ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৭৩

অঘটনের ‘অদ্ভূত’ দেশ মিয়ানমার

সেনা অভ্যুত্থান, সুচি আটক, এরপর কী?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১২ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

সেনা অভ্যুত্থান মিয়ানমারে। আটক হলেন অং সান সুচি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ এনএলডি-র শীর্ষ নেতারা।  দীর্ঘদিন নানান ঘটন-অঘটনের জন্ম দেয়া দেশটিতে নতুন করে সৃষ্টি হলো অনিশ্চয়তা। বিশ্বগণমাধ্যমে অনিবার্যভাবেই ফের শিরোনাম হলো ‘অদ্ভূত’ এ দেশটি। আর এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করলো সেনাবাহিনী। 

 

সোমবার ভোরে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর থেকেই ইয়াংগুনের সড়কগুলোতে সেনাবাহিনীর সমর্থকদের জাতীয় পতাকা হাতে আনন্দ করতেও দেখা যায়। কিন্তু পুনরায় গণতন্ত্রকে পদদলিত করে সেনাবাহিনীর এ ক্ষমতা দখলের গ্রহণযোগ্যতা দেশবাসীর কাছে আসলেই আছে কী, এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাঝে।

 

এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের ক্ষমতা দখলে কিছু মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ করলেও আপামর জনসাধারণের মনে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে।

 

ইয়াংগুনের বাসিন্দা ৩২ বছরের জিজাওয়াহ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমার খুব রাগ হচ্ছে। আমি আর সামরিক শাসন দেখতে চাই না।” জিজাওয়াহ একটি কোম্পানির কমার্শিয়াল অপারেটর। রয়টার্সের কাছে নিজের ক্ষোভের কথা জানালেও পুরো পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি তিনি। তার আশঙ্কা, এতে প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন। বলেন, ‘‘তারা যেটা করছেন সেটা স্বৈরতন্ত্র। আমরা সবাই জানি আমরা কাকে ভোট দিয়েছি।”

 

মূলত মিয়ানমারে গত ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘিরে দেশটির সরকারের সঙ্গে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত হয়। সর্বশেষ নির্বাচনে বড় জয় পায় অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যেখানে ৩২২টি আসনে জয়ই যথেষ্ট সেখানে তার দল জয় পেয়েছে ৩৪৬টি আসনে।

 

সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধীদল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা নতুন করে আবার নির্বাচন আয়োজনের দাবিও করে। নতুবা হুমকির সুরে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা দখলের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। যে হুমকি আজ বাস্তব।

 

সোমবার মিয়ানমারের নতুন সরকারের পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী সোমবার ভোরেই রাজধানী নিপিধোতে অভিযান চালিয়ে অং সান সুচি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ এনএলডি-র শীর্ষ নেতাদের আটক করে।

 

মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচি দেশটিতে দারুণ জনপ্রিয়। অর্ধ শতাব্দীর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশকে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি গৃহবন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তার হাত ধরেই ২০১৫ সালে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। যে কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে তিনি দারুণ সমাদৃত। যদিও দলটির শাসনামলে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে তার ভূমিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।

 

অনেকে তখন বলেছেন, সুচি সেনাবাহিনীকে খুশি রেখে দেশ পরিচালনা করতে চাইছেন। এখন সেই সেনাবাহিনীই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার দলকে হটিয়ে ক্ষমতার দখলে চলে গেছে।

 

থেইনি ওও নামে একজন বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী আমাদের একটি নির্বাচন হয়েছে। জনগণ যাকে পছন্দ করে তাকে ভোট দিয়েছে। আমাদের এখন আইনগত আর কোনও সুরক্ষা রইল না। আমরা খুবই অনিরাপদ বোধ করছি, আতঙ্ক, উদ্বেগের মধ্যে আছি।”

 

সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। টেলিভিশন ও রেডিওর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ প্রায়।

 

মিয়ানমারের শহরগুলোতে এটিএম বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। যদিও সেগুলোর বেশিরভাগই অচল হয়ে গেছে। দেশটির ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন আপাতত সব ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করেছে। ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় লোকজন হুড়োহুড়ি করে নিত্যপণ্য কিনছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়ানকিন জেলার ১৯ বছরের এক তরুণী বলেন, ‘‘আমি সকাল থেকে দুইবার বাজারে গেছি। আমি চাল এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্য কিনেছি। আমি জানি না কী ঘটছে। আমি একটু আত্ঙ্কিত হয়ে পড়েছি।”

 

ফেসবুকে এনএলডির ভেরিফাইড পেজ থেকে সেনাবাহিনীর হাতে আটক সুচির বরাত দিয়ে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়। যেখানে তিনি জনগণকে এ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সড়কে বিক্ষোভে নামার আহ্বান জানান। পোস্টে বলা হয়, আটক হওয়ার আগে সুচি এই বিবৃতি লিখে যান।

 

অভ্যুত্থানের ফলে জনগণ উদ্বিগ্ন হলেও এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রাস্তায় বিক্ষোভে নামার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। ছাত্র নেতা সি থু তুন বলেন, ‘‘আমাদের দেশ একটি পাখির মতো ছিল, যে মাত্র উড়তে শিখছিল। এখন সেনাবাহিনী আমাদের ডানা ভেঙে দিয়েছে।”

 

তবে শুধু সেনা অভুত্থানের বিপক্ষে নয় কেউ কেউ পক্ষেও কথা বলছেন। একজন জাতীয় ভিক্ষু ফেইসবুকে এক ভিডিও পোস্টে বলেন, ‘‘আজ জনগণের খুশির দিন।

 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, সকালে অং সান সুচি এবং অন্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করার পর তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বিতর্কিত একটি নির্বাচন নিয়ে বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার পর এই অভ্যুত্থান ঘটলো। গ্রেফতারের পর মিলিটারি টিভি নিশ্চিত করে যে, দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

 

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সোমবার সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং লাইংয়ের কাছে হস্তান্তর করছে।

 

মিয়ানমার বার্মা নামেও পরিচিত যা ২০১১ পর্যন্ত শাসন করেছে সামরিক বাহিনী। সুচি অনেক বছর ধরে গৃহবন্দী ছিলেন। সোমবার নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

 

রাজধানীতে সেনা টহল

রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গনের রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। প্রধান প্রধান শহরগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং কিছে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে, যে তারা কিছু কারিগরি সমস্যার মুখে পড়েছে এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।

 

বিবিসির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথান হেড জানান, যদিও গত সপ্তাহ সামরিক বাহিনী সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে তবুও এটাকে পুরো মাত্রায় সামরিক অভ্যুত্থান বলেই মনে হচ্ছে। এক দশকেরও বেশি সময় আগে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল।

 

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে, যার মাধ্যমে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারে তারা। কিন্তু সুচির মতো রাজনৈতিক নেতাকে আটক করার ঘটনা উস্কানিমূলক এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন পদক্ষেপ তীব্র বাঁধার মুখে পড়বে।

 

সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। এনএলডি মুখপাত্র মিও নয়েন্ট রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে জানায়, প্রেসিডেন্ট মিন্ট এবং অন্যান্য নেতাদের ভোরে আটক করা হয়। ''আমি জনগণকে বেপরোয়া কিছু না করার অনুরোধ করছি, আমি চাই তারা আইন মেনে চলবে,'' মিও নয়েন্ট রয়টার্সকে বলেন।

 

নির্বাচনে কী হয়েছিল?

গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩% আসন পায় যাকে সুচির বেসামরিক সরকারের প্রতি সর্বসাধারণের অনুমোদন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয়বার নির্বাচন ছিল মাত্র। তবে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং ইলেক্টোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

 

সম্প্রতি সামরিক বাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলার পর থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

 

জনপ্রিয়-সমালোচিত সুচি 

মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সুচি। তার যখন দুই বছর বয়স তখন তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র দুই বছর পর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল।

 

সুচিকে একসময় মানবাধিকারের বাতিঘর বলা হতো-যিনি একজন নীতিবান অধিকারকর্মী হিসেবে দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের শাসন ক্ষমতায় থাকা নির্দয় সামরিক জেনারেলদের চ্যালেঞ্জ করতে নিজের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়া হয় এবং তাকে "ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতার অনন্য উদাহরণ" হিসেবে সংশোধন করা হতো। তখনও তিনি গৃহবন্দীই ছিলেন।

 

১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অন্তত ১৫ বছর বন্দী জীবন কাটিয়েছেন মিস সু চি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি'র নেতৃত্ব দেন এবং যাতে বড় ধরণের জয় পান তিনি।

 

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। কারণ তার সন্তানেরা বাইরের দেশের নাগরিক। তবে ৭৫ বছর বয়সী সুচি একজন ডি ফ্যাক্টো নেতা হিসেবেই সুপরিচিত। কিন্তু মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তার নেতৃত্বকে দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি হওয়া আচরণ দিয়েই বর্ণনা করা হয়।

 

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে পুলিশ স্টেশনে প্রাণঘাতী হামলার পর রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তবে সুচির সাবেক আন্তর্জাতিক সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি ধর্ষণ, হত্যা এবং সম্ভাব্য গণহত্যা রুখতে কোন পদক্ষেপ নেননি এবং ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর নিন্দা কিংবা তাদের নৃশংসতার মাত্রাও স্বীকার করেননি।

 

প্রাথমিকভাবে অনেকেই তার পক্ষে যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করে বলেছেন যে, তিনি একজন বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ যিনি বহু-জাতি বিশ্বাসের সম্প্রদায়ভুক্ত একটি দেশ শাসন করছেন যার জটিল ইতিহাস রয়েছে। তবে ২০১৯ সালে হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের বিষয়ে তার নিজের স্বপক্ষে উপস্থাপিত যুক্তি মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর পর তার আন্তর্জাতিক সুনাম বলতে তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

 

দেশের ভেতরে "দ্য লেডি" নামে পরিচিত মিস সুচি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় যারা রোহিঙ্গাদের প্রতি তেমন সহানুভূতিশীল নয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যায় দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ তো নেননি, উল্টো সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপে সাফাই গেয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত নেত্রী। 

 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ বারবার অবগত করলে এ নিয়ে টালবাহানা করে এসেছে সুচি সরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে তিনি কোনো পদক্ষেপই নেননি। তার এক সময়ের বিদেশি সমর্থক বা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো অভিযোগ তোলে, তিনি ধর্ষণ, হত্যা এবং সম্ভাব্য গণহত্যা রুখতে কোনো পদক্ষেপ নেননি এবং ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর নিন্দা কিংবা তাদের নৃশংসতার মাত্রাও স্বীকার করেননি। তার দেশের সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

এমন বাস্তবতার মধ্যেই ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয়লাভ করে সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি- এনএলডি। অপরদিকে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সমর্থক রাজনৈতিক দল ইউএসডিপি (ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) ভরাডুবি হয়।

 

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নানা ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল দেশটির সেনাবাহিনী। গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুঞ্জনের ডালপালা মেলে, সেনাবাহিনী সুচির সঙ্গে দর-কষাকষি করছিল, জেনারেল মিন অং কে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে। কিন্তু সুচি সেই আপসে যাননি। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সেনা অভ্যুত্থান। সেনাবাহিনীর হাতে আটক সুচির ভ্যবিষ্যৎ কী? এ নিয়ে প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর