ঢাকা, ২৬ অক্টোবর রোববার, ২০২৫ || ১০ কার্তিক ১৪৩২
good-food

তাকদির মানে কী? ইসলাম যা বলে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২১ ২৫ অক্টোবর ২০২৫  

মুসলমানদের ঈমানের ছয়টি মূল স্তম্ভের একটি হলো তাকদিরে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ “ভালো ও মন্দ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে।” (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৮)

 

“তাকদির” শব্দটি এসেছে আরবি কদর (قَدَر) থেকে, যার অর্থ পরিমাপ, নির্ধারণ বা ভাগ্যলিপি। ইসলামী পরিভাষায় তাকদির মানে হলো আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সব কিছুর পরিণতি ও পথনির্দেশ পূর্বেই নির্ধারণ করেছেন; কোনো কিছুই তাঁর জ্ঞান ও ইচ্ছার বাইরে ঘটে না।

 

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “আমি সব কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণে সৃষ্টি করেছি।” —(সূরা আল-কামার, আয়াত ৪৯)

অর্থাৎ মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার পেছনে আল্লাহর জ্ঞান, ইচ্ছা ও পরিকল্পনা রয়েছে।

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তাকদিরে বিশ্বাস না করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ৪৬৯৯)

 

তাকদিরের চারটি স্তর

ইসলামী চিন্তাবিদ ও আকিদা শাস্ত্রবিদেরা তাকদিরকে চারটি স্তরে ব্যাখ্যা করেছেন, যা একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত

 

ইলম বা  জ্ঞানের স্তর

আল্লাহ তায়ালা চিরকালীনভাবে সবকিছু জানেন—কি ঘটেছে, কি ঘটবে এবং কি কখনো ঘটবে না।

কুরআনে বলা হয়েছে

“তোমার প্রভু ভুলে যান না।” (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৬৪)

এই জ্ঞানের পরিধি এমন যে, কোনো ঘটনা আল্লাহর অজানা নয়।

 

কিতাবা লিখে রাখা

আল্লাহ তায়ালা সব কিছু লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন—

“আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সমস্ত সৃষ্টির তাকদির লিখে রেখেছেন।” —(সহিহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৫৩)

এটি ইসলামের “লিখিত ভাগ্য” ধারণার ভিত্তি।

 

মাশিয়াহ বা ইচ্ছার স্তর

যা কিছু ঘটে, তা আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কখনো ঘটে না।

“তোমরা কিছুই ইচ্ছা করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” —(সূরা তাকওির, আয়াত ২৯)

তবে এই ইচ্ছা মানুষকে বাধ্য করে না বরং মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাকে সীমিত স্বাধীনতা দিয়েছেন।

 

খালক বা সৃষ্টির স্তর

আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা। মানুষের কাজও তিনিই সৃষ্টি করেন, যদিও মানুষ সেই কাজের জন্য দায়ী।

“আল্লাহ তোমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন, তোমরা যা করো তাও।” —(সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ৯৬)

এভাবে তাকদিরের শেষ স্তরটি মানুষের কর্মকে আল্লাহর সৃষ্ট ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু তার দায়িত্বও স্থির রাখে।

 

তাকদিরে বিশ্বাসের ফল

১. শান্তি ও ধৈর্য: মানুষ বিপদে ধৈর্য ধরতে শেখে, কারণ সে জানে এটি আল্লাহর নির্ধারণ।

২. গর্বহীনতা: সাফল্যে মানুষ অহংকারে ভোগে না, কারণ তাকদিরে আল্লাহর অনুগ্রহের অংশ রয়েছে।

৩. কর্মপ্রবণতা: ইসলাম তাকদিরে বিশ্বাসকে কর্মবিমুখতার অজুহাত হতে দেয় না। নবী (সা.) বলেছেন-

 

“তুমি চেষ্টা কর, কারণ প্রত্যেককে তার জন্য নির্ধারিত কাজের দিকেই সহজ করা হয়েছে।”—(সহিহ বুখারি, হাদীস: ৬৬০৫)

তাকদিরে বিশ্বাস মানে কেবল ভাগ্যের ওপর নির্ভর নয়; বরং এটি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তায় আস্থা রাখা এবং একই সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করা। ইসলাম মানুষকে শেখায়, নিয়তি নির্ধারিত হলেও চেষ্টা করা ঈমানেরই অংশ।

 

“আল্লাহ কখনো কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।” —(সূরা রা’দ, আয়াত ১১)

তাই তাকদিরে বিশ্বাস মানে উদাসীন থাকা নয় বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে নিজের দায়িত্ব সর্বোচ্চভাবে পালন করা।