ঢাকা, ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
good-food
১২

আসছে শীত, এসির যত্ন না নিলে বিপদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:০৮ ১৪ অক্টোবর ২০২৫  

শীতকাল এলেই বেশিরভাগ বাড়িতে এসি বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কেউ ভাবেন, এখন তো ঠাণ্ডা পড়েছে এসি নিয়ে ভাবার কী আছে! কিন্তু ঠিক এই সময়েই যদি এসির যত্ন না নেওয়া হয়, গরমে চালু করার সময় দেখা যায় ঠাণ্ডা বাতাসের বদলে আসে গরম হাওয়া বা অদ্ভুত শব্দে বিরক্তি ধরায়।

আসলে শীতকালই হলো এসির যত্ন নেওয়ার সেরা সময়। শীতে সামান্য কিছু যত্ন নিলেই গ্রীষ্মে আপনার এসি থাকবে একদম ফিট, দেবে ঠাণ্ডা হাওয়া, কমাবে বিদ্যুৎ বিল, আর বাড়াবে এসির আয়ু।

 

চলুন দেখে নেওয়া যাক, শীতকালে এসিকে ভালো রাখার কিছু সহজ টিপস, যা মেনে চললে গরম পড়লেই ঠাণ্ডার স্বস্তি পাবেন নিঃচিন্তে।

 

নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার করুন

শীতকালে এসি ব্যবহার না হলেও বাতাসে ধুলোবালি জমে যায় ফিল্টারে। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে কুলিং কমে যায়, আর কম্প্রেসরের ওপর চাপ পড়ে। মাসে অন্তত একবার ফিল্টার খুলে নরম ব্রাশ বা ভেজা কাপড়ে মুছে ফেলুন। প্রয়োজনে হালকা ডিটারজেন্টও ব্যবহার করতে পারেন।

 

ইনডোর ইউনিট ঢেকে রাখুন

শীতের সময় ইনডোর ইউনিটে ধুলোবালি বা আর্দ্রতা জমলে ছত্রাক তৈরি হয়, যা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই এসি বন্ধ রাখার সময় একটি পরিষ্কার কাপড় বা কভার দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে ধুলো ঢোকার সুযোগ থাকবে না, মেশিনটিও থাকবে সুরক্ষিত।

 

আউটডোর ইউনিটে নজর দিন

অনেকেই শুধু ঘরের ইউনিট নিয়ে ভাবেন, কিন্তু বাইরের ইউনিটেই থাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—কম্প্রেসর। শীতকালে পাখা বা কয়েল অংশে শুকনো পাতা, ধুলো বা ময়লা জমে গেলে গরমে সমস্যা করে। তাই মাঝে মাঝে বাইরের ইউনিটটিও ঝেড়ে মুছে রাখুন, প্রয়োজনে টেকনিশিয়ানের সহায়তা নিন।

 

বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করুন

শীতকালে এসি বন্ধ থাকায় অনেক সময় প্লাগ পয়েন্টে মরিচা পড়ে বা সংযোগ ঢিলে হয়ে যায়। ফলে গরমে চালু করলে শর্টসার্কিট বা স্পার্কের ঝুঁকি থাকে। একবার ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে পুরো সংযোগটি পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।

 

রেফ্রিজারেন্ট লেভেল চেক করুন

গ্যাস কমে গেলে এসি যথাযথ ঠাণ্ডা দিতে পারে না। যদিও এটি নিজে বোঝা কঠিন, তবে শীতকালে সার্ভিসিংয়ের সময় টেকনিশিয়ানকে দিয়ে রেফ্রিজারেন্ট লেভেল মেপে নিতে পারেন। প্রয়োজনে গ্যাস রিচার্জ করে রাখলে গরমে ঝামেলা হবে না।

 

কয়েল ও ফিন পরিষ্কার রাখুন

ইভাপোরেটর কয়েল ও কনডেনসার ফিন ধুলায় ঢেকে গেলে এসির কর্মক্ষমতা কমে যায়। বাজারে সহজলভ্য কয়েল ক্লিনার ব্যবহার করে বা পেশাদার ক্লিনিং সার্ভিসের মাধ্যমে এটি পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারেন।

 

রিমোট ও সেটিং পরীক্ষা করুন

দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে রিমোটের ব্যাটারি নষ্ট হতে পারে। তাই ব্যাটারি খুলে রাখুন বা নতুন ব্যাটারি লাগান। পাশাপাশি রিমোটের সেটিং চেক করুন—তাপমাত্রা, ফ্যান স্পিড ও টাইমার মোড ঠিক আছে কি না।

 

সার্ভিসিংয়ে দেরি নয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বছরে অন্তত দুইবার শীতের শুরুতে ও গরমের আগে এসি সার্ভিসিং করানো উচিত। এতে যান্ত্রিক অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কি না বোঝা যায়, এবং ভবিষ্যতের বড় খরচও কমে।

 

হালকা চালু রাখুন মাঝে মাঝে

পুরো শীতকাল এসি বন্ধ না রেখে, মাসে একবার অন্তত ১৫-২০ মিনিট চালিয়ে নিন। এতে কম্প্রেসর ও মোটরের তেল সচল থাকে, এবং ফ্যান বা বেল্ট শক্ত হয়ে যায় না।

 

গন্ধ বা শব্দ উপেক্ষা করবেন না

শীতের পর এসি চালু করে যদি অদ্ভুত শব্দ বা বাজে গন্ধ পান, সেটি উপেক্ষা করবেন না। এটি হতে পারে ফাঙ্গাস, মোটর সমস্যা বা গ্যাস লিকের ইঙ্গিত। দ্রুত সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করুন।

 

অতিরিক্ত টিপস

  • এসির সামনে ভারী পর্দা বা আসবাব রাখবেন না।
  • ঘরের জানালা ও দরজা ঠিকমতো বন্ধ রাখলে ঠাণ্ডা বাতাস অপচয় হয় না।
  • এসির তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রিতে রাখলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় ও আয়ু বাড়ে।

 

শীতে এসি বন্ধ রাখলেই তার যত্ন বন্ধ হবে এমন ধারণা ভুল। শীতকালে একটু যত্ন নিলে গ্রীষ্মে এসি অনেক বেশি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য থাকবে। এই টিপসগুলো মেনে চলুন, এবং সময়মতো সার্ভিস করিয়ে নিন এসিই থাকবে “শীতেও সুস্থ”।

লাইফস্টাইল বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর