ঢাকা, ২৫ অক্টোবর শনিবার, ২০২৫ || ১০ কার্তিক ১৪৩২
good-food

আফগানিস্তান থেকে নারী সেজে পালিয়েছিলেন বিন লাদেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৫৪ ২৫ অক্টোবর ২০২৫  

আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানের সময় আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড় থেকে নারীর বেশে পাকিস্তানে পালিয়েছিলেন। এমনই বিস্ময়কর দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু। তিনি সম্প্রতি ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান।

 

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ে আল–কায়েদা নেতা বিন লাদেনসহ সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। কিরিয়াকু, যিনি ১৫ বছর সিআইএতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রধান ছিলেন, সেই সময়কার ঘটনাপ্রবাহ নিয়েই মুখ খুলেছেন।

 

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের দোভাষী আসলে আল–কায়েদার সদস্য ছিলেন, যা তারা তখন জানতেন না। দোভাষী পরিচয় গোপন করে মার্কিন সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।

 

কিরিয়াকুর ভাষায়, “প্রথমে বলতে হয়, ওই সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র ঘটনা ঘটার পর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, আগ বাড়িয়ে কিছু করেনি। আফগানিস্তানে বোমা হামলা শুরু করার আগে আমরা এক মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেছি। আমরা সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিতে চেয়েছি, আবেগের বশে নয়। ওই অঞ্চলে অবস্থান নেওয়ার জন্য আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এক মাস সময় নিয়েছিলাম।”

 

তিনি আরও বলেন, “এরপর আমরা আল–কায়েদার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকা মূলত দক্ষিণ ও পূর্ব আফগানিস্তানের পশতু অঞ্চলগুলোতে হামলা শুরু করি। ২০০১ সালের অক্টোবর নাগাদ আমাদের ধারণা হয়েছিল, আমরা তোরা বোরা পাহাড়ে ওসামা বিন লাদেন ও তার নেতৃত্বগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করে ফেলেছি।”

 

কিরিয়াকুর বর্ণনা অনুযায়ী, তারা তখনও জানতেন না যে সেন্ট্রাল কমান্ডের দোভাষী মূলত আল–কায়েদার অনুপ্রবেশকারী। তিনি মার্কিন বাহিনীর ভেতরে থেকেই লাদেনদের সহায়তা করছিলেন। “আমরা ভেবেছিলাম, বিন লাদেনকে আমরা কোণঠাসা করতে পেরেছি। তাকে পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসতে বলেছিলাম,” বলেন কিরিয়াকু।

 

এরপর আসে নাটকীয় মোড়।  “আল–কায়েদা নেতা দোভাষীর মাধ্যমে অনুরোধ করলেন, ‘আপনারা কি আমাদের ভোর পর্যন্ত সময় দিতে পারেন? আমরা আগে নারী ও শিশুদের সরিয়ে দেব, তারপর নিচে নেমে আত্মসমর্পণ করব।’ 

 

দোভাষী তখন জেনারেল ফ্র্যাঙ্কসকে (সেন্ট্রাল কমান্ডের তৎকালীন কমান্ডার) রাজি করিয়ে ফেলেন। কিন্তু ভোর হতেই দেখা গেল, কেউ নেই। বিন লাদেন নারীর বেশে অন্ধকারের মধ্যে একটি পিকআপ ট্রাকের পেছনে চড়ে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন।”

 

কিরিয়াকু জানান, “ভোরের আলো ফোটার পর তোরা বোরা পাহাড়ে আত্মসমর্পণ করার মতো কেউই ছিল না। সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর আমাদের অভিযান গড়িয়ে যায় পাকিস্তান পর্যন্ত।”

 

৯/১১-এর ওই হামলার পর মার্কিন বাহিনী তোরা বোরা অঞ্চলে আল–কায়েদাকে কোণঠাসা করলেও শেষ পর্যন্ত বিন লাদেন ও তার অনুসারীরা পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। পরে ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে তার গোপন আস্তানা খুঁজে পায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১১ সালের ২ মে বিশেষ বাহিনী গোপন অভিযানে তাকে হত্যা করে।

 

এএনআইকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে জন কিরিয়াকু ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পুরো প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে। এ সময় তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে ‘কিনে নেওয়ার’ অভিযোগও তোলেন।

 

কিরিয়াকুর দাবি, “পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব ভালো। তখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায়। সত্যি কথা বলতে, যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের সঙ্গেই কাজ করতে পছন্দ করে। কারণ তখন আর জনগণের মতামত বা সংবাদমাধ্যম নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমরা মূলত মোশাররফকে কিনে নিয়েছিলাম। কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিতাম—সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক, সব ক্ষেত্রেই।”

 

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা নিয়মিত মোশাররফের সঙ্গে দেখা করতাম—সপ্তাহে কয়েকবারও হতো। তিনি সাধারণত আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে দিতেন। যদিও তারও কিছু ঘনিষ্ঠ লোক ছিল, যাদের তাকে সামলাতে হতো।”

 

সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা আরও বলেন, “মোশাররফকে তার সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখতে হতো। আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তখন আল–কায়েদা নয়, ভারত নিয়েই বেশি ভাবত। ফলে সেনাবাহিনী ও কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীকে খুশি রাখতে তাকে একধরনের সাংঘর্ষিক ভূমিকা পালন করতে হতো।”

 

এক প্রশ্নের জবাবে কিরিয়াকু বলেন, “আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) মনোযোগ ছিল আল–কায়েদা ও আফগানিস্তানের দিকে। ভারতের উদ্বেগ নিয়ে আমরা ভাবিনি।”

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর