ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৯০

এরশাদের সফলতা ও বিতর্কের নানা দিক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৯ ১৪ জুলাই ২০১৯  

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বরারই একটি আলোচিত এবং বিতর্কিত নাম। নয় বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন যেসব কাজ করেছেন সেগুলোর প্রভাব নানাভাবে পড়েছে পরবর্তী সময়ে। ক্ষমতায় থাকার সময় তার কোন কাজগুলো আলোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

উপজেলা পদ্ধতি চালু

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। তার যুক্তি ছিল, সরকারি সুবিধাদি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্যই ব্যবস্থা নেয়া। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপজেলা পরিচালনার পদ্ধতি চালু করা হয়। যারা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন, তাদের অনেকের কাছেই এই পদ্ধতি প্রশংসা পেয়েছিল।

হাইকোর্টের বেঞ্চ বিকেন্দ্রীকরণ

হাইকোর্টের ছয়টি বেঞ্চ ঢাকার বাইরে স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এরশাদ। উচ্চ আদালতের বিচারের জন্য যাতে ঢাকায় আসতে না হয়, সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনজীবীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি এরশাদ সরকার।

ঔষধ নীতি প্রণয়ন

১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার দেশ একটি ঔষধ নীতি প্রণয়ন করে। এর ফলে ঔষধের দাম যেমন কমে আসে, তেমনি স্থানীয় কোম্পানিগুলো ঔষধ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করে। সেই নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে থেকে যিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন তিনি হলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঔষধ নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ভিটামিন ট্যাবলেট/ক্যাপসুল এবং এন্টাসিড বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ভেতরে উৎপাদন করতে পারবে না। এসব ঔষধ উৎপাদন করবে শুধু দেশীয় কোম্পানি।

এর ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হয়। বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা অন্য ঔষধ উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে। তাছাড়া সেই নীতির আওতায় সরকার সব ধরণের ঔষধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতো। ফলে ঔষধের দাম কমে আসে বলে উল্লেখ করেন ডা. চৌধুরী।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে যেসব কাজ করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। এর মাধ্যমে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব আরো বেড়ে যায়। বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল এবং সংগঠনকেও মদদ দিতে থাকেন এরশাদ। রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতে সংবিধানে তিনি রাষ্ট্রধর্মের ধারণা নিয়ে আসেন।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেহেতু মুসলিম সেজন্য তাদের খুশি করতে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কারণ নানা দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিতর্ক নিয়ে এরশাদ তখন জর্জরিত। যদিও তার প্রবর্তিত সেই রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি পরবর্তীকালে কোনও সরকার বাতিল করেনি।

সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার

ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য জেনারেল এরশাদ সামরিক গোয়েন্দাদের ব্যবহার করেন। অভিযোগ ছিল বেশ জোরালো। এছাড়া সামরিক বাহিনীর সহায়তা নিয়ে তিনি ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের তুষ্ট রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ ব্যাপকতা লাভ করে জেনারেল এরশাদের শাসনামলে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে উঠে তখন সেনাবাহিনী মি. এরশাদের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে। বিষয়টি তাকে জানিয়ে দেয়। এরপর তিনি পদত্যাগ করেন।

তখন ঢাকা সেনানিবাসে ব্রিগেডিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। মি. চৌধুরী ২০১৩ সালে মারা যান। ২০১০ সালে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে জেনারেল চৌধুরী বলেন, উনি (সেনাপ্রধান) প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন আপনার উচিত হবে বিষয়টির দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান করা। অথবা বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেয়া।

দুর্নীতির বিস্তার

ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জেনারেল এরশাদের দুর্নীতি নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে ব্রিটেনের দ্য অবজারভার পত্রিকা এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

মরিয়ম মমতাজ নামে এক নারী নিজেকে এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে দ্য অবজারভার পত্রিকাকে বলেন, জেনারেল এরশাদ আমেরিকা এবং সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।

এছাড়া বিভিন্ন সময় এসোসিয়েটেড প্রেস এবং ওয়াশিংটন পোস্টসহ নানা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এরশাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের শিরোনাম হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতির মামলায় কারাগারেও থাকতে হয়েছে তাকে।

নির্বাচনে কখনো হারেননি এরশাদ

জেনারেল এরশাদের শাসনামল নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, ক্ষমতাচ্যুত হবার পরেও তিনি কখনো নির্বাচনের পরাজিত হননি। এমনকি কারাগারে থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেন। যদিও নির্বাচনী এলাকাগুলো ছিল তার গ্রামের বাড়ি রংপুর এবং আশপাশের জেলায়।