ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৬৭

বঙ্গবন্ধুর অবমাননা করছে কারা?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৮ ৫ ডিসেম্বর ২০২০  

"কোনোভাবেই কোনো ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না। মুজিববর্ষ আমরা যেভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম, করোনার কারণে সেভাবে পালন করতে পারছি না। মুজিববর্ষের শেষদিকে এসে নানাভাবে নানা প্রসঙ্গ টেনে এনে বিতর্ক তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে"। 

 

শনিবার (৫ ডিসেম্বর,২০২০) দুপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক বই বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আজকে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করার অপচেষ্টা হচ্ছে। একটি কুচক্রী মহল এ চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না। 

 

নানা ইস্যু তৈরি করে যারা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা ও সমাজে হানাহানি তৈরি করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে ড. হাছান বলেন, সাংবাদিকরা দেশের মানুষকে পথ দেখায়। আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে যেমন তাদের অন্যন্য ভূমিকা ছিল, ঠিক একইসঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামেও অনবদ্য ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিকদের লেখনি, পত্রিকার সংবাদ মানুষের মনন তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।

 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা সমাজকে পিছিয়ে দিতে চায়, যারা মধ্যযুগের সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের বিরুদ্ধেও আজ কলম নিয়ে সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে।

 

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। হাজার বছরের ইতিহাসে জাতিসত্ত্বা সৃষ্টি হওয়ার পর বাঙালি কখনো স্বাধীন ছিল না। সার্বিকভাবে কখনো নিজেদের শাসন করতে পারেনি। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে কিছু স্বাধীনচেতা রাজা ছিলেন, কিন্তু পুরো অঞ্চল নিয়ে গোটা স্বাধীন রাজ্য কখনো ছিল না।

 

মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার কথা বলি। তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন। তবে তিনি চলনে বলনে কথনে বাঙালি ছিলেন না। তার ও রাজ ভাষা ছিল ফার্সি, সৈন্যদের মধ্যে কিছু উর্দু চালু ছিল। হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই প্রথম স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাঙালিকে অতীতে বহুজন উদ্দীপ্ত করেছেন, স্বাধীনতার জন্য আহবান জানিয়েছেন, কিন্তু সফল হননি। যেখানে মানুষ নিজের প্রাণটাকে সবচে’ বেশি ভালোবাসে, স্বাধীনতার জন্য সেই প্রাণ বিসর্জন দিতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি শুধু বাঙালির ক্ষেত্রে নয়, পুরো বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এমন খুব কম নেতা আছেন, যারা মানুষকে এভাবে উদ্দীপ্ত করতে পেরেছেন নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে দেয়ার জন্য।

 

তিনি যোগ করেন, এজন্য বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ঠিক একইভাবে বিশ্ব ইতিহাসে সেরা নেতাদের মধ্যে একজন। শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের বাঙালিদের নেতা নন, পুরো বিশ্বের সব বাঙালির নেতা। তাদের জন্য উনি বাংলাদেশ নামের জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পাঠকের কোনো বিরোধ সৃষ্টি হয়, সেটি নিরসন করার লক্ষ্যেই জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছেন উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এক্ষেত্রে বিচারিক পর্ষদ হিসেবে প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমরা প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আইন সংশোধনের পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী সংসদ অধিবেশনে সেটি উপস্থাপনের জন্য। এটি পাস হলে কাউন্সিলের ক্ষমতা অনেক বাড়বে। এতে জনগণ এবং একই সঙ্গে সাংবাদিকরাও দ্বারস্থ হলে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারবেন। প্রেস কাউন্সিল জনগণ, সাংবাদিক এবং সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে।

 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষ আসলে ধীরে ধীরৈ বই থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। বই এখন খুব কম মানুষ পড়ে। আগে কিশোর, শিশু যুবক ও বৃদ্ধদের বই পড়ার অভ্যাস ছিল, সেটি এখনকার তরুণদের মাঝে আগের মতো আর নেই। সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে বুঁদ হয়ে থাকে, স্মার্টফোন নিয়ে বসে থাকে।

 

তিনি বলেন, বই থেকে অনেক দুরে চলে গেছে। বই পড়ার অভ্যাসটা আবারো ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। কারণ নতুন প্রজন্মকে যদি তাদের জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত করতে হয়, তাহলে তাদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, সদস্য ও বিএফইউজে’র যুগ্ন মহাসচিব এমএ মজিদ, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।