ঢাকা, ১৪ জুন শনিবার, ২০২৫ || ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
good-food
৪৯

দরকার সচেতনতা ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

করোনা আবারও...

আনোয়ার হক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১৪ ১২ জুন ২০২৫  

COVID-Omicron XBB : COID19 থেকেও ভয়ঙ্কর সংক্রামক। তবে আতংক নয়, দরকার সচেতনতা। COVID-Omicron XBB অতীতের থেকে আলাদা। কারণ এটি মারাত্মক এবং শনাক্ত করা সহজ নয়। তাই সকলকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে। 

 

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে -  

১. নতুন COVID-Omicron XBB এর লক্ষণগুলো হলো:
i. কাশি নেই
ii. জ্বর নেই

 

বেশিরভাগ লক্ষণ:
iii. জয়েন্টে ব্যথা
iv. মাথাব্যথা
v.  গলা ব্যথা
vi.  পিঠে ব্যথা
vii.  নিউমোনিয়া
viii. ক্ষুধা হ্রাস

 

২. এছাড়া COVID-Omicron XBB ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত এবং এর মৃত্যুর হারও বেশি।


৩. অতি অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষণগুলো অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠবে এবং স্পষ্ট লক্ষণগুলির অনুপস্থিতিতেও পরিবর্তন ঘটবে।


৪. তাই আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

 

এই রূপটি তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে সরাসরি ফুসফুসের "জানালা" প্রভাবিত করে এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে।

 
৫.  COVID-Omicron XBB-তে সংক্রামিত অল্প সংখ্যক রোগীকে জ্বর-মুক্ত এবং ব্যথা-মুক্ত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। তবে এক্স-রে তে  হালকা নিউমোনিয়া দেখা যায়। 

 

এছাড়া  নাকের গহ্বরের মধ্য দিয়ে তুলার সোয়াব পরীক্ষা করে COVID-Omicron XBB নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল পরীক্ষার সময় মিথ্যা নেতিবাচক পরীক্ষার উদাহরণ বাড়ছে। তাই এই ভাইরাসটি খুবই ধূর্ত। এর ফলে ভাইরাসটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। সরাসরি মানুষের ফুসফুসকে সংক্রামিত করে, ভাইরাল নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে  এবং তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি ব্যাখ্যা করে যে কোন COVID-Omicron XBB এত সংক্রামক এবং মারাত্মক হয়ে উঠেছে।

 

৬.  এ পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলুন, খোলা জায়গায় এমনকি ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্কের উপযুক্ত স্তর পরুন এবং লক্ষণ ছাড়া কাশি বা হাঁচি না দিলে  ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিন।

 

এই  COVID-Omicron XBB "WAVE" প্রথম COVID-19 মহামারীর চেয়েও মারাত্মক। করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশে ভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

 

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।

 

সেখানে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে ওমিক্রন LF.7, XFG, JN.1 এবং NB.1.8.1 এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সকল স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।’

 

>>  দেশের স্থল/নৌ/বিমান বন্দরগুলোর আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেইলেনস জোরদার করতে হবে।


>>  দেশের প্রবেশপথগুলোতে (পয়েন্টস অব এন্ট্রি) থার্মাল স্কান্যার / ডিজিটাল হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে।


>>  চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগপ্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখতে হবে।

 

>>  ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচতেচনতা বৃদ্ধির জন্য রোগপ্রতিরোধ নির্দেশনার প্রচার করতে হবে।


>>  জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

সবার জন্য পরামর্শ: 


>>  বারবার প্রয়োজনমত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড)।


>>  নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।


>>  আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে।

 

>>  অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।


>>  হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

 

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়:


>> অসুস্থ হলে ঘরে থাকা, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।


>> রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।


>>  প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে (০১৪০১-১৯৬২৯৩) যোগাযোগ করতে হবে।

 

 

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনে ছড়ানো করোনাভাইরাস দুই মাস পর ছড়িয়েছিল বাংলাদেশেও। এরপর নানা উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে মাস্ক পরাসহ ধাপে ধাপে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় টানা তিন বছর। তবে এবারের ভ্যারিয়েন্ট ভিন্ন হওয়ায়  এখন থেকেই বাড়তি সতর্কতা এবং দরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পূর্ণাঙ্গ  প্রস্তুতি জরুরি। 

 

তথ্যসূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকারি নির্দেশনা, ইন্টারনেট 

 

লেখক: আনোয়ার হক

সংবাদকর্মী ও জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ