ঢাকা, ০৪ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ১৯ কার্তিক ১৪৩২
good-food
৪৩০

করোনা থেকে অটিস্টিক শিশুদের নিরাপদ রাখবেন যেভাবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১৭ ১৮ আগস্ট ২০২০  

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনা বিরাজ করছে। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে। তাই মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে দূরে রাখতে অটিজম এবং বিশেষ শিশুদের বেশ গুরুত্ব দিতে হবে। অভিভাবকদের উচিত তাদের খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা, বিশ্রাম, শিক্ষা দীক্ষা—সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী চলতে অভ্যস্ত করানো।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান
এ ক্রান্তিকালে অটিজম ও বিশেষ শিশুদের প্রোটিন জাতীয় খাবার একটু বেশি দিতে হবে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার দিতে হবে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। এসময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। দিনে অন্তত তাদের তিন থেকে পাঁচবার গরম পানিতে লবণ দিয়ে লেবু চা পান করানো দরকার।
বাড়িতেই খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন

দীর্ঘদিন এক জায়গায় বসে থাকলে বিশেষ শিশুদের মধ্যে মানসিকভাবে এক ধরনের বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতা কাজ করে। তাই এসময় তাদের যথেষ্ট সময় দিন। সম্ভব হলে বাড়ির ছোট ছোট কাজে তাদের নিয়োজিত রাখুন। পাজল, বাবল ফুলানো, টুকি, পুতুল, চা বানানো ইত্যাদি খেলায় নিযুক্ত করুন। আপনারাও (মা-বাবা) অংশ নিয়ে এসব খেলাকে আরো আনন্দময় ও প্রাণবন্ত করতে পারেন।
বাইরে খেলতে নিয়ে যান
প্রায় তিন-চার মাস ধরে শিশুরা ঘরবন্দি। স্বভাবতই তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। সম্ভব হলে এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা মাঠে বা ছাদে বিকালে খেলাধুলা কিংবা হালকা শারীরিক শরীরচর্চার ব্যবস্থা করুন। এতে তাদের শরীর ও মনে অনেক পরিবর্তন আসবে। তা-ও সম্ভব না হলে দিনের বেলায় ঘরের বারান্দা বা জানালার পাশে বসতে উৎসাহিত করুন।
ঘুমের প্রতি খেয়াল রাখুন
এসব শিশুর ঘুমের প্রতি বিশেষ নজর রাখুন। মনে রাখবেন, রাতের স্বাভাবিক ঘুম দিনের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। এসময় তাদের মানসিক উদ্বিগ্নতা ও উৎকণ্ঠা বেশি বলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এজন্য রাত ৯-১০টার মধ্যে বিছানায় শোয়ানোর অভ্যাস করুন। এসময় মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস তাদের থেকে দূরে রাখুন। ঘুম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেলাটনিন জাতীয় এক-দুটি ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন।
আচরণের প্রতি লক্ষ্য করুন
এ দুঃসময়ে বিশেষ শিশুর আচরণের ওপর মনোযোগ দিন। তাদের ব্যবহারে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা গেলে, অতিমাত্রায় চঞ্চলতা দেখা দিলে (হাইপার অ্যাক্টিভিটি) বিশেষ গুরুত্ব দিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। খেয়াল রাখুন তারা যেন ডিভাইস নির্ভর না হয়ে পড়ে।
পড়াশোনা চালিয়ে যান
স্কুল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অটিজম শিশুদের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। তারা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকতে চায়। একই সঙ্গে রুটিন মেনে চলতে চায়। সেজন্য এসময় স্কুল সময়ে বাসায় শিশুর জন্য ১-২ ঘণ্টার সেশনের আয়োজন করুন। স্কুলের সঙ্গে মিল রেখে তাদের বয়স অনুযায়ী ছবি আঁকা, ছড়া, গল্প বলা, ধর্মীয় বিধি-বিধান, গান বা মিউজিক শেখান। এতে শিক্ষাদীক্ষায় আরো পারদর্শী হবে ওরা, সময়ও ভালো কাটবে। ওদের পড়াশোনা নিয়ে স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
করোনা উপসর্গের দিকে লক্ষ্য রাখুন
বিশেষ শিশুদের করোনা উপসর্গ অন্য শিশুদের মতোই। তাদেরও জ্বর, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে তারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি থাকে। কেননা এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। সর্বোপরি, সবসময় নিজেদের পরিষ্কার-পরিছন্ন বজায় রাখতে পারে না তারা। 
এজন্য হালকা ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে পারেন। জ্বর হলে শরীর স্পঞ্জ করতে পারেন। গলা ব্যথা হলে লবণ ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করাতে পারেন। পাশাপাশি গরম পানি, তুলসী পাতার রস পান করা যেতে পারে। জ্বর না কমলে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। তবে সেসব শিশুর হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ও অন্যান্য নির্ধারিত ওষুধ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।

সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন
তারা বাইরে গেলে মাস্ক পরাবেন। দিনে তিন-চারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়াবেন, কয়েকবার গরম পানি খাওয়াবেন, বাসার খেলনাগুলো সপ্তাহে দুইবার পরিষ্কার করবেন। এসময় বাড়িতে অতিথি আসতে না দেয়ায় ভালো। 
প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে কারো যাওয়া উচিত নয়। জরুরি হলে যান। সেক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে চলুন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মানুন। বাসায় ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত স্যানিটাইজ করুন। সাবান দিয়েও ধুয়ে ফেলতে পারেন। শেষ কথা গোসল ও কাপড় ধৌত করে প্রিয় শিশুকে স্পর্শ করুন।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর