ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩১৮০

পানাম নগর: হারিয়ে যাওয়া এক শহর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৮ ৬ নভেম্বর ২০১৯  

যদি ইতিহাস-ঐতিহ্যের কাছাকাছি একটা দিন কাটাতে চান, তাহলে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসতে পারেন ‘হারানো নগরী’ হিসেবে পরিচিত পানাম নগর বা পানাম সিটি।  ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। এটি সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। 
পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত। বাংলার প্রাচীনতম শহর এটি। একসময় ধনী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস ছিল এখানে। ছিল মসলিনের জমজমাট ব্যবসা। প্রাচীন সেই নগরীর তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এখন আছে শুধু ঘুরে দেখার মতো ঐতিহাসিক পুরনো বাড়িগুলো।
ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী ছিল এটি। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর- প্রাচীন সোনারগাঁওয়ের এ তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পানাম নগরীর দুই ধারে ঔপনিবেশিক আমলের ৫২টি স্থাপনা রয়েছে। এর উত্তর দিকে ৩১টি এবং দক্ষিণ দিকে ২১টি স্থাপনা অবস্থিত। স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। পানাম নগরী নিখুঁত নকশার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন রয়েছ।
নগরীর পানি সরবরাহের জন্য দুই পাশে খাল এবং পুকুরের অবস্থান লক্ষ করা যায়। এখানে আবাসিক ভবন ছাড়াও উপাসনালয়, গোসলখানা, পান্থশালা, দরবার কক্ষ ইত্যাদি রয়েছে। পানাম নগরের আশপাশে আরো কিছু স্থাপনা আছে যেমন- ছোট সর্দার বাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুরবাড়ি, পানাম নগর সেতু ইত্যাদি। 
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। আবহমান গ্রামবাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ এটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
পরে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে এ জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন জয়নুল আবেদীন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুরনো সর্দারবাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। 

বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী এ সিদ্ধান্ত নেন। এখানে আরো রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কারুপল্লী ও একটি বিশাল লেক।
কিভাবে যাবেন 

ঢাকার গুলিস্তান থেকে স্বদেশ বা বোরাককের এসি পরিবহনে ওঠে নামবেন মোরগাপাড়া চৌরাস্তায়।  ভাড়া নিতে পারে ৪০, ৪৫ অথবা ৫০ টাকা। সময় লাগতে পারে ১ ঘণ্টা। তবে শুক্রবার ছাড়া অন্যদিন হলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরুতে হবে। মোরগাপাড়া চৌরাস্তায় নেমে দেখবেন অটো দাঁড়ানো আছে। সেখানে 
থেকে পানাম নগরীর ভাড়া ১০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া গুলিস্তান থেকে চিটাগাং রোডের বাসে করে চিটাগাং রোড যেতে পারেন। সেখান থেকে সিএনজিতে করে যেতে পারেন। আবার বাসে করেও যেতে পারেন। বাসে গেলে নামতে হবে পানাম নগর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিকশায় সোনারগাঁও জাদুঘর। 
টিকিটঃ পানাম সিটিতে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশকে জানো বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর