ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর শুক্রবার, ২০২৫ || ৫ পৌষ ১৪৩২
good-food

`৭১-এর পর বাংলাদেশে ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে’ ভারত

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১৬ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫  

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ- এমন মন্তব্য করেছে ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি (পররাষ্ট্র বিষয়ক)।

এনডিটিভিতে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর–এর নেতৃত্বাধীন কমিটি সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতি হয়তো ‘পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যে’ নেমে যাবে না, তবে একে সামলাতে ভারতের জন্য অত্যন্ত সতর্ক ও সংবেদনশীল কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।

কমিটি সরকারকে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে এবং বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি ‘মূল কারণ’ তুলে ধরেছে- ইসলামপন্থি উগ্র শক্তির উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জটি ছিল অস্তিত্বগত- মানবিক সংকট ও একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু বর্তমান চ্যালেঞ্জ আরও গভীর- এটি প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা, রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে গিয়ে সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দেয়।”

কমিটি সতর্ক করে আরও বলেছে, “এই মুহূর্তে ভারত যদি নিজস্ব কৌশল পুনর্নির্ধারণে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের মাধ্যমে নয়, বরং গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার মাধ্যমে ঢাকায় তার কৌশলগত অবস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।”

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের পুনঃসমন্বয় এবং চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে- বিশেষ করে অবকাঠামো, বন্দর উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে।

এ প্রসঙ্গে কমিটি উল্লেখ করেছে, মংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি এবং পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি- যা ৮টি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রাখে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের হাতে রয়েছে মাত্র ২টি সাবমেরিন।

কমিটির মতে, চীন শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই নয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে- এমনকি জামায়াতে ইসলামী–র সঙ্গেও। প্রতিবেদনে বলা হয়, দলটির প্রতিনিধিরা চীন সফরও করেছেন।

কমিটি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যেন সামরিক ঘাঁটি বা কৌশলগত অবস্থান গড়ে তুলতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি; উন্নয়ন, সংযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারে ঢাকাকে তুলনামূলক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ভারতের এগিয়ে আসা।

ইসলামপন্থিদের উত্থান ও নির্বাচন

ইসলামপন্থিদের বাড়তে থাকা প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একসময় নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামী–র নির্বাচনি নিবন্ধন পুনর্বহাল করা হয়েছে, যার ফলে দলটি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে কমিটির মন্তব্য, “আওয়ামী লীগের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলবে।”

বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হলেও, ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে আসা বক্তব্যগুলোর জবাবে নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কমিটি জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং ভারতের বিরুদ্ধে বিশেষ করে উত্তর–পূর্বাঞ্চল লক্ষ্য করে উন্মুক্ত ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য বেড়েছে।

একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ক্ষতি করে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ভারতীয় মিশন ঘিরে উত্তেজনা

চলতি সপ্তাহে ঢাকাসহ তিনটি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। ‘জুলাই ঐক্য’ ব্যানারে একদল উগ্র ইসলামপন্থি ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভ মিছিল করে, যেখানে অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবিসহ একাধিক দাবি তোলা হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)–র এক নেতা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন যে, ঢাকা দিল্লিবিরোধী শক্তিকে আশ্রয় দেবে এবং ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’- অর্থাৎ উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করবে।

কমিটির মতে, এসব ঘটনাপ্রবাহ শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভারসাম্যের জন্যও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এ পরিস্থিতিতে ভারতের নীতিগত অবস্থান দ্রুত, বাস্তবভিত্তিক ও সুপরিকল্পিতভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।