ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২০৪

যে কারণে আমেরিকার পরিস্থিতি সবচে’ ভয়াবহ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৪৪ ৩ এপ্রিল ২০২০  

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জন্ম নিয়েছিল  চীনের উহানে। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। চীনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও করোনা সারা বিশ্বে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইউরোপের কয়েকটি দেশে।

তবে সবশেষ ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে দেছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৬ হাজার ৯৫ জন। সামাজিক দূরত্ব না মানা ও সরকারের অবহেলার কারণে দেশটিতে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সাময়িকী টাইম।


যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ও ৫০টি অঙ্গরাজ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে বিশ্ববিখ্যাত এই ম্যাগাজিনটি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে লাখ প্রতি লোকের ভেতর কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা দেখানো হয়েছে।

 

টাইম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং স্থানীয়দের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ফেডারেল সরকারগুলোর করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতিতে ধীরগতি এবং অবহেলার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যে করোনায় সংক্রমণের চিত্র একেক রকম। এর কারণ হিসেবে টাইম জানিয়েছে, যেসব অঙ্গরাজ্য শুরুতেই এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে সেসব অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণ কম হয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মোট লোকের ওপর ভিত্তি করে এবং এক লক্ষ লোকেরমধ্যে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন তার তথ্য তুলে ধরেছে টাইম।

 

সেখানে দেখা যাচ্ছে, আলাবামায় প্রতি এক লাখে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮৯ জন।

 

আলাস্কায় এক লাখে ১৬ জন এবং মোট আক্রান্ত ১১৪ জন, অ্যারিজোনায় এক লাখে ১৬ এবং মোট আক্রান্ত ১১৫৭ জন, আরকানসাসে লাখ প্রতি ১৬ এবং মোট ৪৭৩ জন, ক্যালিফোর্নিয়ায় লাখ প্রতি ১৮ এবং মোট ৭১৩৮, কলোরাডোতে লাখ প্রতি ৪০ এবং মোট ২৩১১ জন, কানেক্টিকাটে লাখ প্রতি ৭২ এবং মোট ২৫৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

 

এছাড়া ফ্লোরিডায় লাখ প্রতি ২৫ এবং মোট ৫৪৭৩ জন, ইলিনয়ে লাখ প্রতি ৪০ এবং মোট ৫০৫৬ জন, ওয়াশিংটনে লাখ প্রতি ৬৫ এবং মোট ৪৯২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে মহামারি রূপ নিয়েছে করোনা। সেখানে লাখ প্রতি ৩৪৩ জন এবং মোট ৬৬ হাজার ৬৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এই হিসাব হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের। বাড়িতে থাকা এবং হাসপাতালে না আসা অনেক বাসিন্দাই করোনায় আক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সি। এই দুটি শহরেই মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম ঘনবসতিপূর্ণ শহর হওয়া সত্ত্বেও সেখানে করোনায় সংক্রমণের মাথাপিছু তথ্য একেবারেই কম। এক লাখে মাত্র ১৮ জন। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর চেয়ে অনেক আগে থেকেই সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে অনেক বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে।

 

লুসিয়ানায় এই সূচক অনেক ঊর্ধ্বমুখী। কারণ সেখানে লকডাউনের আগে এটি নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রেও অবহেলা ছিল।

 

এছাড়া শুরু থেকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এমনকি কী কী পদক্ষেপ গৃহিত হবে এবং কোন কোন অঙ্গরাজ্যে আগে কার্যকর হবে এসব ভাবতে ভাবতেই অনেক বেশি সময় চলে গিয়েছে।

 

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যকেই লকডাউন করা হয়েছে এবং বেশকিছু রাজ্যের বাসিন্দাদের ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইস্টার সানডে'র দিন, ১২ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। শুরুতে সমালোচিত হলেও এখন ঐ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হোক, তাই চাইছেন অনেকে।

 

এদিকে বৃহস্পতিবার জানা যায় যে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ৩৩ লাখ অ্যামেরিকান নাগরিক চাকরি হারিয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, "তাদের (অ্যামেরিকানদের) কাজে ফিরে যেতে হবে, আমাদের দেশকে কাজে ফিরতে হবে।"

 

"ফিরে যেতে হবে বললে অনেকেই এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। কাজে ফিরলেও তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলবেন।"

 

আগামী সপ্তাহে এই পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর