ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৬৩১

এটি একটি বইগ্রাম

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:১৬ ৩ মার্চ ২০২২  

সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ‘বইঘর’, জানেন কি ‘বইগ্রামে’র কথা? ভারতের কেরালার পেরুমকুলম গ্রামের ডাকনাম ‘বইগ্রাম’। কীভাবে ‘বইগ্রাম’ হয়ে উঠল পেরুমকুলম? সে অনেক কাল আগের কথা, সে ছিল ঘোর কালো দিন। দিনটা ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি। উগ্রহিন্দুত্ববাদী নাথুরম গডসের গুলিতে প্রাণ হারালেন মহাত্মা গান্ধী। আচমকা শোকসংবাদে বিষাদগ্রস্ত গোটা ভারত। 

 

তীব্র মন খারাপ কেরালার ছোট্ট গ্রাম পেরুমকুলমেরও। কিন্তু কেবল মন খারাপ করে বসে থাকলেন না এই গ্রামের যুবকরা। ঠিক করলেন পালটা কিছু করতে হবে। এমন কাজ, যাতে করে মহান দেশনায়ককে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও করা যাবে, এইসঙ্গে উপকৃত হবে সমাজ ও সভ্যতা৷

 

অতএব, পেরুমকুলমের বাসিন্দা কৃষ্ণা পিল্লাই নামের এক যুবক ও আরও কয়েকজন মিলে বেশ কিছু বই কিনে ফেললেন। গ্রামবাসীদের থেকে সংগ্রহ করলেন আরও কিছু বই৷ সব মিলিয়ে শ-খানেক বই হল। সেই বই রাখা হল পিল্লাই পরিবারেরই একটি ঘরে৷ এভাবেই স্থাপিত হল পেরুমকুলমের প্রথম গ্রন্থাগার৷ গ্রন্থাগারের নাম দেওয়া হল ‘বাপুজি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’৷ কিন্তু একটি মাত্র গ্রন্থাগারের জন্য তো ‘বইগ্রাম’ হয়ে উঠতে পারে না কোনও গ্রাম। কীভাবে এল সেই স্বীকৃতি?

 

সময় তখন ২০১৬ সাল৷ মাঝে গড়িয়ে গেছে ৬৯ বছর। এতদিনে বাপুজি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার৷ বইয়ের প্রচার ও প্রসারে মিলছে বিবিধ অনুদান। আজকের প্রজন্ম ঠিক করল, গোটা পেরুমকুলমকেই এবার ‘গ্রন্থাগার’ করে গড়ে তোলা হবে৷ কীভাবে তা হবে?

 

গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোটো ছোটো ‘বইঘর’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হল৷ কাজও হল সেইমতো। আসলে রাস্তার পাশে গড়ে তোলা হল ছোট সাইজের বুকসেল্ফ৷ ওই বুকসেল্ফের দরজা খুলে বই নেওয়া যায়, ফের বন্ধ করে দিলেই ভেতরে নিরাপদ বই৷ কাঠের বাক্সের আকারের বুকসেল্ফটি যাতে করে বৃষ্টিতে ভিজে না যায়, যাতে করে বইয়ের ক্ষতি না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা হল উপযুক্ত আচ্ছাদনেরও৷

 

পেরুমকুলমের পথের পাশের একেকটি বইঘরে থাকে ৫০টি করে বই৷ পথ-গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়ার এক অভিনব নিয়মও রয়েছে৷ এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পয়সাও লাগে না ৷ পুরো ফ্রি। তবে বইঘরে নিজের একটি বই রাখলে তবেই সেখানে থেকে পাঠক সংগ্রহ করতে পারেন একটি বই।