ঢাকা, ১১ অক্টোবর শনিবার, ২০২৫ || ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
good-food
২৮৮

যেভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করল হংকং

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২৫ ১২ মার্চ ২০২০  

চীনের পর প্রথম যে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হংকং। চীনের সঙ্গে লাগোয়া এ স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ২৩ জানুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত হংকংয়ে মাত্র ১২২ জন এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। এর প্রকোপে মারা গেছেন মাত তিনজন।
হংকং কীভাবে নাগরিকদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ানো রোধ করল, সেই বিষয়ে কথা বলেছেন দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান। তিনি সাত বছর ধরে সেখানে রয়েছেন। তার জবানিতে প্রকাশ করা হলো সাক্ষাৎকারটি।
২৩ জানুয়ারি হংকংয়ে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। আমার মতে, ভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশটিকেকে সবচেয়ে বেশি যেটা সাহায্য করেছে তা হলো তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা। ২০০৩ সালের সার্স-এর সময় চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল হংকং। সেখানকার সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত সচেতনতা মেনে চলার দিক থেকে যথেষ্ট সচেতন।
আপনি দেখবেন, হংকংয়ে প্রায় শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক পরা। সবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলছে। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে ভিড়, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। ব্যক্তিগত সচেতনতা পালনের অংশ করছেন তারা। সাধারণ জ্বর সর্দি থাকলেও কর্মক্ষেত্রে আসছে না। সরকারিভাবেও যথেষ্ট সতর্কতা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে।
পাশাপাশি প্রতিটি ভবনের প্রবেশ পথে, সেটি রেস্টুরেন্ট, আবাসিক ভবন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা হোক না কেন, সেসব জায়গায় দেখা যায়; নিরাপত্তা রক্ষীরা সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন, মাস্ক না পরা কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
আবার আমার অফিসের বিল্ডিংয়ের প্রত্যেকটি গেইটের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা রয়েছে। যারা বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করবেন, তাদের সবারই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। আর প্রত্যেক ভবনের গেইটেই করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
হংকং কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ কবে থেকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে? 
হংকংয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যেসব সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই নেয়া হয়েছিল। চীনের উহানে যখন করোনার দেখা দিল, তখন থেকেই এখানকার সাধারণ মানুষ ও সরকার পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে। কারণ সার্স প্রাদুর্ভাবের সময় হংকংয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
অনেকটা বলা যেতে পারে, জনগণের সচেতনতাই বাধ্য করেছে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে। যেমন একটি উদাহরণ দেই, জানুয়ারির শুরুতে হংকংয়ের মেডিকেল সংশ্লিষ্ট পেশায় থাকা সবাই একসঙ্গে ধর্মঘটে যায়। তাদের দাবি ছিল, চীনের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ না করা হলে তারা কাজ করা বন্ধ করে দেবে।
ওই ধর্মঘটের ফলশ্রুতিতেই সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। হংকং ও চীনের মধ্যে মোট ১৪টি বর্ডার পয়েন্ট ছিল। যার মধ্যে ১০টি এখনো বন্ধ। আর বাকি যে চারটি বর্ডার পয়েন্ট রয়েছে, সেখান থেকে যারা হংকংয়ে প্রবেশ করে; তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হয়।

'কঠোর পদক্ষেপ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন'
চীন থেকে হংকংয়ে প্রবেশ করা প্রত্যেককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন আইনে পরিণত হয়েছে। কোয়ারেন্টিন যথাযথভাবে হচ্ছে কি-না তা মনিটর করছে দেশটির পুলিশ প্রশাসন।
এখানে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোম বা ঘরে কোয়ারেন্টিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ঘরে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তাদের নিয়মিত ফোন করে খোঁজখবর রাখছে প্রশাসন। শুরুর দিকে দু'জন কোয়ারেন্টিন ব্রেক করেছিলেন। তাদের খুঁজে বের করে আবারো কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
জানুয়ারির শুরু থেকে সব পাবলিক লাইব্রেরি, পাবলিক জিমনেসিয়াম বন্ধ রয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। সরকারি অফিসগুলোতে কাজের পরিধি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যেসব অফিসে সম্ভব সেসব অফিসে কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার কারণে হংকংয়ের জীবনযাত্রা কতটা পরিবর্তিত হয়েছে?
হংকংয়ে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটনের উদ্দেশ্যে মানুষ আসে। এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সবই ব্যহত হয়েছে এসব পদক্ষেপের ফলে। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেল ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
তবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হংকং সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হবে ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের। প্রত্যেককে ১০ হাজার হংকং ডলার দেয়া হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক লাখ টাকা করে।

হংকংয়ে বাংলাদেশিদের কী অবস্থা?
সরকারি হিসাবে হংকংয়ের প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন প্রায় দুই হাজারের মতো। আমরা প্রতিবছর বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করি। যেমন প্রতিবছরের মতো এবারও ২১শে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। যেটি বাতিল করা হয়েছে।
গত দুই তিন মাসে আমাদের সাধারণ আড্ডার হারও অনেক কমে গেছে। হংকংয়ে থাকা বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের, যারা অপেক্ষোকৃত কম আয় করে থাকেন, তাদের মাস্ক ও জরুরি ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তা দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর