ঢাকা, ৩০ মে শুক্রবার, ২০২৫ || ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
good-food
৪৯

সজনে পাতার বিস্ময়কর যত উপকারিতা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১০ ২৮ মে ২০২৫  

সজনে পাতা আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ভেষজ গাছ। এ পাতার গুণের শেষ নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা এবং স্বাস্থ্য গবেষকরা এ সজনে পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি, ডিম থেকে প্রায় দুই গুণ

 

বেশি প্রোটিন ও দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চারগুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। আয়রনের দিক থেকে সজনে পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। 

 

শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে সজনে পাতা। আমাদের শরীরে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। প্রত্যেকটা কোষের ভেতরে লক্ষাধিক রিঅ্যাকশন হয় প্রত্যেক দিন। এগুলোকে আমরা বলি বর্জ্য পদার্থ, টক্সিন, ফ্রি রেডিক্যাল। 

 

সজনে পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়ে থাকে। যা ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তাছাড়া এতে রয়েছে বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা মানবদেহের জন্য উপকারি। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

 

সজনে পাতায় অ্যাসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে আটটি। ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ আছে। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, আয়রন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতগুলো নিউট্রিয়েন্ট থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা সজনে পাতাকে একটি অলৌকিক পাতা বলছেন।

 

সজনে পাতা কাঁচা অবস্থায় রান্না করে বা শুকনো করার পর গুঁড়া করে পাউডার হিসেবে এর চা খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত সজনে পাতার চা পান করলে শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি আসবে না কখনো। শরীরে এনার্জি জোগাতে এক কাপ সজনে পাতার চা-ই যথেষ্ট।

 

আর্থ্রাইটিস নিরাময়

স্বাস্থ্য গবেষকরা জানিয়েছেন, আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে সজনে পাতা দারুণ কার্যকর। যাদের হাঁটু ব্যথা আছে, তারা সজনে পাতার জুস খান। এই পাতার ভর্তা খান অথবা গুঁড়া খান। অন্তত ছয় মাস খান। তারপর আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

সজনে পাতার এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ সজনে পাতার চা। এই পাতার মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল নামের একটি যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই পাতার চা পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অক্সিডেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

রক্তস্বল্পতা দূর করে

সজনে পাতা রক্তস্বল্পতা দূর করে। শাকের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে এতে। কলা থেকে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা দারুণ উপযোগী। তবে ভালো উপকার পেতে বেশ কিছুদিন নিয়মিত সজনে পাতা, ডাঁটা ও ফুল খাওয়া দরকার।

 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

সজনে পাতার শাক বা কাঁচা পাতার রস মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারি। সজনে মানব শরীরে যেমন হরমোন বর্ধন করতে পারে, তেমনি পারে মায়েদের বুকের দুধ বাড়িয়ে দিতে। তাছাড়া সজনে পাতা শাক, ভর্তা বা পাকোড়া করে খেলে মুখের রুচি আসে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলাইটিস এবং জন্ডিসের সময় ও ব্যাপক কার্যকরি সজনে পাতা। এর ডাঁটা ও পাতা কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবেও কাজ করে।

 

হাই-ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণ

হাই ব্লাডপ্রেসার রোগীদের জন্য খাবার লবণ অর্থাৎ ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’ খুবই ক্ষতিকর। অপরদিকে ‘পটাশিয়াম লবণ’ কোনো ক্ষতি করে না। সজনে ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। তাই এতে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে

সজনের তেল এবং সজনে পাতার গুঁড়া ত্বকের বলিরেখা এবং ত্বকের ক্ষত দূর করে। এছাড়া সজনে আমাদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। ত্বকের কুঁচকানো ভাব, বলিরেখা এবং বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বল্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

কিডনি রাখে সুস্থ-সবল

কিডনি বা মূত্রাশয়ে পাথর জমার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয় সজনে পাতার রস। দেহের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে রাখে সুস্থ-সবল। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর সজনে পাতা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতেও সাহায্য করে।