরক্ষর-অক্ষম ব্যক্তি অন্য একজন বৈধ ভোটারের সাহায্যে ফরম-৮ এর সংশ্লিষ্ট অংশ পূরণ করে সত্যায়ন করে স্বাক্ষর করবেন। এই ঘোষণাপত্র অথবা সত্যায়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ছাড়া ব্যালট পেপার বৈধ হিসাবে গণ্য হবে না।

প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হলে অ্যাপের মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইট থেকে ভোটাররা অবগত হবেন। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপে লগইন করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশিকাতে প্রদত্ত পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে (ফরম-৭) মুদ্রিত প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক চিহ্ন কিংবা ক্রস চিহ্ন দেবেন। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপে ভোটদান পদ্ধতির ভিডিও টিউটোরিয়াল বা ডিজিটাল কন্টেন্ট থাকবে।

পোস্টাল ব্যালট ফেরত পাঠাতে হবে যেভাবে

পোস্টাল ব্যালটে ভোটার ভোট চিহ্নিত করার পর শুধুমাত্র ব্যালট পেপার ছোট খামে (ফরম-১০ক) রেখে খামটি বন্ধ করবেন, অতঃপর ওই ব্যালট পেপার সম্বলিত খামটি এবং স্বাক্ষরিত ঘোষণপত্রটি রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত খামে (ফরম-১০) প্রবেশ করিয়ে তা বন্ধ করে খামটি ডাকযোগে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নেবেন।

উভয় খামই সেলফ এডহেসিভযুক্ত থাকবে ফলে সেলফ এডহেসিভ অংশের উপরিভাগের টেপ খুলে নিলেই খাম বন্ধ হবে। এছাড়া ওই খাম পাঠানোর জন্য কোনো ডাক মাশুল দিতে হবে না। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত থাকবে। পোস্টাল ভোট গণনা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালট পেপারগুলোই কেবল গণনার আওতায় আসবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পোস্টাল ব্যালট ভোটারের কাছে পাঠানোর পর থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত আসা পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াটির বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যালটের অবস্থান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ভোটাররা নিজ নিজ মোবাইল থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে নিজ ব্যালটের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

ফেরত খাম সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার

ইসির পরিপত্রে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের খামগুলো পাওয়া পর তার ওপর প্রদত্ত ‘ছজ কোড’ স্ক্যান করার মাধ্যমে প্রাপ্ত রেকর্ড রাখবেন, যা ফরম-১২ আকারে পোস্টাল ব্যালট বিতরণ ও প্রাপ্তি তালিকা হিসাবে সফটওয়্যার থেকে জেনারেট হবে। সফটওয়্যার থেকে জেনারেট করা এই ফরমে রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষর নেবেন।

পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা

পাস্টাল ব্যালট পেপার গণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি গণনা কক্ষ প্রস্তুত করা হবে বলে ইসির পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

পোস্টাল ভোট গণনার সময় প্রার্থী বা নির্বাচনি এজেন্ট বা প্রার্থীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষকেরা অন্যান্য কেন্দ্রের ন্যায় একই নীতিমালা অনুসরণে উপস্থিত থাকতে পারবেন।

রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারে লগইন করার পর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের সামগ্রিক চিত্র দেখতে বা জানতে পারবেন।